মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

হেপাটাইটিস নিয়ে আরও কিছু কথা

হেপাটাইটিস নিয়ে আরও কিছু কথা

[পূর্ব প্রকাশের পর] পাঁচ ধরনের হেপাটাইটিসের মধ্যে B এবং C মারাত্মক। পরিণতিতে লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার এবং লিভার ফেইলিউর হতে পারে। হেপাটাইটিস A, D এবং E তেমন মারাত্মক না হলেও কেউ এগুলোতেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে ওঠতে পারে। হেপাটাইটিস A সচরাচর Acute বা তাৎক্ষণিক স্বল্প সময়ের জন্য হয়। কিন্তু হেপাটাইটিস B এবং C হয় Chronic বা দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য। হেপাটাইটিস D হয় তাদের, যাদের দেহে কেবল হেপাটাইটিস B ভাইরাস থাকে। কারণ হেপাটাইটিস D ভাইরাস B ভাইরাসের মধ্যে ঢুকে বেঁচে থাকে। হেপাটাইটিস E দীর্ঘকালীন না থাকলেও A এর চেয়ে বেশিদিন Acute অবস্থায় থাকে।

ভাইরাল হেপাটাইটিসের মধ্যে A এবং E টাইপ মানুষের মলমূত্র দিয়ে পানি বা খাবারের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশ করে। B, C এবং D টাইপ রক্ত, বীর্য এসবের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। হেপাটাই-টিসের প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে Baruch Blumberg 1969 হেপাটাইটিস B এর ভ্যাকসিন তৈরি করেন। এটার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারও পান। তখনো পর্যন্ত হেপাটাইটিস A ভাইরাস সম্পর্কে ভালো না জানায় আরও দেরিতে ১৯৯৫ সালে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানি A ভাইরাসের ভ্যাকসিন বাজারে নিয়ে আসেন। একুশ শতকের শুরুর দশকে হেপাটাইটিস E ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলেও এখনো পর্যন্ত চীন ছাড়া অন্য কোথাও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নয়। চীন ২০১২ সাল থেকে E এর ভ্যাকসিন চালু করে। এখনও পর্যন্ত হেপাটাইটিস C এর কোনো ভ্যাকসিন নেই কোথাও। হেপাটাইটিস B এর ভ্যাকসিন দেওয়া থাকলে তা D ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা এখন আট বিলিয়ন। তার মধ্যে আড়াই বিলিয়নের ওপরে মানুষ বিভিন্ন ধরনের হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। প্রতি চারজনে একজন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হেপাটাইটিস B-এ। প্রায় দুই বিলিয়নের ওপরে। এর পরে বেশি আক্রান্ত হয় হেপাটাইটিস C ভাইরাসে। প্রায় ১৮০ মিলিয়ন মানুষ C ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিবছর ৪০০ মিলিয়নের ওপরে নতুন করে হেপাটাইটিস B এবং C-এ আক্রান্ত হয় বিশ্বব্যাপী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর দেড় মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস A তে আক্রান্ত হয়। বিশ্বে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২০ মিলিয়নের বেশি। সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস D-এ আক্রান্ত ১৫ মিলিয়নের ওপরে এবং E-আক্রান্তের সংখ্যা ২০ মিলিয়নের বেশি। বছরে বিশ্বব্যাপী ১.৬ মিলিয়নের ওপরে মারা যায় বিভিন্ন ধরনের হেপাটাইটিসে। এদের ৯০% মারা যায় ভাইরাল হেপাটাইটিসের কারণে। বাকি ১০ ভাগ অন্য সব কারণে।

প্রতিবছর দেড় মিলিয়ন মানুষ মারা যায় ভাইরাল হেপাটাইটিসের কারণে। এদের মধ্যে হেপাটাইটিস B এর কারণে পাঁচ বছর আগে মারা যেত এক মিলিয়নের ওপরে। বর্তমানে বছরে মারা যায় আধা মিলিয়ন বা পাঁচ লাখের ওপরে। তিন লাখের ওপরে মারা যায় C ভাইরাসের কারণে। ৯০ ভাগ হেপাটাইটিস A-তে আক্রান্ত হয় ১০ বছর বয়সের মধ্যে। বছরে ৪০ হাজারের ওপরে মারা যায় হেপাটাইটিস E এর কারণে। বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্তের শতকরা ৬০ ভাগ এশিয়া মহাদেশে। আবার তার সিংহভাগ সাউথ ইস্ট এশিয়াতে। অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার কারণে এ ৬০ ভাগের অর্ধেক জানেও না যে তাদের দেহে এ ভাইরাস আছে। হেপাটাইটিস A হয় Acute বা তাৎক্ষণিক। ভাইরাস শরীরে ঢুকে কয়েকদিন দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লিভারকে আক্রান্ত করে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ করে।

ডা. অপূর্ব চৌধুরী, ইংল্যান্ড প্রবাসী চিকিৎসক।

সর্বশেষ খবর