রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা মানেই মৃত্যু নয় প্রয়োজন সচেতনতা

করোনা মানেই মৃত্যু নয় প্রয়োজন সচেতনতা

বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ পাওয়া নভেল করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে আতঙ্ক, সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে অসংখ্য গুজব। কভিড-১৯-এর শুরুর দিকের লক্ষণগুলো হলো জ্বর, ক্লান্তি ভাব, শুষ্ক কাশি, শরীর ব্যথা, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা ইত্যাদি; পাতলা পায়খানাও হতে দেখা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এসব লক্ষণের তীব্রতা বাড়ে এবং মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও কোনোরকম লক্ষণ প্রকাশ পায় না বা মৃদু লক্ষণ থাকতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। অ্যাজমা রোগীর ক্ষেত্রে নভেল করোনাভাইরাস সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ; যারা ইতিমধ্যে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাদের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা আরও বাড়তে পারে। ইমিউনিটি সিস্টেম যাদের দুর্বল বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম যেমন-ডায়াবেটিস, কিডনি বিকল, হৃদরোগী, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে যারা ভুগছেন এবং বিশেষ করে বৃদ্ধরা মারাত্মক করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন। ধূমপায়ী পুরুষদের মধ্যে এই ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব লক্ষ করা যায়। ধূমপানের ফলে শ্বাসনালি ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কিছুটা কম থাকে বিধায় এ ভাইরাস শ্বাসনালি ও ফুসফুসকে আক্রমণ করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত এ ভাইরাসের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচদিন সময় লাগে।

কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কণার মধ্যে এই ভাইরাসটি থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে তিন ফুটের মধ্যে কেউ থাকলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। বাতাসে ভাইরাসটি ছড়ায় না, বরং শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কণার মাধ্যমে ছড়ায়। কণাটি ভারী হওয়ায় এটি বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে না; তাই এটি মাটি, মেঝে বা অন্য কোনো বস্তুর ওপর পড়ে এবং দীর্ঘ সময় জীবিত থাকতে পারে। সেখান থেকে স্পর্শের মাধ্যমে অন্য কারও করোনা সংক্রমণ হতে পারে। কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় মুখে হাত দিলে বা কফ-থুথু হাতে লেগে গেলে এবং ওই হাত দিয়ে কোনো কিছু ধরা হলে, যেমন- টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল, কি-বোর্ড ইত্যাদিতে ভাইরাস থেকে যেতে পারে এবং এগুলো যে কেউ স্পর্শ করলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো বস্তুর উপরিতলে এ ভাইরাস বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এ জন্য বারবার ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

করোনা মানেই মৃত্যু নয় বা রোগটি নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই; তবে আমাদের সাবধানতাবশত কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে :

১. গণপরিবহন বা ভাড়ায়চালিত যানবাহনের ব্যবহার এড়িয়ে চলা।

২. ঘরে অবস্থানকালে পরিবারের অন্যদের সংস্পর্শ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ৩. হাঁচি-কাশি দিলে ওই টিস্যু পুনরায় ব্যবহার করবেন না।

৪. কেউ যদি রুমাল ব্যবহার করেন, তাহলে সেই রুমাল ও হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। ৫. বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে দুই হাত ধুয়ে নেবেন অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। ৬. করমর্দন, কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। যথাসম্ভব ঘরে বা বাড়িতে থাকুন, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়াই ভালো। ৭. দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন সুষম খাবার, টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

৮. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে। ৯. খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাবেন এবং শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। ১০. ডিম পোচ করে না খেয়ে ভালোভাবে ভাজি করে খাওয়া উচিত। ১১. যেখানে সেখানে হাঁচি-কাশি দেবেন না এবং কফ-থুথু ফেলবেন না।

১২. যাদের হাঁচি-কাশি, সর্দি হয়েছে, তারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। তাই এসব বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।

- ডা. এম ইয়াছিন আলী, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক।

সর্বশেষ খবর