বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা শনাক্তকরণই কি প্রধান চ্যালেঞ্জ?

সংক্রমণের পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগে। এখন যেহেতু এই কিটটি অ্যান্টিজেনও শনাক্ত করতে সক্ষম, আপনাকে আর অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না

ড. মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন

করোনা শনাক্তকরণই কি প্রধান চ্যালেঞ্জ?

দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে করোনা মহামারীর পাগলা ঘোড়া! চীনের উহান থেকে অতি সন্তর্পণে এক পা দু পা করে যাত্রা শুরুর পর অল্প সময়ের মধ্যে সারা দুনিয়ায় মরণ-জাল বিস্তার করে সবাইকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে, দুনিয়ার তাবৎ মোড়লের নাকের পানি চোখের পানি একাকার করে ছেড়েছে। শত্রুকে কখনো হালকাভাবে নিতে নেই। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়, বিশেষ করে যুদ্ধবিগ্রহে। গত জানুয়ারিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা যখন প্রথম করোনাভাইরাস নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করেন, তিনি বিষয়টিতে অতটা গুরুত্ব দেননি। এ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, আমেরিকায় যখন করোনা সবেমাত্র তার থাবা বসাতে শুরু করেছে, ১২ জন রোগী ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের সঙ্গে এক প্রশাসনিক বৈঠক শেষে বলেন, ‘অনেক মানুষই মনে করছেন এপ্রিল মাসের গরমে ভাইরাসের প্রকোপ চলে যাবে। এপ্রিল মাসে গরম আসে। স্বাভাবিকভাবে এপ্রিল মাসে তা চলে যাওয়ার কথা।’ সে দিন নিউ হ্যাম্পশায়ারে এক সমাবেশে এবং ফক্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও ট্রাম্প তার এই ‘গরম তত্ত্বের’ পুনরাবৃত্তি করেন। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসের আক্রমণ মোকাবিলায় প্রেসিডেন্টের সজাগ দৃষ্টি প্রত্যাশা করলে তখনো তিনি নির্দিষ্টভাবে এপ্রিল মাসের কথাই উল্লেখ করে একই রকম আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু, বিধিবাম, মিথ্যা আশা কুহকিনী। এসব অবাস্তব প্রত্যাশা কাজে আসেনি। পরিস্থিতির সময়োচিত ও যথাযথ মূল্যায়নে ব্যর্থতা দেশ ও জাতির জন্য যে কত মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে, তা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ট্রাম্পের আমেরিকা। এদিকে প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে ফাঁস হওয়া গোপন এক দলিল থেকে জানা যায়, ব্রিটেনের কয়েকজন মন্ত্রীকে গত বছরই করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এবং এর সম্ভাব্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। ওই দলিলে এই বলে সতর্ক করা হয়েছিলে যে, এমনকি সাধারণ পর্যায়ের মহামারীতেও ব্রিটেনে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। এই ঝুঁকি মেটাতে সরকারকে সক্ষমতা অর্জনের তাগিদ দিয়ে বিশেষ করে পিপিইর মজুদ গড়ে তোলা, মাত্রাতিরিক্ত মৃত্যুর ঘটনা সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা এবং রোগ নজরদারি ও শনাক্ত করার জন্য কার্যপ্রণালি ঠিক করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল।

