শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

গিলবার্টস সিন্ড্রোম জন্ডিস

গিলবার্টস সিন্ড্রোম জন্ডিস

গিলবার্টস সিন্ড্রোম জন্ডিস অক্ষতিকর,  পারিবারিক, মৃদু জন্ডিস যেখানে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ১-৫ মি.গ্রা./ডি.এল এর বেশি নয় এবং সঙ্গে লিভারের কার্যক্ষমতা ও গঠন অক্ষুণ্ণ থাকবে। মোট জনসংখ্যার ২-৫ শতাংশ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত হঠাৎ করেই ধরা পড়ে রুটিন মেডিকেল চেকআপের সময় কিংবা অন্য কোনো কারণে রক্ত পরীক্ষার সময়।

এ রোগের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত ভালো কেননা এতে লিভারের ক্ষতি কিংবা জীবনহানির কোনো শঙ্কা নেই। এতে জন্ডিস সাধারণত মৃদু এবং আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে (যেমন- দীর্ঘ সময় ধরে অভুক্ত অবস্থায় থাকলে, অত্যধিক কায়িক শ্রমের জন্য, জ্বর অথবা কোনো ইনফেকশনের কারণে), সেই সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা, বমি বমি ভাব এবং প্রায়ই পেটের উপরিভাগে ডান দিকে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। এছাড়া শরীরে আর কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায় না। এ রোগে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো-১) লিভারে গ্লুকোরনাইডেশনের ঘাটতি ২) গ্লুকোরনাইল ট্রান্সফারেজ এনজাইমের ঘাটতি ৩) লিভারের বিলিরুবিন সংগ্রহে ঘাটতি কিংবা ৪) গুপ্ত অবস্থায় রক্তের লোহিত কণিকার ভেঙে যাওয়া ‘ক্যালরি ডেপ্রাইভেশন টেস্ট’ নামে একটি বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগটি সুন্দরভাবে নির্ণয় করা যায়। এতে অভুক্ত অবস্থায় রক্তে ইন্ডাইরেক্ট বিলিরুবিনের মাত্রা অনেকাংশে (> ১১০%) বেড়ে যায় আবার ভুক্ত অবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই (>৬০%)  থাকে। রক্তে লিভারের অন্যান্য এনজাইমগুলো স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে যেমন SGPT, SGOT, Alkaline phosphatase। লিভারের গঠন অর্থাৎ Histology স্বাভাবিক থাকে। রোগীর দেহে জন্ডিস ছাড়া অন্য কোনো ধরনের লক্ষণ উপসর্গ থাকে না। প্রস্রাবের রং স্বাভাবিকই থাকে (তবে কিছুক্ষণ রেখে দিলে পরে হলুদ বর্ণ ধারণ করে) কেননা এক্ষেত্রে প্রস্রাবে বিলিরুবিন আসে না। গিলবার্টস রোগীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন এবং স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল লাভ করেন। চিকিৎসা বলতে রোগীকে রোগটি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেওয়া এবং একই সঙ্গে তাকে আশ্বস্ত করাই হলো মূল লক্ষ্য। অন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। গিলবার্টস সিন্ড্রোমের জন্ডিস হলো সারা জীবনের জন্ডিস এবং এটা কোনো রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, শুধু অভুক্ত অবস্থায় বেড়ে যায়। রোগীকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয় যে কোনো ইনফেকশন, ঘন ঘন বমি এবং কোনো বেলায় খাবার খেতে ভুলে গেলে জন্ডিস বেড়ে যেতে পারে। গিলবার্টস সিন্ড্রোমের পরিণতি খুবই ভালো;

এতে কোনো চিকিৎসা লাগে না তবে যথাযথ রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. এম সাঈদুল হক, সহকারী অধ্যাপক,

গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।

 

সর্বশেষ খবর