বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
বিশ্ব কিডনি দিবস আজ

কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়

অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ

কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়

বিশ্ব কিডনি দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে এ দিনটি। এই বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘সবার জন্য সর্বত্র সুস্থ’ কিডনি, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা প্রদান করা। বিশ্বের সব জনগোষ্ঠীর প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন কিডনি রোগে (CKD) রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিডনি রোগের এই প্রকট অবস্থার জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব কিডনি দিবস উদ্যাপিত হয়ে থাকে। শুধু জনগণের সচেতনতা নয়, সেই সঙ্গে ডাক্তার, সেবিকা ও জনস্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কিডনি রোগ সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা ও সেই সঙ্গে প্রতিরোধ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা এ বিশ্ব কিডনি দিবস পালনের উদ্দেশ্য। International Society of Nephrology (ISN) & International Federation of Kidney Foundation (IFKF) এর যৌথ উদ্যোগে ও বিভিন্ন দেশের স্থানীয় কিডনি সংগঠনের মাধ্যমে এই বিশ্ব কিডনি দিবস পালন হয়ে থাকে। কিডনি রোগ মানব জাতির পঞ্চম মৃত্যুর কারণ এবং স্বাস্থ্য খাতের ২ থেকে ৩ শতাংশ বরাদ্দ এই কিডনি রোগের জন্য ব্যয় হয়ে থাকে। নিম্ন আয়ের দেশে শতকরা ৮০ ভাগ কিডনি রোগী কিডনি ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন থেকে বঞ্চিত। কিডনি রোগের উৎপত্তি ও তার ক্রমাগত কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া প্রায় ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় রোধ করা যেতে পারে। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য খাতে কিডনি রোগের ভয়াবহতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। কাজেই প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ শনাক্ত করা যাতে কিডনি রোগ না হতে পারে সেই উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রতিবছর কিডনি দিবস উদ্যাপন করা হয়। প্রতিরোধের জন্য তিনটি স্তরে কিডনি রোগ না হওয়ার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। প্রথম স্তরে প্রাথমিকভাবে কিডনি রোগের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর নজর দিতে হবে এবং কিডনি ও মূত্রনালি, মূত্রথলি ও প্রস্রাবের রাস্তার কাঠামোগত ত্রুটি চিকিৎসা করা এবং সর্বোপরি কিডনি ক্ষতিকারক কোনো ওষুধ ও পরিবেশের কোনো রাসায়নিক পদার্থ থেকে বিরত থাকতে হবে। দ্বিতীয় স্তর অর্থাৎ কিডনি রোগের প্রধান দুটি কারণ- ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। তৃতীয় স্তর অর্থাৎ যারা ধীরগতির কিডনি রোগের চিকিৎসায় আছেন এবং শতকরা ৬০ থেকে ৭০% কিডনি কাজ করছে না, তাদের ক্ষেত্রে কিডনি অকেজো রোগের জটিলতা বিশেষ করে হৃৎপিন্ড ও মস্তিষ্কের জটিলতা থেকে প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যবস্থার ফলে এসব রোগীর ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের সময় বিলম্ব হয়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার গুরুত্ব অত্যধিক। পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিশ্বের প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ধীরগতিতে কিডনি অকেজো রোগীরা কোনোদিন কিডনি কার্যক্ষমতা ফিরে পায় না বরং ধীরে ধীরে সময়ের ব্যবধানে কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং এক পর্যায়ে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন স্তরে পৌঁছায়। তখন ওষুধের মাধ্যমে রোগীকে বাঁচানো যায় না। কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য যদি সঠিক সময়ে কিডনি রোগের শনাক্ত করা ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। এই ক্ষেত্রে ওষুধের সঙ্গে জীবনযাত্রার অভ্যাস ও খাদ্যের পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে। বলা বাহুল্য কিডনি রোগের শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও সেবাদান বিশ্বের সব দেশে সমমানের নয়। স্বল্প উন্নয়ন দেশে এই সেবাদানের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। Sustainable Development Goals (SDGs) ও কিডনি রোগের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। বর্তমানে Non Communicable Diseases এর মধ্যে হার্ট ও মস্তিষ্কের রোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ অন্তর্ভুক্ত করা হলেও কিডনি রোগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অতএব কিডনি রোগকে আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিকভাবে সুনজর ও অত্যাবশ্যক জরুরি রোগ হিসেবে মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ কিডনি রোগ বিশ্বের একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। কিডনি রোগ শুধু হার্ট মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি বহন করে না, এটি শরীরে ইনফেকশন ও টিবি রোগের ঝুঁকি বহন করে। কাজেই SDGI Universal Health Coverage কিডনি রোগকে আন্তর্জাতিক পরিকল্পনায় অন্তর্র্ভুক্ত করণীয় ও কিডনি রোগের শনাক্তকরণ ও এ ব্যাপারে  জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

লেখক : প্রাক্তন পরিচালক, কিডনি বিভাগ,

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি

ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর