মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ডায়ালাইসিস রোগীদের পরামর্শ

ডায়ালাইসিস রোগীদের পরামর্শ
কামরাঙ্গা পরিহার করাই শ্রেয়। কামরাঙ্গা কিডনির ক্ষতি করতে পারে গবেষণায় প্রমাণিত। সময়মতো চিকিৎসা করা গেলে কিডনি ইনজুরি বা সাময়িক কিডনি বিকল সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়ে আসে

এখন হয়তো আমরা অনেকেই জানি কামরাঙ্গা কিডনির ক্ষতি করে। নিচের গল্পটি পড়লে ধারণা আরও পাকাপোক্ত হবে। বছর খানেক আগে মেডিসিন স্পেশালিস্ট এক বন্ধু জামান সাহেব (ছদ্মনাম) নামের একজন রোগী পাঠালেন আমার কাছে। রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম তার ক্রিয়েটিনিন অনেক বেশি। কয়েকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ, জ্বর ৪-৫ দিন ধরে, প্রস্রাবের পরিমাণও কমে আসছে। এমনকি শেষ ২৪ ঘণ্টায় প্রস্রাবও হয়নি। আর সঙ্গে থাকা বিভিন্ন রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে জানতে পারলাম, তার রক্তে ইনফেকশন আছে। সঙ্গে কিডনি ফেলিওর সিরাম ক্রিয়েটিনিন ৯ মিলিগ্রাম/ডিএল। এখানে বলে রাখা দরকার, আগে তার কোনো কিডনি রোগ ছিল না, জ্বর ভালো করার জন্য ৫/৬টা কামরাঙ্গা পিষে রস করে খেয়েছেন। এরপর থেকেই তার প্রস্রাবের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসে। রক্তচাপ মাপতে গিয়ে দেখা গেল মাত্রা ১৭০/১১০ মিলিমিটারি অফ মার্কারি। সবকিছু বিবেচনায় বুঝলাম, রোগীকে বাঁচাতে হলে জরুরিভাবে ডায়ালাইসিস দিতে হবে। রোগীর লোকদের বিষয়টা জানানো হলো, রোগীকে বিস্তারিতভাবে বোঝানো হলো। পরবর্তীতে দ্রুত রোগীকে ভর্তি করে ওই রাতেই একটি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হলো। পরদিন সকালে রোগীকে যখন দেখতে গেলাম তখন পূর্ববর্তী দিন অর্থাৎ ডায়ালাইসিসের পরে প্রস্রাবের পরিমাণ কতটুকু তা জানতে চাইলাম দায়িত্বরত সেবিকার কাছে। জানালেন, ৫০০ মিলির মতো প্রস্রাব হয়েছে। মনের মধ্যে কিছুটা আশা সঞ্চার হলো, কিছুটা খুশি হলাম এই ভেবে, রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে ইনশাল্লাহ। রোগী এরই মধ্যে চারটি ডায়ালাইসিস করিয়েছেন। প্রস্রাবের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল, রক্তের সিরাম ক্রিয়েটিনিন নিচের দিকে নামতে থাকল। কিন্তু জ্বর কমছে না। রোগী অধৈর্য হয়ে গেলেন, রাগান্বিত হয়ে বললেন, জ্বর নিয়ে ভর্তি হলাম সেই জ্বর ভালো হচ্ছে না কেন? বিষয়টি নিয়ে আমিও কিছুটা ভাবনায় পড়লাম। পরে প্রাথমিক এন্টিবায়োটিক পরিবর্তন করে নতুন একটি অ্যান্টিবায়োটিক যোগ করলাম। তারপর থেকে খেয়াল করলাম জ্বরটাও নামতে থাকল। রোগীকে ছুটি দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম এবং ছুটিও দিলাম। কিন্তু তখন জামান সাহেবকে দেখে মনে হলো মন খারাপ তার। চোখে-মুখে লজ্জার ছাপ। হঠাৎ করেই আমার কাছে এসে অনুতপ্ত হলেন না বুঝে খারাপ ব্যবহার করার কারণে। ক্ষমাও চাইলেন আমি বললাম, রোগটা খারাপ। তাই হয়তো আপনার মেজাজ উগ্র ছিল, তখন তো যে কেউ আবোল-তাবোল বলতে পারে।

দশ দিন পর যখন জামান সাহেব ফলোআপে আসলেন তখন তার সিরাম ক্রিয়েটিনিন রিপোর্ট দেখলাম ১.২ মিলিগ্রাম/ডিএল। কথাবার্তা শেষে চিকিৎসাপত্র দেওয়ার পর তিনি বেরিয়ে গেলেন। আবার চেম্বারে ঢুকল অনেকগুলো মাছ দিল। বললেন, স্যার আমার বাড়ি হাওরে, সেখানে অনেক মাছ পাওয়া যায়। আপনার জন্য কিছু মাছ নিয়ে আসলাম। দোয়া করবেন স্যার। তখন থেকে জামান সাহেব স্বাভাবিক আছে, তার কিডনি ভালো আছে। তার কখনো জ্বর, কাশি, ব্যথা এগুলো হলো তিনি আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এত আগের কথাগুলো বলার কারণ চারটি। ১) রমজানে অনেকেই কাঁচা ফলের সরবত পান করেন। কামরাঙ্গা পরিহার করাই শ্রেয়। ২) কামরাঙ্গা কিডনির ক্ষতি করতে পারে গবেষণায় প্রমাণিত। ৩) সময়মতো চিকিৎসা করা গেলে কিডনি ইঞ্জুরি বা সাময়িক কিডনি বিকল সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়ে আসে। ৪) আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দিলে রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই ডায়ালাইসিস রোগীদের এ সময় যথেষ্ট সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

ডা. ওমর ফারুক মিয়া, সহকারী অধ্যাপক,

কিডনি রোগ বিভাগ, ময়মনসিংহ

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর