শিরোনাম
শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিসে মনের রোগ ও করণীয়

বিভিন্ন দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীর অন্যদের চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি হারে বিষণ্নতায় ভোগার ঝুঁকি রয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো- এ বিষণ্ন রোগীদের মাত্র ২৫-৫০%-এর রোগ শনাক্ত হয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন। কিন্তু এ রোগটি শনাক্ত করা একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কোনো কঠিন কাজ নয়, চিকিৎসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুবই ফলপ্রসূ হয় এবং ব্যয়বহুল নয়। আর বিনা চিকিৎসা বা বিলম্বিত চিকিৎসায় রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকবে। অন্যদিকে, একজন লোক যদি দীর্ঘদিন বিষণ্নতায় ভোগেন এবং চিকিৎসার বাইরে থাকেন তবে তার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গবেষকদের মতে, মোট ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর শতকরা সাত ভাগের পেছনেই বিষণ্নতা একটি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

এখন এটা পরিষ্কার যে, বড় ধরনের মানসিক রোগীদের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিসে ভোগেন এবং শরীরে একই সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে। যেমন- সিজোফ্রেনিয়র রোগীকে তার সমবয়সীদের তুলনায় অনেক বেশি সময় বিছানায় থাকতে হয় তারা কম তাজা ফলমূল খেয়ে থাকেন। এ জন্য তারা বেশি করে ডায়াবেটিস ও দৈহিক স্থূলতায়  ভোগেন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের ১৬% থেকে ২৫% ডায়াবেটিসে ভুগছে। বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার হার বাড়ে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্য বয়সীদের দৈহিক স্থূলতা থাকলে ডিমনেশিয়া (স্মৃতিভ্রষ্টতা) হওয়ার হার বাড়ে আর বেশি বয়সে ডিমনেশিয়া বাড়ে ডায়াবেটিসের কারণে। খাদ্যাভ্যাস বিষয়ক সমস্যাও হতে পারে ডায়াবেটিস রোগীদের।

করণীয় : ডায়াবেটিস রোগীর নিজের এবং বিশেষভাবে তার পরিচর্যাকারীদের উচিত সবসময় খেয়াল রাখা- রোগীর মধ্যে বিষণœতার কোনো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কি না, আচার-আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে কি না, মনের মধ্যে কোনো হতাশা বা অসহায়ত্ব জন্ম নিচ্ছে কি না, খাদ্যাভ্যাসে কোনো পরিবর্তন আসছে কি না প্রভৃতি। রোগীর নিকটজনদের মনে রাখতে হবে, এ ধরনের রোগীদের একটা সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে- বিষণ্নতার অনুভূতিকে অস্বীকার করা, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করা। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম এই প্রবাদ বাক্য মেনে রোগীকে সব সময় উৎফুল্ল রাখা, কর্মব্যস্ত রাখা, নিয়ম মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা- এসবই হতে পারে ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে বিষণ্নতা গড়ে ওঠা রোধ করার অন্যতম  প্রধান হাতিয়ার।

-ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর