রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রয়োজন মানসিক সুস্থতা

ব্রিগে. জে. (অব.) অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম

প্রয়োজন মানসিক সুস্থতা

সম্প্রতি পালিত হলো বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালন করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য; স্বাস্থ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানসিক সুস্থতা ছাড়া প্রকৃত এবং বাস্তবিক সুস্থতা সম্ভব নয়। প্রশ্ন উঠতে পারে মানসিক স্বাস্থ্যকে কেন গুরুত্ব দিতে হবে?

মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিম্নরূপ-

১। বিশ্বের প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন।

২। প্রতি চারজন মানুষের একজন জীবনের যে কোনো পর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারেন।

৩। প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন মানসিক রোগে ভুগতে পারে।

৪। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ ভাগ মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন, তা জটিল কিংবা মৃদু মানসিক রোগ হোক না কেন।

৫। বিশ্বের সব ধরনের অসুস্থতার বোঝার শতকরা ১৩ ভাগই মানসিক স্নায়বিক ও মাদকাসক্তি নিয়ে।

৬। এছাড়া বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৮ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যায় মৃত্যুবরণ করে, যার মূল কারণ মানসিক রোগ।

৬। মানসিক সমস্যা বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।

৭।  যে কোনো ব্যক্তি, যে কোনো সময়, যে কোনো মানসিক রোগে ভুগতে পারেন। কেউ মানসিক রোগ থেকে নিরাপদ (Immune) নন।

৯।  এসডিজি, অনুযায়ী সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

১০। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার।

১১। শুধু বিষণœতা রোগটি বিশ্বের সব রোগের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ।

খ. এবছরের প্রতিপাদ্য ছিল- (Mental Health for all- greater investment, greater access) সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য- অধিক বিনিয়োগ, অবাধ সুযোগ”।

গ. মানসিক স্বাস্থ্য চিরকালই অবহেলিত হয়ে আসছে। কিঞ্চিত বিনিয়োগের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য খাত রয়ে গেছে অনাদৃত, পশ্চাৎপদ ও অবহেলিত। তাই প্রয়োজন, এই খাতে অধিক বিনিয়োগ। অধিক বিনিয়োগের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে যেভাবে প্রাদপ্রদীপের আলোর দিকে আনা যায়, তাহলো- ১। সবার মাঝে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। স্থানীয় সরকার, তথ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশু ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় সবার  সমন্বিত প্রয়াস জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

২। কুসংস্কার দূর করে মানসিক রোগের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার বিষয়টি সবার কাছে পৌঁছাতে হবে।

৩। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিশেষ করে উপজেলা ও কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

৪। বিশেষ শিশুদের (অটিজম, বিভিন্ন প্রতিবন্ধী) প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা, জীবনযাপনের জন্য অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

৫। সব জেলা হাসপাতালে মানসিক রোগ চিকিৎসার আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করতে হবে

৬। এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের নিমিত্তে আরও বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭। মেডিকেল চিকিৎসার স্নাতক পর্যায়ে পাঠ্যক্রমে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে তা সমৃদ্ধ করতে হবে

৮। শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্কুল পর্যায়ে পাঠ্যসূচিতে এ বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান দেওয়া যেতে পারে।

৯। মাদকাসক্তি চিকিৎসার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চিকিৎসার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

১০। ধর্মীয় শিক্ষক, শিক্ষক, গ্রামের মাতব্বর, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবহার উন্নয়নের জন্য সম্পৃক্ত করতে হবে।

১১। উন্নত প্রশিক্ষণ ও সেবা প্রদানের জন্য প্রতি বিভাগে আলাদা মানসিক হাসপাতাল নির্মাণ জরুরি

ঘ। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নতির জন্য প্রয়োজন অধিক বিনিয়োগ ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। অধিক বিনিয়োগের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারলেই মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব হবে। লেখক : মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর