১৭২০ সালে প্লেগে ১ লাখ, ১৮২০ সালে কলেরায় ১ লাখ, ১৯১৮-২০ সালে স্পানিশ ফ্লুতে প্রায় ১০ কোটি লোক মৃত্যুবরণ করেছে। আবারও শতবর্ষ পেরিয়ে পৃথিবীতে এসেছে করোনা বা কোভিড ১৯। যাতে মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যেই প্রায় ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। নিকট অতীতে ২০০২ সালের ঝঅজঝ এ ২৪টি দেশে ৭৭৪ জন মারা যায়। আর ২০১২ সালে MARS এ ২৬টি দেশে ৮৫৮ জন মারা গিয়েছিল। এ এর সমগোত্রীয় ভাইরাস সংক্রমণ। কিন্তু বর্তমানে ১৮৭ টি দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুটি সব সীমানা পেরিয়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। নিয়েছে নিঃশব্দ ঘাতকের চেহারা। কি প্রধানমন্ত্রী, কি রাজা বা রানী, কি সেনাপতি, কিংবা রাস্তার খেটে খাওয়া মানুষ- ধর্ম বর্ণ, ধনী গরিব, নির্বিশেষে এর ভয়াল থাকায় সারা বিশ্বে এক স্বল্প পরিচিত নিঃশব্দ ভয়ঙ্কর শত্রুর সঙ্গে চিকিৎসা যুদ্ধে লিপ্ত। এটি এমন একটি যুদ্ধ যেখানে সবাইকেই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। আবার সবার সক্রিয় সতর্ক অংশগ্রহণ ছাড়া এই যুদ্ধে জয় অসম্ভব ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বাংলাদেশে এর প্রকোপ গুচ্ছ সংক্রমণ থেকে সামাজিক সংক্রমণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য গবেষকগণের ধারণা। এ সময়ে এই সংক্রমণ চক্র প্রতিরোধ বা প্রতিহত করতে হলে সামাজিক দূরত্ব (Social Distancing) বজায় রাখায়ই সবচেয়ে কার্যকরী একটি পন্থা। সামাজিক দূরত্ব হলো আপনার আশপাশের মানুষদের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্তেই নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। করোনার ক্ষেত্রে এই দূরত্ব ১.৮ মিটার বা ৬ ফুট। কারণ করোনা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। যথাসম্ভব বাড়িতে থাকা, পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্ভব হলে আলাদা আলাদা ঘরে থাকা, ডাইনিং টেবিল কিংবা যে কোনো স্থানে বসার ক্ষেত্রে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, একজনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র কোনো অবস্থাতেই আরেকজন ব্যবহার না করা, (থালা, বাসন, তোয়ালে, বিছানা আলাদা রাখা)। বিশেষভাবে কর্মস্থল, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমার, লিফট কিংবা সিঁড়ি ব্যবহার বা বাজারে দোকানপাটে কিছু কিনতে গেলে বা অতি প্রয়োজনীয় কোনো মিটিং, সংবাদ সম্মেলন, কোনো পরামর্শ সভা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই ৬ ফুট দূরত্ব মেনে চলতে হবে, অন্তত আগামী ৪ সপ্তাহ। নিজেকে ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিটি মানুষের সোশ্যাল ডিসটেনসিং বজায় রাখা জরুরি। আপনি যত এটি প্রতিপালন করে চলবেন তত আপনি ভালো থাকবেন। অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব মোবাইল ফোন, ভিডিওকল, ভাইবার, স্কাইপি, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ফেসটাইম ইত্যাদি ব্যবহার করুন। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করুন। না হলে আপনি হতে পারেন আপনার নিজের, পরিবারের ও সমাজের বিপদের কারণ। ঘরে থাকাকালীন প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা ব্যায়াম করুন এবং পুষ্টিকর খাবার খান। নিজে ভালো থাকুন এবং অন্যকে নিরাপদ রাখুন। পরিশেষে বয়স্ক, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, উচ্চরক্তচাপ, ক্যান্সার রোগীদের সতর্ক দূরত্বে আলাদা রাখুন। তাই এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ও যতœবান হতে হবে।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, নাক-কান ও গলা বিভাগ, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।