শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা : আতঙ্ক নয় সচেতন হোন

করোনা : আতঙ্ক নয় সচেতন হোন

১। মরণব্যাধি করোনা নিয়ে উদ্বেগ, শঙ্কা, ভয় আর আতঙ্ক আমাদের মাঝে কম নয়। উদ্বিগ্নতার মাত্রা এত বেশি যে আমরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। করোনা নতুন একটি সংক্রমণ ব্যাধি, এর সম্বন্ধে আগে আমাদের জানা ছিল না। যা আমরা জানতাম না, জানি না, যা দেখা যায় না, আপাত দৃষ্টিতে যে ব্যাধির চিকিৎসা নেই, প্রতিষেধক নেই তা নিয়ে শঙ্কা আর উদ্বিগ্নতা অস্বাভাবিক নয়। অজানা আশঙ্কা উদ্বিগ্নতা ছাড়াও রোগভীতি, নিদ্রাহীনতা, ডিপ্রিসন, আতঙ্কগ্রস্ততা, মৃত্যুভীতি ইত্যাদি মানসিক রোগের উপসর্গ আমাদের মাঝে দেখা দিতে পারে। কিন্তু আমরা জানি করোনা প্রতিরোধ সম্ভব। আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা তা মনে রাখতে পারি এবং তাতে করে নিজের মনোবল বৃদ্ধি করতে পারি, করোনা প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারি। আমরা আতঙ্কিত হব না, কারণ- ক। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও করোনা তার উৎপত্তিস্থল চীনে দমিত হয়েছে, চীনে নতুন আক্রান্ত নেই বললেই চলে (বিদেশ থেকে চীনে ফেরত ব্যতীত)। খ। বাংলাদেশে আক্রান্ত ৬১ জনের মধ্যে ২৬ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। গ। করোনা আক্রান্ত ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ লোকের উপসর্গ খুব কমই থাকে এবং তার চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে না। ঘ। সার্স/সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি মহামারী থেকে করোনার মৃত্যুর হার অনেক কম। করোনায় মৃত্যুর হার গড়ে ২% এর কাছাকাছি (আমাদের কারও কাছে তা কাম্য নয়)। ঙ। করোনাকে মোছা যায়/ধ্বংস করা যায়/পরিষ্কার করে ফেলা যায় (হাত ধোয়া, আশপাশ পরিষ্কার, আসবাবপত্র পরিষ্কার ইত্যাদির মাধ্যমে) চ। করোনা প্রতিষেধক টিকা (ভ্যাকসিন) উদ্ভাবনের পথে। ছ। করোনা চিকিৎসায় সাফল্যও কম নয়। চিকিৎসায় জন্য নিত্যনতুন ওষুধ আবিষ্কৃত/ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি ১০১ বছরের করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে। জ। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমরা এই মৃত্যুতে জানি কি করে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা করতে হয়। * সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা (আমরা ঘরে থাকব)। * আমরা ইতিবাচক চিন্তা করব-ঘরে থাকা আমাকে, আমার পরিবারকে তথা দেশকে করোনার মতো ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। * অহেতুক, অপ্রয়োজনীয়, ভিত্তিহীন খবর ও তথ্য নিয়ে মাথা ঘামাব না। * নির্ভরযোগ্য তথ্য গ্রহণ করব-যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসি, আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। * ব্যক্তিগত শখ চর্চা করুন-বই পড়া, গান শোনা, নাটক-সিনেমা দেখা, ড্রয়িং করা, বাগান করা, স্ত্রী-সন্তাদের সঙ্গে সময় কাটানো। * আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলা, ভিডিও কল করা (কিন্তু শুধু করোনা বিষয়ক উদ্বিগ্নতা পূর্ণ কথাবার্তা নয়)। * নামাজ / উপাসনা করা (নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী)। মুসলমানরা অর্থসহ কোরআন পড়তে পারেন, তাজবিহ-তাফসির পড়তে পারেন। ২। মনে রাখতে হবে, আমাদের জন্য নির্ধারিত কাজটি করলেই আমরা করোনা থেকে মুক্ত হতে পারব। উদ্বেগ, আতঙ্ক আমাদের মনকে শুধু দুর্বলই করে না, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। সুতরাং আমাদের মনকে বোঝাতে হবে, প্রফুল্ল রাখতে হবে। আমাদের সবার সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইনশাল্লাহ আমরা করোনামুক্ত হব। তাই করোনা ভাইরাস নিয়ে আমাদের সবাইকে আরও যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।

অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (এলপিআর)

ডা. মো. আজিজুল ইসলাম,

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর