মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন আতঙ্ক ডেঙ্গু

ডা. গুলজার হোসাইন উজ্জ্বল

নতুন আতঙ্ক ডেঙ্গু

গত দু’দিন ধরে বেশ কিছু রোগী রেফার্ড হচ্ছে আমার কাছে। এরা হাসপাতালে ভর্তি রোগী। কভিড পজিটিভ। কেউ কেউ সাসপেক্টেড কভিড। কেউ কেউ আইসিইউতে আছেন। এদের প্লেটলেট অনেক কম। পঞ্চাশ হাজারের আশেপাশে। সেকারণেই আমার কাছে রেফার করছে মতামতের জন্য। জ্বরের ইতিহাস অনুযায়ী এন্টিজেন এবং এন্টিবডি পরীক্ষা করে পেলাম এদের ডেঙ্গু হয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এরা এর মধ্যেই দুই চারদিন রেমডিসিভির ইঞ্জেকশন, চামড়ার নিচে ব্লাড থিনার ইঞ্জেকশনসহ নানারকম ফর্দ করা ইঞ্জেকশন ও ওষুধ নিয়ে ফেলেছে। একজনের এই ফাঁকে রক্তক্ষরণও শুরু হয়েছে। একটু চিন্তিত বৈকি। সহকর্মীদের ফোন দিলাম কোনভাবে কি ডেঙ্গু পেশেন্টের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস থাকবার কারণে করোনা পরীক্ষা ফলস পজিটিভ আসতে পারে? দু’জনই মত দিলেন ‘না, পারে না’। (ফলস পজিটিভ এমনিতেই নানা কারণে আসতে পারে। সে প্রসঙ্গ আলাদা।) তার মানে এই রোগীদের দু’টোই হয়েছে। কভিড-১৯ এবং ডেঙ্গু। আসলে না হবার তো কারণ নেই। বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা ডেঙ্গুর এন্ডেমিক জোন। এটা দূর হবে না, থেকে যাবে। ইতিহাস তো এটাই বলে। যেখানে ডেঙ্গু ঢুকেছে আর বের হয়নি। ফিরে ফিরে এসেছে। হয়ত দুই এক বছর প্রকোপ কম ছিলো। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে স্থবির জনজীবনের সুযোগে ডেঙ্গুবাহী মশা বংশ বিস্তার আরও বেড়েছে। মানুষ এখন বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকে। দিনের বেলায় কাজ নেই, শুয়ে, বসে, ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে। হাসপাতাল রোগীতে ভর্তি। এক রোগী থেকে আরেক রোগীতে ছড়ানোও বেশ সহজ। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার বিস্তর কারণ বিদ্যমান। এছাড়া সমস্যা আরও। দেখা গেল রোগী এসেছে জ্বর নিয়ে। সবার নজর কোভিডে। কভিড পরীক্ষা হলো। পরীক্ষায় দেখা গেল পজিটিভ। ব্যাস, রোগ তো নির্ণয় হলো। কয়েকটি ওষুধ গুলির মতো চালু হয়ে গেল। চামড়ার নিচে ব্লাড থিনার। এদিকে কোন ফাঁকে প্লেটলেট কমে, উপরি হিসেবে ব্লাড থিনার পেয়ে শুরু হলো রক্তক্ষরণ। সম্প্রতি একজন রোগীকে এভাবে হারালাম। যখন ডাকা হলো তখন আর কিছুই করার রইলোনা।

অর্থাৎ কভিডের সঙ্গে যে ডেঙ্গু কো-ইনফেকশন হিসেবে আসছে, আসতে পারে এবং আসতেই পারে এটাই মাথায় রাখতে হচ্ছে এখন।

তাই এ বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে এডিস মশা হতে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কথায় আছে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক : রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর