সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

গ্লুকোমা দৃষ্টির সিঁধ কাটা চোর

গ্লুকোমা দৃষ্টির সিঁধ কাটা চোর

সামগ্রিকভাবে অনিরাময়যোগ্য অন্ধত্বের প্রধানতম কারণ হচ্ছে চোখের গ্লুকোমা রোগ। 

চোখের চাপ : আমাদের চোখের ভিতরে সিলিয়ারি বডি নামক সূক্ষ্ম মাংসপেশি থেকে নিঃসরিত অ্যাকুয়াস হিউমার নামক জলীয় পদার্থ চোখে যে চাপ তৈরি করে তাকে ইন্ট্রা অকুলার প্রেসার বা চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বলে। এ জলীয় পদার্থটি ক্রমাগত চোখের ভিতরে প্রবাহিত ও সঞ্চালিত হয়ে আইরিশ ও কর্নিয়ার সংযোগ কোণে অবস্থিত ছাঁকনির সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে অবিরাম বেরিয়ে যায়, যা চোখে ১০ থেকে ২১ মিলিমিটার মার্কারি চাপ বজায় রাখে। এ অ্যাকুয়াস হিউমার উৎপাদন এবং নির্গমনের মধ্যে স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় থাকা সুস্থ চোখের জন্য অপরিহার্য।

গ্লুকোমা রোগ : আমাদের চোখ মস্তিষ্কের সঙ্গে অপটিক ¯œায়ু দ্বারা সংযুক্ত। চোখের সব তথ্য অপটিক ¯œায়ু দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছানোর পর বিশ্লেষিত হলে আমরা দেখতে পাই। অ্যাকুয়াস হিউমারের উৎপাদন ও নির্গমনের স্বাভাবিক ভারসাম্য ব্যাহত হলে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়তে থাকে। ফলে অপটিক ¯œায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দৃষ্টির পরিসীমা সংকুচিত হতে হতে একজন মানুষ একপর্যায়ে অন্ধত্ববরণ করে। এটিই গ্লুকোমা রোগ।

কাদের ঝুঁকি বেশি : যাদের বয়স ৩৫ এর উপরে। যাদের পারিবারে গ্লুকোমা রোগ আছে। যারা ডায়াবেটিস/উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভুগছেন। যারা অতিমাত্রায় মাইনাস/প্লাস পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করেন। যাদের চোখে আঘাতের ইতিহাস আছে। প্রকারভেদে গ্লুকোমা ধরনের: ১. উন্মুক্ত কোণ বিশিষ্ট গ্লুকোমা, ২. বদ্ধ কোণ বিশিষ্ট গ্লুকোমা।

১. উন্মুক্ত কোণ বিশিষ্ট গ্লুকোমা : এ ক্ষেত্রে চোখের সামনের প্রকোষ্ঠে অবস্থিত নেত্র স্বচ্ছ এবং আইরশের সংযোগস্থলের কোনের আকার স্বাভাবিক থাকে কিন্তু নির্গমন পথের যে ছাঁকনি (ট্রাবেকুলার মেশওয়ার্ক) তা বন্ধ হতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে চোখের চাপ বাড়তে থাকে।

২. বদ্ধ কোণ বিশিষ্ট গ্লুকোমা : একে চোখের জরুরি অবস্থা বলা হয়। এতে চোখের সামনের প্রকোষ্ঠে অবস্থিত নেত্রস্বচ্ছ এবং আইরিশের সংযোগস্থলের কোণটি ধীরে ধীরে সরু হতে হতে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়।

উন্মুক্ত কোণ বিশিষ্ট গ্লুকোমার ক্ষেত্রে : চশমার পাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হয়। পড়তে গিয়ে বেশ কিছু অক্ষর হারিয়ে যায়। রাতের বেলায় দেখতে অথবা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে কষ্ট হয়।

বদ্ধ কোণ বিশিষ্ট গ্লুকোমা : চোখে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং একপর্যায়ে মাথাব্যথা ও বমি হয়। চোখ লাল হয়ে যায়। আলোর চারপাশে রংধনুর বর্ণালী দেখা যায়। কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়ে যায়।

শনাক্তকরণ : দৃষ্টির পরীক্ষা ও চোখের চাপ পরিমাপ করা। অপথ্যালমোস্কোপ দিয়ে অপটিক স্নায়ু পর্যবেক্ষণ করা। কালার ফানডাস ফটোগ্রাফি করে অপটিক ডিস্ক এবং অপটিক ¯œায়ু পর্যবেক্ষণ করা। গোনিয়োস্কোপি যন্ত্রের সাহায্যে চোখের সামনের প্রকোষ্ঠের সংযোগ কোনটি পরীক্ষা করে দেখা, সেটি খোলা আছে নাকি বন্ধ হয়ে গেছে।

ডা. হারুন উর রশীদ, বিভাগীয় প্রধান, চক্ষু বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর