মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে...

দরজার শক্ত হাতল লিফটের বাটন এবং কিচেন ওয়ার্কটপের মতো শক্ত জিনিসের গায়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। সহায়ক পরিবেশে সব ধরনের করোনাভাইরাস এক সপ্তাহও বেঁচে থাকতে পারে

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে...

ড্রপলেট কী : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় তার নাক ও মুখ দিয়ে যে জলীয় কণা বা ড্রপলেট বাতাসে বের হয়ে আসে তার মাধ্যমে কভিড-১৯ এর জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্র একবারের কাশি থেকেই বের হতে পারে এরকম তিন হাজার ড্রপলেট।

ড্রপলেটের এই কণা গিয়ে পড়তে পারে আরেকজনের গায়ে, কাপড়ে এবং আশপাশের জিনিসের ওপর। তবে কিছু ক্ষুদ্র কণা থেকে যেতে পারে বাতাসেও। এই ভাইরাস মলমূত্রের মধ্যে আরও বেশি সময় বাঁচে। টয়লেট থেকে ফিরে ভালো করে হাত না ধুলে তার হাতের স্পর্শের সাহায্যে আরও অনেক কিছুতেই এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম কোনো বস্তু স্পর্শ করার পর হাত দিয়ে যদি মুখ স্পর্শ করা হয় তাহলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। তবে এটিই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান উপায় নয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য কর্তৃপক্ষও বলছে, বারবার হাত ধুয়ে এবং একই সঙ্গে যেসব জিনিস ধরা হচ্ছে সেগুলো বারবার জীবাণুমুক্ত করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

করোনাভাইরাসের আয়ু  এখনোও পরিষ্কার নয় যে, কভিড-১৯ এর জীবাণু মানবদেহের বাইরে কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আরও যেসব করোনাভাইরাস আছে, যেমন সার্স ও মার্স, সেগুলো ৯ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আবার কোনো কোনো ভাইরাস ঠান্ডা জায়গায় ২৮ দিনও বেঁচে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের একজন ভাইরোলজিস্ট নিলৎজে ফান দেখেছেন, কোভ-২ বা সার্স ভাইরাস কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। তাতে দেখা গেছে, কাশি দেওয়ার পর থেকে ড্রপলেটের মধ্যে এই ভাইরাসটি তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ক্ষুদ্র ড্রপলেটে, যার আকার ১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার (মানুষের চুলের ৩০ গুণ চিকন) সার্স ভাইরাস কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, কোভ-২ ভাইরাস কাঠবোর্ডের মতো শক্ত জিনিসের ওপর ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে। * গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসকে এক মিনিটেই নিষ্ক্রিয় করে ফেলা যেতে পারে। ৬২-৭১% এলকোহল মিশ্রিত তরল পদার্থ দিয়ে জিনিসকে করোনামুক্ত করা যায়। * ০.৫ শতাংশ হাইড্রোজেন প্রিঅক্সাইড এবং ০.১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট মেশানো ব্লিচ দিয়েও করোনাভাইরাস নির্মূল করা সম্ভব। *উচ্চতাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণেও অন্যান্য করোনাভাইরাসের দ্রুত মৃত্যু হতে পারে। করোনাভাইরাস ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে না। কতক্ষণ বেঁচে থাকে কভিড-১৯ এর জীবাণু

* বিজ্ঞানীরা বলছেন, কভিড-১৯ এর জন্য দায়ী ভাইরাসটি কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে তা নির্ভর করে এটি কোন ধরনের বস্তুর গায়ে পড়েছে তার ওপর।

* দরজার শক্ত হাতল, লিফটের বাটন এবং কিচেন ওয়ার্কটপের মতো শক্ত জিনিসের গায়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। তবে এর আগের গবেষণায় দেখা গেছে, সহায়ক পরিবেশে সব ধরনের করোনাভাইরাস এক সপ্তাহও বেঁচে থাকতে পারে। * তবে কাপড়ের মতো নরম জিনিসের গায়ে এটি এত লম্বা সময় বেঁচে থাকতে পারে না। ফলে আপনি যে কাপড়টি পরেছেন এবং তাতে যদি ওই ভাইরাসটি থাকে, জামাটি একদিন কিংবা দুদিন না পরলে সেখানে ভাইরাসটি জীবিত থাকার আর সম্ভাবনা নেই। * ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম জিনিসে শুধু স্পর্শ করলেই আপনি আক্রান্ত হবেন না। শুধু স্পর্শ করার পর আপনি যদি হাত দিয়ে মুখ, নাক অথবা চোখ স্পর্শ করেন তাহলেই এই ভাইরাসটি আপনার শরীরে ঢুকে পড়বে। তাই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

লেখক : ডা. আলমগীর মতি, হারবাল

গবেষক ও চিকিৎসক।

সর্বশেষ খবর