শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ

প্রতিকার না প্রতিরোধ?

ডা. শাহজাদা সেলিম

প্রতিকার না প্রতিরোধ?

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনট্ িডায়াবেটিস সেবায় পার্থক্য গড়ে দেন নার্সিং-এ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হচ্ছে এবার। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন এ দিবসটির উদ্যোক্তা, জাতিসংঘ এ দিবসটির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে; তাই পৃথিবীর সব ক’টি দেশ  প্রত্যেক বছর ১৪ নভেম্বর দিবসটি পালন করে আসছে। আশা করা হচ্ছে, এটি আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন তাল মিলিয়ে সব দেশের নীতিনির্ধারকমন্ডলী তাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা উন্নয়ন কাঠামো তৈরি করবে। ডায়াবেটিস পৃথিবীতে মহামারী আকারে বিরাজ করছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসাব মতে, ২০১৯ সালে প্রতি ১১ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল (মোট ৪২৫ মিলিয়ন); ২০৪৫ সালে ৪৮ শতাংশ বেড়ে তা ৬২৯ মিলিয়ন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পৃথিবীর মোট ডায়াবেটিস রোগীর ৮৭ শতাংশই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে বসবাস করছেন।

বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম। কিন্তু আরও ভয়াবহ হলো ২০৩০ ও ২০৪৫ সালে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকবে। পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে উচ্চহারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে। বাংলাদেশসহ সব উন্নয়নশীল দেশে খুব দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে, মানুষের দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে আনুপাতিক ও কাক্সিক্ষত হারের চেয়ে বেশি, মানুষের দৈহিক শ্রম দিনে দিনে কমে যাচ্ছে, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে মানসিক চাপ বেড়েছে অনেকগুণ। উন্নত দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর হার কমলেও তবে তা খুব উল্লেখযোগ্য হারে নয়। অঞ্চল ভেদে মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কিছুটা চরিত্রগত ভিন্নতা রয়েছে। এ এলাকায় প্রধানত টাইপ-২ ও অন্যান্য বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় প্রথমবার ডায়াবেটিস ধরা পড়ার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে এ এলাকার দেশসমূহে। উন্নত দেশে মহিলাদের বেশি সংখ্যায় টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগতে দেখা যায়, আর উন্নয়নশীল দেশে পুরুষরা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে বেশি সংখ্যায় ভোগেন। বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। আগের তথ্যটি কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বৈশিষ্ট্যেরই প্রকাশ ঘটায়। যেমন- খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক শ্রম বা ব্যায়াম, আনুপাতিক হারে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অবস্থায় কিছুটা ভিন্নতর ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ/অভ্যাস দেখা যায়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় ভোগার হার এবং প্রাবল্যও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম।

এ বিপুল সংখ্যক ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা ও আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করতে এখনই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যেটিকে প্রতিরোধ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে, কিন্তু একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে বাকি জীবন ডায়াবেটিস নিয়েই কাটাতে হবে এবং প্রহর গুনতে হবে যে, কখন ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতাগুলো দেখা দেয়। তাই সব স্তরের মানুষকে জেনে বুঝে সচেতনভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কর্মযজ্ঞে নিজের সামর্থ্য অনুসারে অংশগ্রহণ করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে, নতুন নতুন ওষুধ যেমন আবিষ্কৃত হয়েছে, তেমনই প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার কৌশলও পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু সব কর্মকান্ডের কেন্দ্রে আছেন বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগী ও যাদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা আছে। 

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস চিকিৎসা যেমন জরুরি, তার চেয়েও বেশি জরুরি ডায়াবেটিস প্রতিরোধের সর্বাত্মক সুগভীর কর্মকান্ড।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর