মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্যান্সার যখন বৃহদন্ত্রে

ক্যান্সার যখন বৃহদন্ত্রে

বশির সাহেব (আসল নাম, ছদ্মনাম নয়) পুরনো ঢাকার বাসিন্দা। একদিন চেম্বারে এলেন, বললেন ডাক্তার সাহেব পেটে মাঝে মধ্যে ব্যথা করে, আর শরীরটাও ভালো লাগে না। সমস্যা কি একটু ভালো করে দেখবেন? শারীরিক পরীক্ষা করে দেখলাম পেটের উপরিভাগে একটি চাকার মতো (Mass) মনে হয়। আমার কাছে সেটি কোলন এ টিউমারের মতো মনে হলো, Transverse Colon এ। বিলম্ব না করে তাকে বেরিয়াম এনেমা নামক একটি এক্স-রে করতে বললাম, যার মাধ্যমে সে টিউমারটি দেখা দিতে পারে। পরীক্ষা করার পর তাই পাওয়া গেল, পরবর্তীতে কোলোনোস্কোপি নামক পরীক্ষার সাহায্যে ক্যান্সার কনফার্ম হলো। রোগী তেমন সম্পন্ন না হওয়ায় অন্যান্য পরীক্ষা যেমন সিটিস্ক্যান করাতে রাজি হলেন না। যাই হোক এরপর বশির সাহেবের অপারেশন করা হলো।

Transverse Colon অর্থাৎ বৃহদন্ত্রের মাঝামাঝি স্থানে টিউমারটি মোটামুটি বড়ই, তবে সৌভাগ্যের কথা হচ্ছে চারপাশে ছড়ায়নি, যদিও T3 অর্থাৎ ক্যান্সার তৃতীয় স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল। অপারেশন ভালোভাবে সম্পন্ন করলাম। সব টিউমার কোষ বের করে আনতে পারলাম। অপারেশন-পরবর্তী সময়ে রোগী চমৎকারভাবে সেরে উঠলেন। এরপর বশির সাহেবকে বললাম কেমোথেরাপি নিতে। তিনি একটু ইঁতিউঁতি করলেন, কারণ অর্থনৈতিক। বলা হলো কেমোথেরাপি নিতে হবে, যেহেতু টিউমারটি বেশ বড় ছিল। যাই হোক শেষ পর্যন্ত একটি সরকারি হাসপাতালে তিনি একটি কেমোথেরাপি নিলেন। ঘটনাটি ১০ বছর আগের। বশির সাহেবের সঙ্গে এখনো প্রায় দেখা হয়। তিনি কিছু গঠনমূলক কাজও করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। তাকে দেখলে আমার ভালো লাগে। বশির সাহেবের মতো এরূপ অনেক রোগী আছেন যারা কোলন ক্যান্সার হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ভালো আছেন। এর কারণ হচ্ছে এরা সচেতন রোগী। যথাযথ চিকিৎসা আমরা করছি ঠিক, কিন্তু তার আগে এরা সামান্য সমস্যা দেখা দেওয়া মাত্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন এবং চিকিৎসক চিকিৎসা শুরু করতে পেরেছেন। কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়। আসলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে এ ক্যান্সারের পরিপূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব।

অধ্যাপক ডা. এস এম এ এরফান

কোলোরেক্টাল সার্জন, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর