মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

হলুদ ছত্রাক : সবচেয়ে আধুনিক সর্বাপেক্ষা প্রাণঘাতী

ডা. ফারহানা হক

হলুদ ছত্রাক : সবচেয়ে আধুনিক সর্বাপেক্ষা প্রাণঘাতী

বিশ্বজুড়ে করোনার থাবা গ্রাস করে নিয়েছে কোটি কোটি প্রাণ। করোনার এ আতঙ্কের মধ্যে মৃত্যু আরও এক আতঙ্ক রোগ দিয়েছে ফাঙ্গাস/ছত্রাক। কালো এবং সাদা ফাঙ্গাসের সঙ্গে সম্প্র্রতি আরও একটি নাম আমাদের আতঙ্কিত করে তুলছে এটি হলো হলুদ ফাঙ্গাস। (Yellow Fungces) ভারতে বিরল ছত্রাকজনিত এ রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে কালো ও সাদা ছত্রাক সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত জেনে নিই :

কালো ফাঙ্গাস/ছত্রাক : ভারতে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি কালো ছত্রাকে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এটি নাক, মুখ, চোখের কক্ষপথ-মস্তিষ্ক এবং ফুসফুস আক্রমণ করতে পারে। কভিড আক্রান্ত ব্যক্তি, ডায়াবেটিস এবং দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড চিকিৎসাধীন রোগীদের ক্ষেত্রে এটি সংক্রমণের বেশি ঝুঁকি রয়েছে। এটি দেহের রক্তনালির ভিতর প্রবেশ করে, কোষ আক্রমণ করে তাই চিকিৎসা নিতে বিলম্ব হলে এটি রোগীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

সাদা ছত্রাক : ভারতে কালো ছত্রাকের তুলনায় সাদা ছত্রাক সংক্রমণের হার অনেক কম। এর লক্ষণগুলোর সঙ্গে কভিডের লক্ষণগুলোর অনেক সাদৃশ্য আছে। যেমন শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশি, মাথাব্যথা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস কিংবা ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং দীর্ঘায়িত স্টেরয়েড ব্যবহারকৃত ব্যক্তিদের বেশি ঝুঁকি আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

হলুদ ছত্রাক : হলুদ ছত্রাকের মেডিকেল নাম ‘মিউকর সেপটিকাস’। আগে এটি সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর দেহে সংক্রমণ ঘটাত। অন্যান্য ছত্রাকের মতো এটিও দূষিত পরিবেশে বিস্তার লাভ করে। সন্দিহান রোগীদের ক্ষেত্রে দূষিত বাতাস থেকে মিউকর মোল্ড গ্রহণের মাধ্যমে এটি তাদের দেহে প্রবেশ করতে পারে। সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে এটি অন্যান্য ছত্রাক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী। কালো ছত্রাকের আক্রমণে দেহের পরিবর্তন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলুদ ছত্রাক দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহে আক্রমণ শুরু করে। দেহের গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক প্রক্রিয়াগুলোর ব্যাঘাত ঘটিয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। শুরুতে হজমে ব্যাঘাত, ক্ষুধামন্দা ও অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস প্রকাশ পেলেও গুরুতর অবস্থায় চোখ কোটরে ঢুকে যায়। শক্তি হ্রাস ও অলসতা দেখা দেয়, ক্ষত থেকে পুঁজ নিঃসরণ ও বিলম্ব আরও গুরুতর অবস্থায় কোষমৃত্যু (Nocrosis) ঘটে। অন্যান্য ছত্রাকের মতো হলুদ ছত্রাক ও উচ্চমাত্রার আর্দ্রতা বা পুরনো দূষিত খাবারের উপস্থিতির মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতে পারে। দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এটি সংক্রমণের প্রধানতম কারণ। তবে অন্যান্য ছত্রাকের মতো এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। তবে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল দেহে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হ্রাস করে। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে হলুদ ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকিও বহুগুণ বেশি থাকে। তবে যেসব ব্যক্তি কভিড থেকে সেরে উঠেছেন এবং তাদের মধ্যে যাদের দীর্ঘদিন অক্সিজেন ব্যবহার কিংবা দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড ব্যবহারের ইতিহাস আছে তাদের ক্ষেত্রে এটি সংক্রমণের অধিক ঝুঁকি রয়েছে।

এ ছাড়াও ঝুঁকির তালিকায় আছেন : যেসব ব্যক্তি দীর্ঘদিন নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (ICU)তে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সম্প্রতি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জটিলতায় ভুগছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি/ডায়ালাইসিসে নির্ভরশীল রোগী। ছত্রাকজনিত রোগগুলো প্রতিরোধ করতে বাড়ি, হাসপাতাল সর্বত্র নির্বীজন/জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত জরুরি। অক্সিজেন থেরাপি গ্রহণের আগে লক্ষ্য রাখতে হবে ভালোভাবে ফিল্টার করা হয়েছে কিনা। স্টেরয়েড এবং এ জাতীয় ওষুধের নির্বিচার ব্যবহার কমাতে হবে। অধিকন্তু ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের অকারণে ঝুঁকি নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। মাস্ক সঠিক নিয়মে পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পিএইচডি গবেষক।

সর্বশেষ খবর