শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে ডিম ও দুধ কোম্পানিগুলোকে

ড. মো. আওলাদ হোসেন

মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে ডিম ও দুধ কোম্পানিগুলোকে

টিভি সংবাদে দেখলাম টাঙ্গাইলের পোলট্রি খামারিরা ডিম বিক্রি করতে পারছে না। এক বিশেষ ধরনের ফ্লু’তে মুরগি মারা যাচ্ছে। এছাড়া ভেটেরিনারিয়ানদের সেবা যথাযথভাবে পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন এক খামারি। করোনার কারণে সব অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় লম্বা ছুটির বেড়াজালে। নিরাপদ থাকার লক্ষ্যে সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। মানুষ ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। ফলে বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটাও কমেছে। কিন্তু মুরগি ডিমপাড়া বন্ধ করতে পারছে না। খামারি গাভীর দুধ দোহন বন্ধ করতে পারছে না। কিন্তু খামারি এই ডিম-দুধ বিক্রি করতে পারছে না। অথচ খামারিকে নিয়মিত গাভী বা মুরগির জন্য খাবার ও ওষুধ কিনতে হচ্ছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ও ভেটেরিনারি ডাক্তারের ফি পরিশোধ করে ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। ছোট-বড় কোনো খামারির পক্ষেই এই খরচ বহন করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া উৎপাদিত এত বেশি ডিম ও দুধ সংরক্ষণ করার মতো এত বড় রিফ্রিজারেটর বা ডিপ ফ্রিজ কোনো খামারে আছে বলে মনে করি না। করোনা আক্রান্ত রোগীর কোনো প্রতিষেধক ও চিকিৎসা এখনো বিশ্বের কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি। নিজ নিজ শরীরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি দিয়েই মানুষকে করোনার মোকাবিলা করতে হবে। দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সদয় হয়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশের সব মানুষকে  করোনা প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করার ওপর জোর দিয়েছেন। এজন্য তিনি নিয়মিত ডিম-দুধ, মাছ-মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। অর্থাৎ করোনা প্রতিরোধে দৈনন্দিন খাবারে ডিম-দুধের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। অপরদিকে নিয়মিত  উৎপাদিত ডিম-দুধ বিক্রি করতে না পেরে কৃষক ও খামারিরা বিপাকে। তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিদের সহায়তা করার জন্য সরকার প্যাকেজ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এই প্রণোদনার টাকা বিভিন্ন ‘সিস্টেম’ অতিক্রম করে কৃষক ও খামারির হাতে পৌঁছতে সময়ের ব্যাপার। এছাড়া ‘সিস্টেম লস’-এর কারণে টাকা যথাযথভাবে পৌঁছবে কি না, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। তাই কৃষকবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমার নিবেদন, ক্ষতিগ্রস্ত পোলট্রি ও ডেইরি শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে উৎপাদিত ডিম-দুধ ক্রয় করে ত্রাণ দেওয়া যেতে পারে। ফলে একদিকে খামারিরা নিয়মিত ডিম-দুধ বিক্রি করে আর্থিক সংকট নিরসন করতে পারবে, অপরদিকে ঘরে আটকেপড়া সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিয়মিত ডিম-দুধ খেয়ে শরীরের রোগপ্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করে করোনা প্রতিরোধ করতে পারবে। এছাড়া উৎপাদিত দুধ মিল্কভিটা, আড়ং ও অন্যান্য দুধ কোম্পানীগুলোকে নিম্ন সুদে ঋণ দিয়ে দুধ ক্রয় করানো যেতে পারে। এবং এ সব দুধ কোম্পানিগুলো মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রণোদনার জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আংশিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কৃষক ও খামারিরা প্রণোদনার চেয়ে বেশিই উপকৃত হবে এবং অর্থনীতির চাকাও সচল থাকবে।

লেখক : পরিবেশবিজ্ঞানী ও ভেটেরিনারি ডাক্তার।

সর্বশেষ খবর