কথায় বলে, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের ১০ ফোঁড়। মাথা মোটা ড্রাইভার যদি চালকের আসনে বসা থাকে, পেছন থেকে আপনি যতই চেঁচান না কেন, ‘ড্রাইভার সাব! সাবধানে আগান, রাস্তা খারাপ’, ব্যাটা শুনবে না। তার যখন হুঁশ হবে, তখন দেখা যাবে এরই মধ্যে মারাত্মক এক বিপত্তি বাঁধিয়ে আপনাদের অনেককেই হাসপাতালে আবার কাউকে কাউকে একেবারে আল্লাহর দরবারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। চীনের উহানে ডাক্তার লি যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় খানিকটা আড়ষ্টভাবেই নতুন এ ভাইরাসের ব্যাপারে বন্ধুদের জানান দিলেন, কর্তাব্যক্তিরা তার ওপর ভীষণ খাপ্পা হলেন, গুজব ছড়ানোর অপরাধে তাকে এক হাত নিলেন। কিন্তু, চাইনিজ বুদ্ধি বলে কথা! খুব দ্রুত তারা বুঝে গেলেন, ঘটনা সত্যি। কালবিলম্ব না করে তারা সর্বাত্মকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, ফলটাও পেলেন নগদ। চীনে যখন উথাল-পাতাল চলছে, ইউরোপ-আমেরিকা প্রস্তুতির জন্য ঢের সময় পেয়েছিল। কিন্তু, নেতৃত্ব আসন্ন বিপদের মাত্রাটা আঁচ করতে ব্যর্থ হয়। উনারা ভেবেছিলেন, এটা ওই চাইনিজদের ব্যাপার-স্যাপার। আমাদের অত গা না করলেও চলবে। দেখুন, এই খামখেয়ালিপনা ও আত্মপ্রসাদের কি চড়া মূল্যটাই না আজ তাদের দিতে হচ্ছে! South China Morning Post-এর ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি তথ্য সম্ভারের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের ৫৫ বছর বয়েসী এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম এ রোগে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। [তথ্যসূত্র: South China Morning Post, 13 Mar, 2020] ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে হুবেই প্রদেশের উহান শহরে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটছে বলে সতর্কবাণী দেয়। [তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, ২৬ এপ্রিল, ২০২০] ১১ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে চীনে করোনা সংক্রমণে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। জানুয়ারির শেষের দিকে রোগটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ও আমেরিকায় শনাক্ত হতে শুরু করে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র, ২৩ জানুয়ারি ফ্রান্স, ২৬ জানুয়ারি জার্মানি, ৩০ জানুয়ারি স্পেন, ৩১ জানুয়ারি ইতালি ও যুক্তরাজ্য এবং ১১ মার্চ তুরস্কে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে দেশগুলোতে করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশগুলোতে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের পর এক থেকে দেড় মাসের মাথায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় ব্যাপক উল্লম্ফন ঘটেছে।

রোগটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে এটি আমেরিকা ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার পর। দিনের পর দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ইউরোপ আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে এখনো পর্যন্ত রোগটির বিস্তার সীমিত। তবে, এখনো শেষ কথা বলার সময় আসেনি। রোগটি এখানে এসেছে চায়না থেকে ইউরোপ ঘুরে। হতে পারে, এ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ভাইরাসটি কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে। এমনও হতে পারে যে, এখানকার এ মুহূর্তের অপেক্ষাকৃত ঊষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া ভাইরাসটির বিস্তারের জন্য খুব উপযোগী নয়। তবে অনেকেই আমাদের টেস্টিং সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন। তাদের ধারণা, আক্রান্তের যে সংখ্যা গণমাধ্যমে আসছে তা প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলন নয়। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, টেস্টের পরিধি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত্রের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা যেটুকু বুঝতে পেরেছেন, এ রোগটি খুবই সংক্রামক এবং সংক্রমণের বাহন হিসেবে কাজ করে মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি কিংবা কথা বলার সময় তার শ্বাসযন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলকণা। আপনি যদি তখন ধারে-কাছে থাকেন, এসব জলকণা শ্বাস নেওয়ার সময় আপনার শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে পড়তে পারে। ভাইরাসবাহী জলকণা যদি মেঝে, কাপড়-চোপড়, টেবিল-চেয়ার কিংবা অন্য কিছুর ওপর পড়ে, আর আপনি তা হাতে স্পর্শ করেন এবং পরে আপনার নাক, মুখ বা চোখে হাত লাগান, তাহলে এভাবেও আপনি সংক্রমিত হতে পারেন। যেহেতু, এখন পর্যন্ত রোগটির কোনো কার্যকর ওষুধ বা ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হয়নি, এর সংক্রম্যতা অত্যন্ত তীব্র এবং সংক্রমণের পর প্রচুর ভোগান্তি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য হারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, বিশেষজ্ঞরা এর প্রতিরোধের ওপরই সবিশেষ গুরুত্বারোপ করছেন। এজন্য তারা মূলত দুটি কর্মপদ্ধতি নির্দেশ করেছেন : ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া (নিদেনপক্ষে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাত জীবাণুমুক্ত করা) এবং জনসমাগম পরিহার করা এবং অন্যজনের কাছ থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা। একজন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি যদি নির্বিবাদে সাধারণ্যে মিশেন, তাহলে তার একজনের কাছ থেকে অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন, তারা আবার আরও অনেককে সংক্রমিত করবেন, পরের জনেরা আরও অনেককে এভাবে এটি একটি chain reaction-এর মত চলতেই থাকবে। ফলে দেখা যাবে, একজন মাত্র ব্যক্তি থেকে শত-সহস্র জনের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ান এক নারীর কথা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে, তাকে বলা হচ্ছে একজন ‘সুপার স্প্রেডার’। ওই নারী করোনা সংক্রমণের লক্ষণাদি দেখা দেওয়া সত্ত্বেও নিকট অতীতে বিদেশ ভ্রমণ করেননি এবং এ ধরনের কারও সংস্পর্শে আসেননি এ যুক্তিতে টেস্ট করাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন এবং ডাক্তারদের পরামর্শ উপেক্ষা করে চার্চে গমন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ওঠাবসা এসব অব্যাহত রাখেন। অবশেষে তিনি যখন টেস্ট করাতে রাজি হন এবং টেস্টে পজিটিভ প্রমাণিত হন, দেখা গেল এরই মধ্যে তিনি যে চার্চে যাচ্ছিলেন, ওই চার্চে গমনকারীদের মধ্যে অন্তত ৩৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং আরও ৫২ জনের মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ভারতের এক বিদেশ প্রত্যাগত শিখ ধর্মগুরু সম্পর্কেও বহু লোককে সংক্রমিত করার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ভারত ও মালয়েশিয়ায় তাবলিগ জামাতের ইশতেমা থেকেও করোনা ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাবলিগের সমাবেশসমূহে অনেক বিদেশি মেহমানের অংশগ্রহণ থাকে। এ কারণে করোনা মহামারীর এ দুর্যোগকালে এ ধরনের সমাবেশ শুরু থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। দুর্ভাগ্যবশত তারা বাস্তব বুদ্ধির পরিচয় দিতে পারেননি। পাশ্চাত্যের করোনা সংক্রমণের এই যে ব্যাপক উল্লম্ফন তার পেছনেও শুরুতে বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে তাদের চিরাচরিত কায়দায় ক্লাব, রেস্তোরাঁ, পাব, বার, কনসার্ট ইত্যাদিতে ভিড় জমানো দায়ী বলে প্রতীয়মাণ হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সরকারগুলো দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল এবং বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশ, যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী, যখন করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর তা মোকাবিলা করতে নাকানিচুবানি খাচ্ছে, তখন আমরা তেমন পরিস্থিতিতে এটি সামাল দিতে পারব তেমনটি আশা করা বাতুলতা মাত্র। উন্নত দেশসমূহে ভেন্টিলেটরের স্বল্পতা উচ্চ মৃত্যুহারের অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এখানে আমাদের technical hand, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও স্থাপনা সব কিছুরই বিপুল ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে এ দেশে mass level-এ যদি সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে। বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরবে। কাজেই, আমাদের সামনে যে কোনো মূল্যে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোর কোনো বিকল্প নেই। আমরা একটি বিরাট সুযোগ হারিয়েছি। বিশ্বময় করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর যে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরেছে তাদের প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে বা হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা জরুরি ছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমরা যখন বিষয়টি বুঝতে পারি তখন এদের অধিকাংশই দেশে ঢুকে জনারণ্যে মিশে গেছেন। করোনার বিস্তার রোধ করতে হলে শুধু করোনা suspect-দের test না করে এসব বিদেশ প্রত্যাগতদের চিহ্নিত করে তাদের সবাইকে এবং সেই সঙ্গে যারা তাদের সংস্পর্শে এসেছে তাদেরও test -এর আওতায় আনা দরকার। এটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। গ্রামের সমাজবদ্ধ জীবনে সবাই সবাইকে চেনে। ওরা এগিয়ে এলে সহজেই বিদেশ প্রত্যাগতদের চিহ্নিত করা সম্ভব। এ ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজের পক্ষ থেকে ইতিবাচকভাবে handle করার নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে তারা নিজেরাই testing-এর জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। প্রয়োজনে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেশের স্বার্থে সহযোগিতা করার জন্য তাদের প্রতি একটি appeal করা যেতে পারে। করোনার বিস্তার ঠেকানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে social distancing নিশ্চিত করতে সরকার অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে সারা দেশে স্কুল-কলেজ অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে না আসায় প্রয়োজন মতো বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত, অনেকেই এ স্পিরিটটাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে ব্যর্থ হন। তারা ঈদের ছুটির মতো গাদাগাদি করে বাস-লঞ্চ-ট্রেনে গ্রামের বাড়ি গেছেন। এমন হতে পারে, এতে করে তারা ঢাকা শহর থেকে সারা দেশে করোনা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি ভূমিকা রাখলেন। সরকারি সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে মাঝখানে বিজিএমইএ গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলো খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় দেশব্যাপী এক হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যদিও ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিজিএমইএ পিছু হঠে, কিন্তু দেখা গেছে এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারী ঢাকার পথে রওনা হয়ে গেছেন। এই যে দল বেঁধে ঢাকার বাইরে যাওয়া, আবার দল বেঁধে ঢাকায় ফেরা, এসব social distancing নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ইতিমধ্যে যেমনটি বলেছি, করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা manage করা আমাদের জন্য দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য ঠেকানোই আমাদের জন্য একমাত্র এবং উত্তম বিকল্প। এতদুদ্দেশ্যে, সরকার যে স্কুল-কলেজ অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং প্রয়োজন মতো বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করছে তা যথার্থ। কিন্তু আমাদের মতো একটি দুর্বল অর্থনীতির দেশে, যেখানে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী দিন আনে দিন খায়, এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, মাস খানেকের মধ্যে সংক্রমণের প্রকোপতা স্তিমিত হয়ে আসবে; খোদা করুন, তেমনটি হলে তো আমাদের সবার জন্যই আনন্দের বিষয় হবে। কিন্তু আমাদের বিবেচনায় রাখা দরকার, বাস্তবে তেমনটি নাও হতে পারে। সুতরাং, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, ব্যাপক testing-এর মাধ্যমে করোনায় সংক্রমিত প্রতিটি ব্যক্তিকে শনাক্ত করা। এটি একটি দুরূহ লক্ষ্য এবং বর্তমানে RT-PCR-এর সাহায্যে যে পদ্ধতিতে testing হচ্ছে তাতে এ লক্ষ্য অর্জন প্রায় অসম্ভব। আমাদের RT-PCR-এর সংখ্যা ও test সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাব-এর স্বল্পতা আছে, sample collection I testing-এর জন্য দক্ষ জনবলেরও অপ্রতুলতা আছে। যদিও এ মুহূর্তে IEDCR ছাড়াও বেশ কিছু হাসপাতালে test হচ্ছে এবং দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে, তথাপি বিভিন্ন জায়গায় sample-এর স্তূপ জমছে বলে রিপোর্ট আসছে। Testing-এর sample হিসেবে nasopharyngeal swab collection-এর বিষয়টিও জটিল ও নিপুণ হাতের কাজ। Collection-এর সময় সংগ্রাহক নিজেও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। Sample collection-এর পর যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা না হলে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে। সর্বোপরি test-টি সময়সাপেক্ষ। এসব কারণে এই testing procedure যতই নির্ভুল ও কার্যকর হোক না কেন, সারা দুনিয়ায় তুলনামূলকভাবে সহজ ও কম সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য কাজ চলছে। গত কিছু দিনে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের প্রচেষ্টার রিপোর্ট এসেছে, তা নিশ্চয়ই আপনাদের দৃষ্টি এড়ায়নি। আমাদের testing সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতার এ প্রেক্ষাপটে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত testing কিটটি আমাদের কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে। এ কিটটি খুবই সহজ একটি পদ্ধতিতে কাজ করে। স্রেফ দুএক ফোঁটা রক্ত দরকার। ব্যস, আপনি ৫-১০ মিনিটের মধ্যে রেজাল্ট পেয়ে যাচ্ছেন। বলা হয়েছে, এটি Antigen ও Antibodz দুটোই শনাক্ত করতে সক্ষম। এটা সত্যি হলে তো সোনায় সোহাগা। এটা আপনাকে double testing-এর সুযোগ করে দিচ্ছে। সংক্রমণের পর শরীরে এন্টিবডি তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগে। এখন যেহেতু এই কিটটি এন্টিজেনও শনাক্ত করতে সক্ষম, আপনাকে আর এন্টিবডি তৈরি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না। এ মুহূর্তে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে test -এর আওতায় আনতে হলে আমাদের এমন একটা কিছুই তো চাই। কিটটির sensitivity নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা যদি সঠিকও হয়, এটাকে confirmative test হিসেবে না নিয়ে test -এর coverage বাড়ানোর জন্য চলমান RT-PCR  ভিত্তিক test -এর supplement হিসেবেও কাজে লাগানো যেতে পারে। এটা জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন, আত্মপ্রচার বা তর্কাতর্কির বিষয় নয়। এটা নিয়ে রাজনীতি করলে বা পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক করলে দেশ ও জাতির উপকার হবে না, ব্যক্তিবিশেষের কোনো লাভ হলেও হতে পারে। জাতীয় দুর্যোগের মুহূর্তে সব ধরনের সংকীর্ণতা পরিহার করে সবাই একাত্ম হয়ে কাজ করবেন, এটাই কাম্য নয় কি?

লেখক :  অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, জাবি।

সর্বশেষ খবর