বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

টনসিলাইটিস : উপসর্গ ও করণীয়

টনসিলাইটিস : উপসর্গ ও করণীয়

টনসিলের সমস্যার কারণে গলাব্যথায় ভুগে থাকেন অনেকে। যদিও টনসিলের সমস্যা সব বয়সেই হয়ে থাকে, তারপরও শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলের ইনফেকশন একটু বেশি হয়। টনসিলের এই ইনফেকশনকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টনসিলাইটিস বা টনসিলের প্রদাহ।

টনসিল কী : জিহ্বার শেষ প্রান্তে, আলজিহ্বার নিচে বাম ও ডানপাশে বাদামের মতো ১.৫ সেন্টিমিটার আকারের লালবর্ণের মাংসপিণ্ডকে টনসিল (Tonsil) বলা হয়ে থাকে। টনসিল দেখতে মাংসপিণ্ডের মতো মনে হলেও এটি লসিকা কলা বা লিম্ফয়েড টিস্যু দিয়ে তৈরি। মুখগহ্বরের দুই পাশে দুটো টনসিলের অবস্থান। মুখ, গলা, নাক কিংবা সাইনাস হয়ে রোগজীবাণু অন্ত্রে বা পেটে ঢুকতে বাধা দেয় এই টনসিল অর্থাৎ টনসিল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। (তার পরও আছে আর ৩২৮টি গ্রন্থি)।

টনসিলাইটিস : টনসিলাইটিস হচ্ছে টনসিল সমুহ যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে প্রদাহ বা ইনফেকশনের সৃষ্টি করে ভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। জন্ম থেকেই গলার মধ্যে এই টনসিল থাকে এবং বাচ্চাদের বেলায় টনসিল আকারে বড় দেখা যায় পর্যায় ক্রমে (৫-৬ বছর বয়সের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি বড় আকৃতিতে পৌঁছায়), বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টনসিল ক্রমান্বয়ে ছোট হতে থাকে। টনসিলের প্রদাহ বর্ষায় বেশি হয়। শীতকালে টনসিল প্রদাহ হলেও খুব কম এবং ৮৫% ভাইরাস সংক্রমণ জাতীয়। যাদের শরীরে ইমিউনিটি শক্তি কম বা ঠাণ্ডা সহ্য ক্ষমতা কম তাদের বেলায় ভাইরাসসমুহ বেশ আক্রান্ত করে।

টনসিলাইটিস সাধারণত দুই ধরনের...

* একটা হলো তীব্র অ্যাকিউট

* অন্যটি দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক টনসিলাইটিস।

লক্ষণ : মূলত গলাব্যথা হবে, গিলতে অসুবিধা হবে। শরীরে সামান্য জ্বর থাকবে জ্বরের মাত্রা ৩৯ সেলসিয়াস = ১০৩ ফারেনহাইট = অথবা এর বেশিও হতে পারে। অনেক সময় গলার স্বর পরিবর্তিত হয়, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ থাকে। সঙ্গে শিশুর খাবার গ্রহণে অনীহা কিংবা নাক দিয়ে পানি ঝরা ইত্যাদি থাকতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে গলার বাইরের দিকে গ্রন্থি ফুলে যেতেও দেখা যায়। * ভাইরাসজনিত টনসিলাইটিসে টনসিলের প্রদাহ ধীরে ধীরে বাড়ে, ফলে উপসর্গগুলোও ধীরে ধীরে আবির্ভূত হয়। ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিলাইটিস হঠাৎই তীব্রভাবে আক্রমণ করে। শিশুদের বেলায় বমি, পেটে ব্যথা বড়দের বেলায় মাথাব্যথাও থাকতে পারে। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের বেলায় ডায়রিয়াসহ খাওয়ার অরুচি দেখা যায়।

অ্যাকিউট টনসিলাইটিসের লক্ষণ : ঠাণ্ডা-সর্দি, অত্যধিক জ্বর বা জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি, গলাব্যথা খুসখুসে কাশি, খাবার গিলতে বা পানি পান করতে ব্যথা, নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা, মুখের ভিতরে টনসিল বেশ লালচে বর্ণ ধারণ করে, টনসিলের ওপর হলুদ বা সাদা আস্তরণ পড়তে পারে, গলার ভিতর এর আশপাশের অন্যান্য লসিকাগ্রন্থিও ফুলে যাওয়া অথবা গলায় ও মাড়িতে ব্যথা হয়।

ক্রনিক টনসিলাইটিসের লক্ষণ : জিনিসের গন্ধ পাওয়া যায় না, জোর করে ঘ্রাণ নিতে গেলে সবকিছুতেই বাজে গন্ধ পাওয়া যায়। ঘুমাতে খুব অসুবিধা হয়। শিশু ঘুমাতে ভয় পায়, নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে, অনেক সময় বাচ্চার ঘুমের ধরন পাল্টে যায়। থুঁতনি এগিয়ে আসে, মাথাব্যথা, গলায় ঘায়ের কারণে ব্যথা, কানে ব্যথা, ক্লান্তিময়তা, মুখে অনবরত লালা জমতে থাকে, খাবার খেতে কষ্ট হয়।

রোগ শনাক্ত : টাং ডিপ্রেসর দিয়ে জিহ্বাকে চেপে ধরে ভিতরে প্রদাহ আছে কি না দেখে বোঝা সহজ যে টনসিলাইটিস হয়েছে। প্রদাহের কারণে টনসিল বড় ও লালাভ হয়ে থাকে। টনসিলের ওপর হলুদাভ বা ধূসর আবরণে টনসিল আংশিকভাবে আবৃত থাকে। টনসিলাইটিস নির্ণয়ে বিশেষজ্ঞের এই পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট।

তবে দুটি পরীক্ষা দ্বারা টনসিলাইটিস নির্ণয় করা হয়। ভাইরাসজনিত হলে ভাইরাস সেনসিটিভিটি কালচার করাতে পারলে বুঝে নিতে পারবেন কোন ধরনের ভাইরাস আক্রমণের জন্য বেশি দায়ী।

-অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ, সিলেট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর