রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হার্টের অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণ

হার্টের অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণ

আপনি কি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন অথবা আপনার বংশে কি কেউ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত আছেন বা ছিলেন? মানে আপনার রক্তের সম্পর্কের কেউ যেমন ভাই-বোন, মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি অথবা মামা-চাচা বা ফুফু, খালা তারা কেউ কি আক্রান্ত হয়েছেন? আপনার কি ডায়াবেটিস বা রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল বিদ্যমান আছে বা বংশে কারও ছিল বা আছে? আপনার বয়স কি ৪০ অতিক্রম করেছে? আপনার কি মেদভুঁড়ি আছে? আপনার কি কায়িক শ্রম করার সুযোগ খুবই কম? আপনি কি বিড়ি, সিগারেট, জর্দা পাতা বা গুল ব্যবহার করেন? উপরে উল্লিখিত যে কোনো একটি কারণ আপনার মধ্যে বিদ্যমান থাকলে আপনার হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে বুঝতে হবে এবং একাধিক কারণ বিদ্যমান থাকলে, বিদ্যমান কারণের সংখ্যা যত বেশি আপনার হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে ততবেশি বৃদ্ধি পাবে।

হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে হৃদরোগের অনেক লক্ষণ পরিস্ফুটিত হয়ে থাকে, তবে এখানে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণসমূহ উল্লেখ করা হলো। যাতে আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ মানুষ তার দেহে হৃদরোগ বাসা বেঁধেছে কিনা তা বুঝতে পারে। ফলে প্রাথমিক অবস্থা থেকে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে হৃদরোগমুক্ত সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে। কারণ আমরা প্রায় সবাই জানি, বর্তমান সময়ে মানুষের মৃত্যুর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হৃদরোগ।

হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ: তাড়াহুড়া করে হাঁটতে গেলে অথবা একটু বেশি সময় ধরে হাঁটাহাঁটি করলে অথবা টেনশন নিয়ে হাঁটতে গেলে বুকে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে এবং কিছু সময় থামলে বা হাঁটার গতি কমিয়ে দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বুকের ব্যথা দূরীভূত হয়ে যায়। এসব অবস্থায় কারও কারও বুকে ব্যথা অনুভূত না হয়ে বুকে হালকা চাপ অনুভূত হতে পারে এবং একটু থামলে বা গতি কমিয়ে দিলে অল্পক্ষণের মধ্যে চাপ চলে যায় এবং ব্যক্তি স্বাভাবিক হয়ে যায়। পাহাড় বা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলে বুকে চাপ অথবা ব্যথা অনুভূত হতে পারে এক্ষেত্রেও থেমে গেলে বা বিশ্রাম নিলে ব্যক্তি খুব দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। অত্যধিক গরমে, অত্যধিক ঠান্ডায় বা বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ায় বা কনকনে বাতাসে হাঁটতে গেলে বুক ব্যথা বা বুকের চাপ অনুভূত হতে পারে। ভরা পেটে হাঁটতে গেলে বা অন্য কোনো কাজ করতে থাকলে বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে কিন্তু খালি পেটে তা ঘটে না। সর্দি-কাশি, জ্বর অথবা বাতব্যথা আক্রান্তকালে হাঁটতে গেলে বা অন্য কোনো কর্ম সম্পাদন করার সময় বুকের চাপ অথবা ব্যথা অনুভূত হতে পারে কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক সময়ে এ ধরনের কোনো উপসর্গ অনুভূত না-ও হতে পারে। কারও কারও (Pulse) নাড়ির গতি অত্যধিক বৃদ্ধি পায় এবং ব্যক্তি বুক ধড়ফড় বা প্যালপিটিশন অনুভব করেন, যা আগে হতো না। সামান্য টেনশন করলে বা কোনো দুঃসংবাদ শুনলে বুক ধড়ফড় শুরু হয়ে যেতে পারে। তবে এ ধরনের বুক ধড়ফড় প্রাথমিক অবস্থায় অল্প সময়ের মধ্যে নিরাময় হয়ে যায়। পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা হৃদরোগের একটি অন্যতম লক্ষণ, যদি কেউ কম পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠেন তবে বুঝতে হবে এটা হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। হাঁটতে গেলে, একটু ভারী ধরনের কায়িক শ্রম সম্পাদন করতে গেলে, সিঁড়ি বা পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে গেলে কেউ হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। তবে বিরূপ আবহাওয়ায় মানসিক টেনশন, ভরা পেটে অথবা ছোটখাটো অন্য অসুস্থতার এবং ইতিপূর্বে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সময়ে ব্যক্তি খুব সহজেই বা অল্প সময়ের মধ্যে হাঁপিয়ে ওঠতে পারেন। কারও কারও হাঁপিয়ে ওঠার সময় মুখ-মাথা বা শরীর ঘেমে যেতে পারে। মেদভুঁড়িসম্পন্ন লোকদের বেলায় পেট ভরে খাওয়ার পরে বিছানায় শুতে গেলে শ্বাসকষ্ট এবং হালকা ও শুকনো কাশির উদ্বেগ হতে পারে, তার সঙ্গে এসব ব্যক্তির পা ফুলে যেতে পারে এবং ঘুমের মধ্যে কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো অনেকের দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের সবাইকে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। মনে রাখতে হবে এসব ক্ষেত্রে বরাবরই প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

ডা. এম. শমশের আলী, পরিচালক ও চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর