সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
জেনে রাখা ভালো

করোনাভাইরাস ও কিছু কথা

করোনাভাইরাস ও কিছু কথা

গোটা বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ২ কোটি ৩৩ লাখ করোনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়েছে। এ ভাইরাসটি কতটা ভয়ঙ্কর এবং কীভাবে ছড়ায়, তা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। করোনাভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি এক ধরনের করোনাভাইরাস। ভাইরাসটির অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র সাতটি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভিতরে ইতিমধ্যে ‘মিউটেট করছে’, অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। ফলে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ইতিমধ্যে গোটা বিশ্বে তা প্রমাণিত।

কতটা ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস : এ ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। তবে এর পরিণামে অরগান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। এ ভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর, তা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। এক দশক আগে সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়েছিল আট হাজারের বেশি মানুষ। আর একটি ভাইরাসজনিত রোগ ছিল মিডল ইস্টার্ন রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স। ২০১২ সালে এতে মৃত্যু হয় ৮৫৮ জনের।

করোনাভাইরাসের লক্ষণ কী : করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তখনই কোনো কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

কীভাবে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস : মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। তবে ঠিক কীভাবে এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সম্ভবত কোনো প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোনো মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। এর আগে সার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢোকার নজির রয়েছে। আর মার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল উট থেকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে উহান শহরে সামুদ্রিক একটি খাবারের কথা বলা হচ্ছে। একটি বাজারে গিয়েছিল এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো, কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন বেলুগা জাতীয় তিমি করোনাভাইরাস বহন করতে পারে। তবে উহানের ওই বাজারে বাদুড় এবং সাপও বিক্রি হতো।

চিকিৎসা : ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই এর কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে আশার কথা হল, বেশ কয়েকটি দেশ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান  ইতিমধ্যে এ ভাইরাসটির প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছে। এমনকি কয়েকধাপে ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে তাদের। এ দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে রাশিয়া এবং চীন। ইতিমধ্যে তারা এ টিকা নিয়ে বেশ কিছু ঘোষণাও দিয়েছে। এছাড়া অক্সফোর্ডও তাদের ট্রায়াল অনেক দূর সম্পন্ন করেছে। চূড়ান্ত প্রয়োগের জন্য এখন শুধুই অপেক্ষা। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে মানুষকে নিয়মিত হাত ভালোভাবে ধোয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছে তারা। এশিয়ার বহু অংশের মানুষ সার্জিক্যাল মুখোশ পরা শুরু করেছে। আপাতত প্রতিকার হিসেবে এ ভাইরাসবহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। ডাক্তারদের পরামর্শ, বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা ও ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্যাব্রিয়েল লিউং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এ নির্দেশনায় বলছেন, হাত সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, বারবার হাত ধুতে হবে। হাত দিয়ে নাক বা মুখ ঘষবেন না, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরতে হবে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে মুখোশ পরুন, আর নিজে অসুস্থ না হলেও, অন্যের সংস্পর্শ এড়াতে মুখোশ পরুন।’ তাই অবহেলা না করে এ সময়টা আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

-ডা. এম ইয়াছিন আলী, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর