দেখতে মাংসপিন্ডের মতো মনে হলেও এটি লসিকা কলা বা লিম্ফয়েড টিস্যু দিয়ে তৈরি। মুখ গহ্বরের দুই পাশে দুটি টনসিলের অবস্থান
যাদের শরীরে ইমিউনিটি শক্তি কম বা ঠান্ডা সহ্য ক্ষমতা কম তাদের বেলায় ভাইরাস বেশি আক্রান্ত করে। জন্ম থেকেই গলায় টনসিল হতে পারে। বাচ্চাদের বেলায় টনসিল আকারে বড় দেখা যায় পর্যায়ক্রমে (৫-৬ বছর বয়সের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি বড় আকৃতিতে পৌঁছায়), বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টনসিল ক্রমান্বয়ে ছোট হতে থাকে।
টনসিল কী : জিহ্বার শেষ প্রান্তে, আলজিহ্বার নিচে বাম ও ডান পাশে বাদামের মতো ১.৫ সেন্টিমিটার আকারে লালবর্ণের মাংসপি-কে টনসিল (Tonsil) বলা হয়ে থাকে। টনসিল দেখতে মাংসপিন্ডের মতো মনে হলেও এটি লসিকা কলা বা লিম্ফয়েড টিস্যু দিয়ে তৈরি। মুখ গহ্বরের দুই পাশে দুটি টনসিলের অবস্থান। টনসিলাইটিস (Tonsillitis) : আর টনসিলাইটিস হচ্ছে টনসিল যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে প্রদাহের বা ইনফেকশনের সৃষ্টি করে ভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। টনসিলাইটিস সাধারণত দুই ধরনের হয়। ১) একটা হলো তীব্র বা একিউট। ২) অন্যটি হলো দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক টনসিলাইটিস।
একিউট টনসিলাইটিসের লক্ষণ
ঠান্ডা-সর্দি, অত্যধিক জ্বর বা জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি, গলাব্যথা খুসখুসে কাশি, খাবার গিলতে বা পানি পান করতে ব্যথা, নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা, মুখের ভিতরে টনসিল বেশ লালচে বর্ণ ধারণ করে, টনসিলের ওপর হলুদ বা সাদা আস্তরণ পড়তে পারে, গলার ভিতর ও এর আশপাশের অন্যান্য লসিকাগ্রন্থিও ফুলে যাওয়া অথবা গলায় ও কখনো মাড়িতে ব্যথা ইত্যাদি।
ক্রনিক টনসিলাইটিসের লক্ষণ
জিনিসের গন্ধ পাওয়া যায় না, জোর করে ঘ্রাণ নিতে গেলে সবকিছুতেই বাজে গন্ধ পাওয়া যায়। ঘুমাতে খুব অসুবিধা হয়। নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে, অনেক সময় বাচ্চার ঘুমের ধরন পাল্টে যায়। থুঁতনি এগিয়ে আসে, মাথাব্যথা, গলায় ঘায়ের কারণে ব্যথা, কানে ব্যথা, ক্লান্তিময়তা, মুখে অনবরত লালা জমতে থাকে, খাবার খেতে কষ্ট ও মুখ হাঁ করতে অসুবিধা হয়, মুখ দিয়ে লালা বের হয় ও কণ্ঠস্বর ভারি হয়ে যেতে পারে, মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে।
রোগ শনাক্ত/রোগ নির্ণয় : টাং ডিপ্রেসর (মুখ খোলার এক ধরনের ফরসেপ বিশেষ) দিয়ে জিবকে চেপে ধরে ভিতরে প্রদাহ আছে কিনা দেখে বোঝা সহজ যে টনসিলাইটিস হয়েছে। প্রদাহের কারণে টনসিল বড় ও লালাভ হয়ে থাকে। টনসিলের ওপর হলুদাভ বা ধূসর আবরণে টনসিল আংশিকভাবে আবৃত থাকে। টনসিলাইটিস নির্ণয়ে বিশেষজ্ঞের এ পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট। তার পরও নিম্নের দুটি পরীক্ষার দ্বারা নিশ্চিত হতে পারেন আপনার কোনো ধরনের টনসিলাইটিস হয়েছে কিনা- ১) rapid strep test -এ পরীক্ষা দ্বারা গলার ভিতরের ইনফেকশনের ওপরের ঝিল্লির মিউকাস পরীক্ষা করে মাত্র ৭ মিনিটে নিশ্চিত হওয়া যায় তা স্ট্রেপটোকোকাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত কিনা)
২) strep culture (পরীক্ষাগারে স্ট্রেপটোকোকাস কালচার করাকে বলা হয়। মনে রাখবেন এসব পরীক্ষার আগে কোনো জাতীয় অ্যান্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা নিষেধ)।
টনসিলাইটিসের চিকিৎসা দুভাবে করা যায়।
১. ওষুধ সেবন।
২. অপারেশন।
টনসিলের চিকিৎসা নির্ভর করে কারণের ওপর। যদি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয় তাহলে ভালো চিকিৎসকের পরামর্শে একটু উন্নত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সঠিক নিয়মে সেবন করলে মাত্র সাত দিনে ১০০% নিশ্চিতভাবেই বলা যায় টনসিলের প্রদাহ ভালো হয়ে যাবে। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসায় অনেক উন্নত ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক আছে যার সঠিক সিঙ্গেল ডোজেই ভালো হয়ে যাওয়ার কথা। তা না করে যদি নিজের ইচ্ছামতো ২-৪টা বড়ি খেয়ে ভালো হয়ে যান এবং তা আবার আক্রমণ করে এবং সে সময়ও এরকম করেন তাহলে পরবর্তীতে অপারেশন ছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ নেই।
অপারেশন দরকার : ব্যাকটেরিয়াজনিত হলে দেখবেন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করার পর চলে গেছে অথবা ভাইরাসজনিত হলে ২-৩ সপ্তাহের ভিতর অসুখটি সেরে যাওয়ার কথা। তার পরও যদি না কমে তাহলে অপারেশন করা উত্তম বলেই মনে করেন। তাই টনসিলের লক্ষণ উপসর্গ প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, নাক-কান-গলা বিভাগ,
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ।