শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

নভেল করোনাভাইরাস ও হৃদরোগ

অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম ওয়ালিউল ইসলাম

নভেল করোনাভাইরাস ও হৃদরোগ

হৃদরোগ বাংলাদেশের সার্বিক মৃত্যুহারের অন্যতম কারণ। এমনিতেই এই শ্রেণির রোগী বহুমূত্র, উচ্চরক্তচাপসহ কিডনি ও নানাবিধ জটিল রোগে ভোগেন ও শারীরিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে অতি দ্রুত যে কোনো সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন। অন্যদিকে, ২০১৯-এনকোভি যা নভেল করোনাভাইরাস নামে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য বিস্তার করছে। এশিয়ার বিভিন্ন অংশ এবং এর বাইরেও পশ্চিমা বিশ্ব তথা ইউরোপ আমেরিকা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার রোগাক্রান্ত এবং প্রায় ৫ হাজার মৃত্যুবরণ করেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর হার তুলনামূলক বেশি হলেও মৃত্যুহার ততটা উদ্বেগজনক নয়। বয়স্ক তথা দীর্ঘদিন ধরে যারা বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা দ্রুত (শতকরা ৫০%) এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এর মধ্যে শতকরা ৮০% রোগী হয় জটিল হৃদরোগ বা মস্তিষ্কের রোগে ভুগে আসছেন। সতর্কতা অবলম্বন করে আপনি এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারেন। উপসর্গের মধ্যে অন্যান্য অসুস্থতার মতো জ্বর দিয়ে শুরু হয়ে যা কদিন থাকতে পারে, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা, শুষ্ক কাশি এবং ক্রমান্বয়ে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকার সঙ্গে মাংসপেশির বিশেষ করে বুকের মাংসের ব্যথা অনুভূত হওয়া ও মাথাব্যথাসহ লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে এই ভাইরাস। কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ মারাত্মক হয়। তবে, এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত শতকরা ২.৩% রোগী মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারেন। হৃদরোগী যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তা হলে সেক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি হার বেড়ে ১০%-এ উন্নীত হতে পারে। সম্প্রতি China সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মতে, ১৩৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর পরিসংখানে দেখা যায়, সার্বিক মৃত্যুহার ২.৩%, তন্মধ্যে পূর্ব থেকে বিভিন্ন রোগাক্রান্ত, বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপ ৬%, বহুমূত্র ৭.৩%, হৃদরোগ ১০.৫% ও বার্ধক্য (৮০ বয়স) ১৯.৬%, ফুসফুসের জটিলতা ১৯.৬%, অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন ১৬.৭% ও কিডনি রোগে ৩.৬% ভুগে আসছিলেন। কাজেই Covid19  নিয়ে বিচলিত না হয়ে, কান কথা বা গুজব ছড়িয়ে এর ব্যাপকতা যতটা নয়, তার চেয়ে অযাচিত প্রচার, মানুষের তথা সমাজের ব্যাপক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে পারে যা কিনা বিশ্বকে একটা ব্যাপক বৃহৎ আর্থিক অসচ্ছলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমাদের মধ্যে যারা হৃদরোগ বা ফুসফুস ও মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগে ভুগছেন বা আমাদের মুরব্বিরা কোনোভাবেই এই ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার না হন সেটা খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। বলা বাহুল্য, এসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। সংক্রমিত হলে বিশেষ করে হৃদরোগীদের মাইয়োকারডাইটিস ও পরবর্তীতে হার্ট বড় ও ফেইলিওর হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকতে পারে। তাই হাত সাবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে ধোয়া, হাত না ধুয়ে চোখ নাক মুখ স্পর্শ না করা, হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা, ঠান্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।

করোনাভাইরাসসহ অন্যান্য রোগের বিস্তার সীমিত পর্যায়ে রাখতে মেডিকেল মাস্ক সাহায্য করে। তবে এটার ব্যবহারই এককভাবে সংক্রমণ বন্ধ করতে যথেষ্ট নয়। আগে থেকে হৃদরোগ, বহুমূত্র ও রক্তচাপের নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি, অবশ্যই হাত ধোয়া এবং সম্ভাব্য সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা না করা এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করার সর্বোত্তম উপায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনূদিত করণিক মেনে চললে এর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যাবে। তাই এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।

লেখক : ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট  এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর