মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাস : দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টান

সে কারণেই বিভিন্ন দেশে করোনাআক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজ বাড়িতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, করোনাআক্রান্ত ৮০ শতাংশই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, তাদের সিংহ ভাগকে হাসপাতালে নিতেই হয় না

করোনাভাইরাস : দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টান

কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ কি অচ্ছুৎ কিছু! না কি সাধারণ মানুষের মনে তাদের নিয়ে কোনো বিরাট ভীতি আছে! কিছু ভীতি তো আছেই, সেটাকে না বাড়ানোই তো ভালো! বাড়ানো যায় সতর্কতা, বাড়ানো যায় সেবা, কমানো দরকার ঘৃণা ও ভীতি!

কোথাও করোনাআক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট এমনকি পাড়ামহল্লা ‘লকডাউন’ করে দেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে, লাল পতাকা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে! একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ‘লকডাউন’ করে দেওয়া হয়েছে বলে পত্রিকা থেকে শুনতে পেলাম! কি কান্ড! তাহলে সচিবালয়ে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কেউ আক্রান্ত হলে সেগুলোও কি লকডাউন করা হবে! হাসপাতাল! হ্যাঁ, সাধারণত কোনো শহর বা দেশ লকডাউন করতে দেখা যায়, যাতে প্রচুর অনিয়ন্ত্রিত মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

করোনাআক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি বা বিল্ডিং বা পাড়া কি যুক্তিতে লকডাউন করা হয় তার পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা কোথাও পাওয়া যায়নি। হতে পারে সতর্কতা হিসেবে এটি করা হয়। কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপের অত্যন্ত নেতিবাচক একটা দিক আছে। বাড়ি লকডাউন করে বা লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিটি সম্পর্কে ভীতি কিংবা তার প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তি/পরিবারকে মানসিক ও সামাজিক পীড়নের মধ্যে ফেলা হচ্ছে কি না সেটাও বিবেচনায় রাখা এই মুহূর্তে জরুরি!

করোনাভাইরাস বিশ্বেই নতুন একটি উপসর্গ। এমনিতেই মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে এক ধরনের সংশয়/মৃত্যুভীতি আছে। ফলে যে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তিই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে এক ধরনের মানসিক ও সামাজিক চাপ তৈরি হয়। এই সময়ে তাদের এবং তাদের পরিবারের জন্য প্রয়োজন প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সাহায্য। তাদের বাড়ির ভিতর ঢুকে গিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে এমন নয়। কিন্তু তাদের বাজার, ওষুধ আরও নানা পারিবারিক সাহায্য তো লাগতে পারে। তাই আচরণে, দৃষ্টিভঙ্গিতে মানবিকতা প্রকাশ করাই তো ধর্ম!

করোনা অত্যন্ত ছোঁয়াচে। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি স্পর্শে না এলে এবং সেই স্পর্শের পর নিজের নাক, মুখ বা চোখে হাত না দিলে ভাইরাস প্রবাহিত হতে পারে না। সে কারণেই বিভিন্ন দেশে করোনাআক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজ বাড়িতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, করোনাআক্রান্ত ৮০ শতাংশই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, তাদের সিংহ ভাগকে হাসপাতালে নিতেই হয় না। শারীরিক অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসারত ব্যক্তি বা যাদের শ্বাসকষ্ট চরমে, তাদেরই কেবল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে! করোনাআক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দিলে পাশের বাড়িতে কিংবা পুরো বিল্ডিংয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে- এমন আশঙ্কার বৈজ্ঞানিক কোনো যুক্তি নেই। একটি পরিবারে কেউ একজনের কভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ হলে (অথবা সব লক্ষণ দেখা গেলে), ধরে নেওয়া যায় যে, পরিবারের অন্যদেরও তা সংক্রমিত করে থাকতে পারে এবং সম্ভাব্য সংক্রমণের শিকারদের ভিতর কেউ কেউ কখনই আক্রান্ত নাও হতে পারেন (এ্যা-সিম্পটোম্যাটিক), আবার কেউ কেউ হতে পারেন!

এখন কথা হলো, কোনো উপায়ে তারা বাসায় থাকার ব্যাপারটা মেনটেইন করবেন! সবাই-ই জানেন, তারপরও মনে করিয়ে দেওয়া আর কি! রোগীর অবস্থা যদি অনেক বেশি খারাপ না হয়ে যায়, তাহলে রোগী নিশ্চিন্তে বাসায়ই থাকতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি (যার উপসর্গগুলো সুস্পষ্ট) অবশ্যই নিজেকে একটি রুমের ভিতর বা রুমের অভাব দেখা দিলে ঘরের কোণে স্বল্প পরিসরে আবদ্ধ রাখবেন। প্রথম ও প্রধান কাজ হলো রোগী নিজে মাস্ক ব্যবহার করবেন, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান নেবেন ও ঘন ঘন হাত ধোবেন। রোগী যে সমস্ত জায়গা ছোঁবেন, সেগুলোতে নিয়মিত ডিসিইনফ্যাক্ট্যন্ট দিয়ে পরিষ্কার করবেন। নিতান্ত দরকার না হলে মুখোমুখি কারও সঙ্গে কথা বলবেন না, ছোঁয়াছুঁয়ি মিনিমাম রাখবেন। ঘরের বাকিদের মধ্যে এক-দুজন অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে রোগীকে খাদ্য-পথ্য-দরকারি সেবা-ওষুধ দেবেন, আর নিজেদের প্রটোকল রক্ষা করবেন।

তাই করোনাভাইরাসের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি অতি জরুরি। লেখক : সেরীন ফেরদৌস,

কমিউনিটি নার্স, কানাডা।

সর্বশেষ খবর