মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

অ্যানজিনা নিয়ে দোটানা

অ্যানজিনা নিয়ে দোটানা

বয়স ৪০ পার হয়ে গেছে, আপনি হাই ব্লাডপ্রেসার বা ডায়াবেটিসে্‌ ভুগছেন, মাঝে মাঝে বুকের মাঝখানে অথবা বামপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে জোরে বা ভরাপেটে হাটতে গেলে অথবা তাড়াহুড়া করে কেনো কাজ করতে গেলে। এমন হলে আপনি কোনো গ্যাসের ওষুধ খান এবং অল্প সময়ের মধ্যে আপনার ব্যথা নিরাময় হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিত যে এটা গ্যাসের ব্যথা তাই সব সময় গ্যাসের ওষুধ সঙ্গে রাখেন বা নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন। এ ধরণের রোগীর সংখ্যা আমাদের দেশে অনেক, সবাই আপনার মতো চিকিৎসা গ্রহণ করে ভালো থাকার চেষ্টা করে। আমি বলব আপনার এ অবস্থা হলে আপনি গ্যাসের ওষুধ না খেয়ে একটু চুপ করে বসে পরুন বা এক গ্লাস পানি পান করে বিশ্রাম গ্রহণ করুন। যদি এতে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে আপনার বুকের ব্যথা বা উপরিপেটের ব্যথা কমে যায় তবে আপনার এ ব্যথা যে গ্যাসের ব্যথা নয় তা নিশ্চিত হওয়া যাবে এবং খুব সম্ভব তা অ্যানজিনা। হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত হলে মানুষ এক ধরনের ব্যথা অনুভব করে যা প্রায় সময়ই তীব্র ধরনের হয়ে থাকে, যাকে চিকিৎসকগণ অ্যানজিনা বলে অভিহিত করে থাকেন। সাধারণভাবে এ ব্যথা বুকের মাঝখানে অনুভূত হয়, তবে ব্যক্তিভেদে তা বুকের বাম বা ডানপাশ বা উপরিপেটে অথবা সারা বুকে অনুভূত হতে পারে। ব্যথা তীব্র হলে তা গলা, চোয়াল, হাত, পিঠ, কাঁধ অথবা পেটের উপরের অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় অ্যানজিনার ব্যথা শুধু পরিশ্রমকালীন সময়েই দেখা দিয়ে থাকে। তবে চরম পর্যায়ে বিশ্রামকালীনও তা অনুভূত হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে একটু বিশ্রাম নিলে খুব তাড়াতাড়ি ব্যথা দূরীভূত হয়ে যায়, তবে চরম পর্যায়ে তা সহজে দূরীভূত হয় না। অ্যানজিনার ব্যথার সঙ্গে বুক ধড়ফড় করা বা শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভূত হয়ে থাকে এবং ব্যথা দূরীভূত হয়ে গেলে তার সঙ্গে সঙ্গে বুক ধড়ফড় এবং শ্বাসের অসুবিধাও দূরীভূত হয়ে যায়। অ্যানজিনার ব্যথা অনেক সময় এত বেশি তীব্র হয়ে থাকে যে, কারও কারও ব্যথার সময়ে ভীতির সঞ্চার হয় এবং কেউ কেউ মৃত্যু ভয়ে পতিত হয়। কাজের অত্যধিক চাপ, টেনশন, মানসিক অশান্তি, দুঃসংবাদ শোনা বা ভয়ার্ত কোনো ঘটনা অবলোকন করা বা বর্ণনা শোনা, নিকট আত্মীয় কারও মৃত্যুর সংবাদ বা কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া ইত্যাদি কারণে অ্যানজিনার ব্যথার প্রকোপ ও তীব্রতা দুটোই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

এদিকে কখনো কখনো সাধারণ মানুষ পেপটিক আলসার ডিজিজকে গ্যাস বা গ্যাস্ট্রিক বলে আখ্যায়িত করে থাকেন, যা নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে এন্টাসিড জাতীয় ট্যাবলেট বা তরল এন্টাসিড ওষুধ গ্রহণ করেন। এছাড়া রেনিটিডিনজাতীয়, ওমিপ্রাজল জাতীয়, প্যান্টোপ্রাজলজাতীয়, ইসোমিপ্রাজল জাতীয় ইত্যাদি সচরাচর সেবন করে থাকেন। পাকস্থলীতে উৎপাদিত এসিডের প্রভাবে এ রোগ সৃষ্টি হয় বলে এসিডের উৎপাদন ও প্রতিক্রিয়া রোধের জন্য উপরি উল্লেখিত ওষুধসমূহ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গ্যাসের ব্যথা সাধারণত মধ্যম মেয়াদি ব্যথা যা নিরাময় হতে এক বা একাধিক ঘণ্টা সময় লাগে এবং অ্যানজিনার ব্যথা স্বল্প মেয়াদি ব্যথা যা আরোগ্য হতে দুই-চার মিনিট বা সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। সুতরাং মনে রাখতে হবে, “গ্যাসের ব্যথা ঘণ্টায় সারে” আর “অ্যানজিনার ব্যথা মিনিটে সারে” এবং অ্যানজিনার ব্যথা হৃদরোগের সতর্কবার্তা। মনে রাখবেন এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। তাই এসব বিষয়ে আরও যত্নবান হোন। এছাড়া প্রাথমিক অবস্থা থেকে এসব বিষয়ে সচেতন হলে জটিলতা এড়ানো যায়।

-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালটেন্ট শমশের হার্ট কেয়ার, শামলী, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর