সোমবার, ৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

লকডাউন ও হার্ড ইমিউনিটি

লকডাউন ও হার্ড ইমিউনিটি
সামনে এসে রোগ মোকাবিলা পদ্ধতিও বলা যায় একে। এই পদ্ধতিতে  যখন তখন লকডাউন খুলে দিতে পারেন। এতে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হবে। কেউ মারা যাবেন, বাকিরা সুস্থ হয়ে যাবেন। যারা সুস্থ হবেন তারা প্রাকৃতিক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়ে যেতে পারেন

এ শতাব্দীর এখন পযর্ন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। মানুষের চিন্তা শক্তি ও ধারণাকেও পাল্টে দিয়েছে করোনাভাইরাস। চীনের উহানে শুরু হওয়া এ ভাইরাস ইতোমধ্যে বিশ্বের ২১০টি অঞ্চলে তার  বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। অর্জিত জ্ঞান, সাধনা, পরীক্ষা সব আবারো চোখে দেখা যায় না এমন একটা অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে গোটা দুনিয়া আজ পর্যুদস্ত। শুধু বাংলাদেশেই গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৯৪৫৫, মোট সুস্থ ১৭৭, মৃত্যু ১৭৭। সারা বিশ্বে মোট আক্রান্ত প্রায় ৩৪ লাখ, মৃত্যু প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার। বিশ্বে লকডাউন, আইসোলেশন বা কোয়ারেনটাইন করে, শিষ্টাচার মেনেও মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো যাচ্ছে না। অনেক মানুষ লকডাউন খুলে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, অনেকে আবার বিপক্ষে। আসলে এই অচলাবস্থার অবসান আমরা সবাই চাই। কিন্তু কীভাবে? আসুন সহজভাবে জেনে নেই-

আসলে লকডাউন কী? একটু সহজভাবে যদি চিন্তা করি; আমরা নিশ্চয়ই চিড়িয়াখানা দেখেছি। ওখানে কী হয়? ভয়ঙ্কর সব জন্তুকে খাঁচায় ভরে রেখে বাইরে থেকে তা আমরা দেখি। আবার চিন্তা করুন সাফারি পার্কগুলোর কথা। ওখানে জন্তুরা বাইরে ঘুরে বেড়ায় আর আমরা গাড়ির খাঁচায় থেকে ঘুরে ঘুরে ওদের দেখি। লকডাউন হলো সাফারি টেকনিক। করোনাভাইরাসকে বাইরে ছেড়ে দিয়ে আমরা এখন ঘরে আটকা। লকডাউন খুলে দেওয়ার কী কী পদ্ধতি থাকতে পারে?  পদ্ধতি-১ : এখন যদি সাফারি থেকে চিড়িয়াখানা টেকনিকে আমাদের যেতে হয় বা লকডাউন খুলে দিতে হয়; তবে করোনাভাইরাসকে খাঁচায় আটকাতে হবে। কিন্তু ভাইরাস তো দেখা যায় না, একে আটকাবেন কীভাবে? আসলে আটকে দিতে হবে এই ভাইরাস বহনকারীকে। এই বহনকারী চিহ্নিত করতে আমাদের প্রচুর টেস্ট করতে হবে। পজিটিভ সব রোগীকে এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন সবাইকে আলাদা করে ফেলতে হবে। যখন এ কাজটি সমাপ্ত হবে তখন আমার কিছু সময় নেব আর পর্যবেক্ষণ করব। এভাবেই একসময় সম্ভব লকডাউন খুলে দেওয়া। পদ্ধতি -২ : এটি হাজার বছরের পুরনো পদ্ধতি। ডারউইনের Survive the fittes থিউরি এটি। সামনে এসে রোগ মোকাবিলা পদ্ধতিও বলা যায় একে। এই পদ্ধতিতে আপনি যখন তখন লকডাউন খুলে দিতে পারেন। এতে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হবে। কেউ মারা যাবে, বাকিরা সুস্থ হয়ে যাবেন। যারা সুস্থ হবেন তারা প্রাকৃতিক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়ে যেতে পারেন। এই পদ্ধতিতে দুর্বলরা ঝরে পড়ে করোনা প্রতিরোধী সবল সমাজ গঠিত হবে। পদ্ধতি-৩ : এটি ধীরে চলো নীতি। লকডাউন সামান্য শিথিল করে দেখা এর কী প্রভাব। সঙ্গে পরীক্ষা আর রোগী শনাক্ত অব্যাহত রাখা। প্রান্তিক জনগণকে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, ছোট ব্যবসাকে ভর্তুকির আওতায় আনা। প্রচুর প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে এই ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় আর তা থেকে কীভাবে বাঁচা যায় তার কার্যকরী অনলাইন, টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

কোনটার কী সুবিধা-অসুবিধা : চিড়িয়াখানা টেকনিকের জন্য দরকার খুব শক্তিশালী পরিকল্পনা, আধুনিক ব্যবস্থা। র‌্যাপিড টেস্টিং। তবে এর সফলতায় ঝুঁকি কম, প্রাণহানির আশঙ্কা খুবই কম। তবে এই কাজ সময়সাপেক্ষ তাই লকডাউন তুলতে সময় লাগবে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। ডারউইন পদ্ধতি সহজ, আদিম। তবে এতে ব্যাপকভাবে প্রাণহানি হতে পারে, ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক। স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। ফলে এখানে আরও বড় আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে পারে দেশ। পরিশেষে বলা যায় লকডাউন তোলা না তোলার বিষয়ে বিশ্ব খুব বড় সংকট আর সিদ্ধান্তহীনতায় পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি সর্বোত্তম।

ডা. মোহাম্মদ আলী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

ও গবেষক; বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর