রবিবার, ১০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রেসক্রিপশন

রমজানে সুস্থ থাকতে...

রমজানে সুস্থ থাকতে...

পবিত্র রমজান মাস চলছে। পাশাপাশি রয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক। এজন্য আমাদের খাবার তালিকা এমন হতে হবে যাতে আমরা করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সুস্থভাবে পবিত্র মাহে রমজানের সব রোজা পালন করতে পারি।

রমজান মাসে নন কমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষজন (কেউ কেউ) কিছুটা অস্বস্তিতে ভুগে থাকেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে যায়। পাশাপাশি এসব এনসিডিতে আক্রান্ত মানুষের করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকিও অনেক বেশি থাকে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস। তাহলেই রমজানে আমরা সুস্থ থাকতে পারব। বাড়াতে পারব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। রোজায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করলে সঠিক খাবার মেন্যু নির্ধারণ করতে পারলে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি রমজানে সুস্থ থাকতে পারব। রমজানে খাবার তালিকা কেমন হবে-

সাহরি : এবারের রোজা যেহেতু গরমকালে, সেহেতু প্রায় ১৪/১৫ ঘণ্টা আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তাই সাহরির খাবার এমন হওয়া উচিত যাতে সারা দিন পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়, পানিশূন্যতা এবং অ্যসিডিটি না হয়। সাহরিতে ভাত/রুটি, সবজি, মাছ বা মাংস, পাতলা বা মোটামুটি ঘন ডাল, শসা খাওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মসলাযুক্ত, ভাজা, ভুনা তরকারি খাওয়া যাবে না। এতে অ্যাসিডিটি বেড়ে যাবে। একটা বা দুইটা খেজুর খাওয়া যেতে পারে খাবার পর। এতে পরের দিন কাজে এনার্জি পাওয়া যাবে। দুর্বলতা কাজ করবে না। খাওয়ার শেষে টক দই খেতে পারেন। এতে খাবার হজম ভালোভাবে হবে এবং শরীরে পানিশূন্যতা হবে না। পানি পিপাসাও কম পাবে। এ ছাড়া টক দই হলো প্রোবায়োটিক। প্রোবায়োটিক আমাদের অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে যা আমাদের পরিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং শরীরে অন্য ক্ষতিকর জীবাণু সংক্রমণ রোধ করে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাহরির খাবার ফজরের আজানের ২৫/৩০ মিনিট আগে শেষ করতে হবে। এরপর বাকি সময়ে অল্প অল্প করে পানি পান করতে হবে। অনেকেই আজানের আগে খুব দ্রুত খাবার শেষ করে একসঙ্গে প্রচুর পানি পান করে যার কারণে আ্যসিডিটি বেড়ে যায়।

ইফতার : ইফতারে বেশির ভাগ মানুষ আমাদের ট্রেডিশনাল ভাজা পোড়া, তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতেই পছন্দ করে। যে কারণে অ্যাসিডিটি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রক্তে সুগার, কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায়। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে যদি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা না হয় তাহলে আমাদের ইমিউনো সিস্টেম দুর্বল হতে থাকে এবং সহজে করোনাসহ যে কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ইফতারে সামান্য চিনি দিয়ে লেবু, কমলা, মালটার জুস, ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। এতে রক্তে ব্লাড সুগার ঠিক থাকবে। পাশাপাশি এতে বিদ্যামান ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের চিনি দেওয়া শরবত না খাওয়াই উত্তম। আর খেলেও ১চা চামচের বেশি চিনি ব্যবহার করা যাবে না। ২/৩টা খেজুর খেতে পারেন যা ইন্সট্যান্ট এনার্জি জোগাবে। ডায়াবেটিস রোগীরা ১টার বেশি খেজুর খাবেন না। অল্প কিছু বাদাম, ডিম সিদ্ধ, নাট বাটার, সবজি-চিকেন স্যুপ, কম মিষ্টি পুডিং, সেদ্ধ ছোলা, দই-চিঁড়া, বিভিন্ন ফল মিশিয়ে দই দিয়ে ওটস, ফল, শসা খেতে পারেন। এসব খাবার যেমনি আপনাকে পুরো রমজানে সুস্থ রাখবে তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনার ঝুঁকিও কমাবে।

রাতের খাবার : রাতের খাবার যতটা সম্ভব হালকা করাই উত্তম। ভাত বা রুটি, মাছ বা মাংস, সবজি, ডাল বা বিনস চাইলে খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করতে হবে। অনেকে হালকা খাবার খেতে পছন্দ করেন। তারা স্যুপ, ওটসের খিচুড়ি খেতে পারেন। ঘুমানোর আগে, দুধ খেয়ে নিতে পারেন।

পানিশূন্যতা যাতে না হয় সেজন্য ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত ১০/১১ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

খাওয়া যাবে না

* চা, কফি না খাওয়াই উত্তম। এতে পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, আ্যসিডিটিসহ ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

* অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। এতে ক্ষুধামন্দা হয়।

* পিয়াজু, বেগুনি, চপ, হালিম, বিরিয়ানি, তেহারি খাওয়া যাবে না। তৈলাক্ত এসব খাবার রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ানোর পাশাপাশি ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই এ সময় এসব বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। কারণ প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

-উম্মে সালমা তামান্না, পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, ইবনেসিনা কনসালটেশন সেন্টার, বাড্ডা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর