মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা পরীক্ষায় কতটুকু নির্ভুল RT-PCR?

নমুনা সংগ্রহের প্রশ্নে আরেকটি এবং সম্ভবত অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কতটা দক্ষতা ও সতর্কতার সঙ্গে রোগীর কাছ থেকে নমুনাটি সংগ্রহ করা হয়েছে।

ড. মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন

করোনা পরীক্ষায় কতটুকু নির্ভুল RT-PCR?

মানব সভ্যতার চরম উৎকর্ষের এ যুগে করোনা মহামারীর আগমন যেন এক দমকা হাওয়ার মতো। হঠাৎ করেই যেন এক একটা জায়গায় হামলে পড়ছে আর সমাজ-সংসারের সবকিছু লন্ডভন্ড  করে দিচ্ছে। বিশ্বময় থমকে দাঁড়িয়েছে সব ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকা । এ এক হতবিহ্বল অবস্থা। কেউই বুঝে উঠতে পারছে না কোথায় এর শেষ, কখন ফের ফিরে আসবে সভ্যতার প্রাণস্পন্দন।

শত্রু যখন দৃশ্যমান, ও যত শক্তিমানই হোক, আপনি আপনার পরিকল্পনার ছক আঁটতে পারেনÑ আগাবেন না পেছাবেন। কিন্তু, এ রহস্যময়, অদৃশ্য দানব আপনাকে সর্বক্ষণ ধেয়ে বেড়াচ্ছে। এ যেন কোথাও নেই, অথচ সবখানেই আছে। আপনার ভাই, বন্ধু, পড়শি, কলিগ বা নিছক চলার পথের ক্ষণিকের সহযাত্রী কাউকেই আপনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রাখতে হচ্ছে। আপনি জানেন না কে বয়ে বেড়াচ্ছে এ মারণ জীব আর কখন কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে ছড়িয়ে দেবে আপনার শরীরে।

ভীষণ ছোঁয়াছে এ রোগের জন্য তাই আপাত পরিকল্পনা হলো, জনসমাগম পরিহার করুন, অন্যের কাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলুন, করোনা বহন করছে এমন প্রতিটি ব্যক্তিকে খুঁজে বের করুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষায়, ‘Test, Test & Test’ Ñএটাই এ মুহূর্তে করোনা মোকাবিলার দাওয়াই। কারণ, কেবল এভাবেই ব্যাপক পরিসরে রোগটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যেতে পারে। এই পরিকল্পনার আলোকে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু দেশ সংক্রমণ দেখা দেওয়ার শুরুতেই খুব দ্রুত আগ্রাসীভাবে ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় এবং এর ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভালো সাফল্য অর্জন করে। অন্যদিকে ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো শনাক্তকরণ কার্যক্রম ঢিমে তালে শুরু করায় রোগটি সমাজের ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং পরবর্তীতে শনাক্তকরণের হার বিপুলভাবে বাড়িয়েও তাদের জন্য এর লাগাম টেনে ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। দ্রুত শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা করোনা শনাক্তকরণের সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর Test Kit উদ্ভাবনের জন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শনাক্তকরণের জন্য অনুসৃত পরীক্ষা পদ্ধতিসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: Reverse-transcription polymerase chain reaction (RT-PCR) based tests এবং Serological or antigen-antibodz based tests| প্রথম পদ্ধতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনায় করোনাভাইরাসের RNA আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে দেখা হয় আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো এন্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা। কোনো ব্যক্তি যখন একটি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হন, তখন স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াতেই শরীরের Immune System এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে। এটাই এই পরীক্ষা পদ্ধতির ভিত্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) তার ০২ মার্চ, ২০২০-এর অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনায় করোনা সংক্রমণের Routine Diagnosis-G Nucleic Acid Amplification Test (NAAT)-সমূহ ব্যবহারের পরামর্শ দেয় এবং উদাহরণ হিসেবে RT-PCR-এর কথা উল্লেখ করে। এখন পর্যন্ত এটিই সারা বিশ্বে করোনা শনাক্তকরণে বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। তাহলে, আসুন, পদ্ধতিটি কীভাবে কাজ করে তার ওপর সংক্ষেপে একবার চোখ বুলিয়ে নিই। এ পদ্ধতিতে রোগীর নাসারন্ধ্রের পেছনে nasopharynx থেকে মিউকাস (nasopharyngeal swab) সংগ্রহ করে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে, বিকল্প হিসেবে কখনো মুখবিবরের পেছন থেকেও নমুনা (oropharyneal swab) নেওয়া হয়ে থাকে। পরীক্ষাগারে প্রথমে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত নমুনা থেকে ভাইরাসটির RNA পৃথক করে ফেলা হয়। RT-PCR পৃথকীকৃত RNA -কে Reverse Transcription প্রক্রিয়ায় DNA-তে রূপান্তরিত করে, অতঃপর প্রাপ্ত DNA-এর অংশ বিশেষকে polymerase chain reaction-এর সাহায্যে বহুগুণে বর্ধিত (amplify) করে এর মাত্রা এমন একটি পর্যায়ে উন্নীত করে যা মেশিন শনাক্ত করতে সক্ষম। রোগীর কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনায় যদি করোনাভাইরাস থাকে তাহলে এই বিক্রিয়া সংঘটিত হয় এবং পজিটিভ সিগন্যাল পাওয়া যায়; অন্যথায় এসবের কিছুই ঘটে না এবং ফলে কোনো সিগন্যালও পাওয়া যায় না।

করোনা শনাক্তকরণে RT-PCR পদ্ধতিটি gold standard হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ পদ্ধতির ওপর এই যে সবিশেষ আস্থা ও নির্ভরতা তার ভিত্তি কি এবং তা কতটুকু প্রণিধানযোগ্য? পত্রপত্রিকায় আপনি এমন অনেক রিপোর্ট দেখে থাকবেন, একই ব্যক্তি test-এ একবার -ve, আরেকবার +ve প্রমাণিত হচ্ছেন। তবে, এমনটি কেবল যে এখানেই ঘটছে তা নয়, সারা বিশ্বেই চিকিৎসকদের জন্য করোনা test-এর ফলাফলে এ ধরনের বিভ্রাট একটি জটিল সমস্যা রূপে আবির্ভূত হয়েছে। স্বয়ং চীনা ডা. লি ওয়েনলিয়াং যিনি সর্বপ্রথম বিশ্বকে এ রোগটির বিষয়ে জানান দেন এবং নিজেও আক্রান্ত হয়ে অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন, তিনি শনাক্ত হওয়ার আগে বেশ কয়েক বার তাঁর test-এর ফলাফল -ve আসে। Japanese Journal of Radiology-এর মে, ২০২০ সংখ্যায় প্রকাশিত এক কেস স্টাডিতে দেখা যায়, ৩৪ বছর বয়েসী এক ব্যক্তি RT-PCR test-এ Covid-19 +ve প্রমাণিত হওয়ার আগে পর পর চার বার তার রেজাল্ট -veআসে। আসলে যে কোন Diagnostic Test-এর ক্ষেত্রেই ফলাফলে অল্প-বিস্তর বিভ্রাট ঘটা স্বাভাবিক কিছু নয়। কোনো Diagnostic Test-এর কার্যকারিতা বিচারে দুটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয় : Specificity  ও Sensitivity । দেখা যাক, করোনা শনাক্তকরণে RT-PCR এ দুটি মানদন্ডে  কতটুকু উত্তীর্ণ। Specificity বলতে বুঝায়, পরীক্ষাটি কতটুকুু সুনির্দিষ্টভাবে ওই রোগটি নির্দেশ করতে সক্ষম; আলোচ্য ক্ষেত্রে এর মানে দাঁড়ায় সমগোত্রীয় অন্য কোনো ভাইরাসের সংক্রমণকে ভুলক্রমে Covid-19 হিসেবে নির্দেশ করার সম্ভাবনা কতটুকু। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘False +ve’ রেজাল্ট। এই মানদে  করোনা শনাক্তকরণে RT-PCR পদ্ধতির সক্ষমতা প্রায় ১০০%। অর্থাৎ পরীক্ষায় কোনো রোগী যদি পজিটিভ প্রমাণিত হন, তাহলে আপনি ১০০% নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, তার করোনা হয়েছেÑএটা ‘False +ve’ হওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোটায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. হারলান এম ক্রোমহোলজের ভাষায় : ‘আনন্দের বিষয়, এই পরীক্ষাগুলো খুবই specific। পরীক্ষায় আপনার রেজাল্ট যদি পজিটিভ আসে, এটা প্রায় নিশ্চিত যে, আপনার সংক্রমণ হয়েছে’ [The New York Times, 01 April, 2020]। করোনা শনাক্তকরণে RT-PCR Test নিয়ে যে উন্মাদনা তার ভিত্তিমূল এখানেই। পরীক্ষায় কেবল তখনই ‘False +ve’ রেজাল্ট আসতে পারে, যদি ভুলক্রমে কোনোভাবে অসংক্রমিত ব্যক্তির নমুনার সঙ্গে সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনা মিশে যায়। Sensitivity বলতে বোঝায় একটি নমুনায় যদি আসলেই ভাইরাস থাকে, তাহলে তা নির্ণয়ে এ পরীক্ষার সামর্থ্য কতটুকুু; অন্যভাবে বলা চলে, নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয়ে ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা কত শতাংশ। এ ধরনের ভুল ফলাফলকে ‘False -ve’ রূপে অভিহিত করা হয়। এই মানদন্ডে  RT-PCR Test অতটা উত্তীর্ণ নয়। Ghver বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, RT-PCR Test 15-30% ‘False -ve’ রিপোর্ট দিতে পারে। সুতরাং, আপনি পরীক্ষায় নেগেটিভ প্রমাণিত হলেই আপনার করোনা সংক্রমণ হয়নি এমনটি নিশ্চিত রূপে ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। করোনা শনাক্তকরণে এ ধরনের ‘False -ve’ রেজাল্ট মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। একদিকে এর ফলে সংক্রমিত ব্যক্তি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন, অন্যদিকে উনি নিজেকে সংক্রমণমুক্ত জেনে অন্যদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মিশে তাদেরও সংক্রমিত করতে পারেন। এখন এ ধরনের ‘False -ve’ রেজাল্ট আসাটা যদি একটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে করণীয় কী? যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের Congenial Health নামক সংস্থার প্রধান ডা. অ্যালাইন চাউই The Boston Globe কে বলেন, ‘আমার অনেক রোগী, যাদের লক্ষণাদি দেখে Covid-19-এ আক্রান্ত বলে মনে হয়, পরীক্ষায় নেগেটিভ আসছে।’ এ কারণে তাঁর যে সব রোগী পরীক্ষায় নেগেটিভ প্রমাণিত হচ্ছেন, তিনি তাদের সবাইকে, পরীক্ষার ফল যাই হোক, নিজেদের পজিটিভ বিবেচনা করার এবং অন্তত ৭২ ঘণ্টা উপসর্গমুক্ত না থাকলে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। ডা. ক্রোমহোলজও নিউইয়র্ক টাইমসে একই রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন : ‘বর্তমান সময়ের জন্য আমাদের মনে করতে হবে, যে কেউই ভাইরাসটি বহন করতে পারেন। যদি আপনি ভাইরাসটির সংস্পর্শে এসেছেন বলে মনে হয় এবং আপনার লক্ষণাদি Covid-19 সংক্রমণের সম্ভাবনা নির্দেশ করে, তাহলে ধরে নিন আপনি সংক্রমিত হয়েছেনÑএমনকি আপনার পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসে থাকলেও।’ ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস মেমোরিয়াল মেডিকেল সেন্টার ইন উরচেস্টারের এপিডেমায়োলজিস্ট ডা. রিচার্ড এলিসন The Boston Globe কে বলেন, ‘False -ve’ কমিয়ে আনার জন্য যে সব রোগী নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণাদি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল দিচ্ছেন, হাসপাতাল তাদের পুনরায় পরীক্ষা করছে। অর্থাৎ এ ধরনের সিচুয়েশনে চিকিৎসকের জন্য একটি অপশন হলো re-testing। তবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তাররা ফুসফুসে সংক্রমণের কেমনতর চিহ্ন দেখা যায় তা পরীক্ষণের জন্য বুকের X-ray বা CT scan -এরও সাহায্য নিচ্ছেন। প্রশ্ন আসতে পারে, Sensitivity -এর বিচারে RT-PCR -এর এই যে সীমাবদ্ধতা তার অন্তর্নিহিত কারণ কী? এটা কি মেশিন বা পরীক্ষা পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা, নাকি ব্যবহৃত নমুনার ত্রুটির ফল? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরীক্ষায় ব্যবহৃত রিএজেন্টসমুহ যদি ত্রুটিমুক্ত হয় এবং পরীক্ষাটি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে এ পদ্ধতিতে Sensitivity -এর প্রশ্নেও শতভাগ সাফল্য আসার কথা। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-মেডিসনের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ UW Health -এর চিফ কোয়ালিটি অফিসার ডা. জেফ পোটহফ বলেন, ‘এটা আসলেই খুব ভালো একটি পরীক্ষা। এতটাই ভালো যে, নমুনা থেকে আমরা যদি একটি RNA strand-I  পাই, রেজাল্ট আসতে পারে’ [Slate Magazine, 06 April, 2020]। সুতরাং সমস্যাটা আসলে ল্যাবে নয়, ল্যাবে পরীক্ষার জন্য যে নমুনা প্রেরিত হচ্ছে তাতে। নমুনায় যদি ভাইরাসই না থাকে, PCR শনাক্ত করবে কী?

নমুনা যদি ত্রুটিপূর্ণ হয়, তাহলে এ ত্রুটি নমুনা সংগ্রহ, এর পরিবহন, সংরক্ষণ কিংবা প্রসেসিং যেকোনো পর্যায়েই ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বিশেষভাবে নমুনা সংগ্রহের প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। এখানে একটি দিক হলো, আপনি সংক্রমণের কোন পর্যায়ে রোগীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন। দেখা গেছে, অনেক রোগীর কাশি ও জ্বরের মতো সুস্পষ্ট উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও প্রথমে পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল দিচ্ছেন, পরবর্তীতে পুনঃপরীক্ষায় পজিটিভ প্রমাণিত হচ্ছেন। হতে পারে, প্রথমবার নমুনা সংগ্রহের সময় আপনার সংক্রমণ খুব প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল এবং এ কারণে আপনার পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। আসলে Covid-19 -এর incubation period -টা বেশ দীর্ঘ এবং একটি নতুন রোগ হওয়ায় সংক্রমণের ঠিক কোন পর্যায়ে একজন রোগীর test -এ পজিটিভ ফলাফল আসার সম্ভাবনা বেশি সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যউপাত্ত নেই। তবে, এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাথলজি অ্যান্ড ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ওমাই গার্নার একটি আইডিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে সব রোগীর তিন থেকে পাঁচ দিন ধরে উপসর্গ (বিশেষ করে জ্বর ও কাশি) রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পরীক্ষাটি সবচেয়ে কার্যকর বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। যাদের কোনো উপসর্গ নেই তাদের ক্ষেত্রে পরীক্ষাটি কতটা ভালো কাজ করবে কিংবা যারা এরই মধ্যে সেরে উঠতে শুরু করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এটির ওপর কতটুকু

নির্ভর করা যায়, তা বলা মুশকিল

((Slate Magazine,

06 April, 2020) ।

নমুনা সংগ্রহের প্রশ্নে আরেকটি এবং সম্ভবত অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কতটা দক্ষতা ও সতর্কতার সঙ্গে রোগীর কাছ থেকে নমুনাটি সংগ্রহ করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি সরু, নমনীয় কাঠির মতো জিনিস, যার আগায় তুলোর মতো করে নাইলন বা ফোম জড়ানো থাকে, নাসারন্ধ্রের অনেক পেছনে pharynx পর্যন্ত ঢুকাতে হয়। এটা কোনো সহজ কাজ নয়, এমনকি একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মীর জন্যও। এ ছাড়া নমুনা সংগ্রহকালে রোগী ব্যথা পেয়ে এদিক ওদিক নড়াচড়া করতে পারেন। দক্ষ জনবলের স্বল্পতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের কাজের জন্য যথার্থ প্রশিক্ষণ নেই এমন লোক দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। এহেন অবস্থায় সংগৃহীত নমুনায় যদি ভাইরাসটি উঠে না আসে তাতে অবাক হওয়ার কিছু আছে কি? ল্যাবে যখন এরকম একটি নমুনা পরীক্ষণের জন্য আসে যাতে আসলে ভাইরাসই নেই, তখন RT-PCR যতটুকুই sensitive হোক না কেন, তাতে কিইবা আসে যায়? ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ড্যাভিসের অ্যাসোসিয়েট ক্লিনিক্যাল প্রফেসর ড. ন্যাম ট্রানের ভাষায় : ‘If the sample is junk, just to be blunt, you are not going to find anything, ‘ [Slate Magazine, 06 April, 2020] ।’

প্রিয় পাঠকুল! উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, করোনা শনাক্তকরণে পরিচালিত পরীক্ষাসমূহের সাফল্য ব্যর্থতা নির্ধারণে সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, একটি সফল Diagnostic Test-এর সাফল্যের শুরুটা হয় নমুনা সংগ্রহ থেকেই। নমুনা যদি সঠিকভাবে সংগৃহীত না হয়, তাহলে নমুনা সংগ্রহ থেকে পরীক্ষণ পর্যন্ত পুরো আয়োজনটাই প শ্রমে পর্যবসিত হয়। এতে করে বহু সংক্রমিত লোক পরীক্ষায় ভুলক্রমে সংক্রমণমুক্ত বলে চিহ্নিত হন এবং সমাজে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে থাকেন। কাজেই, শুধু Test-এর আওতা বাড়ানো যথেষ্ট নয়, নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য পর্যাপ্তসংখ্যক দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ দেওয়াও জরুরি। পত্রপত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, এ মুহূর্তে দেশে বিপুলসংখ্যক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। তাদের কীভাবে জরুরি ভিত্তিতে কাজে লাগানো যায় তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে।

লেখক : অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর