হাঁপানিকে সাধারণভাবে অ্যাজমা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অ্যাজমা বংশগত রোগ হিসেবে বিবেচিত, যা সচরাচর বাল্যকাল থেকে বিদ্যমান থাকে। বিভিন্ন অ্যালার্জিক কারণে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায়, যেমন- অ্যালার্জিক খাদ্যবস্তু, বাতাসে ভেসে বেড়ানো অ্যালার্জিক বস্তু, ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাস ইত্যাদি। এ ধরনের অ্যালার্জিক কারণে শ্বাসকষ্ট হওয়াকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যাজমা বলা হয়ে থাকে। এর সঙ্গে ক্রনিক ব্রংকাইটিস ও ইমফাইসেমা নামক প্রায় একই ধরনের আরও দুটি অসুস্থতার জন্য মানুষ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ দুটি অসুস্থতার মূল কারণ ধূমপান, বায়ু দূষণযুক্ত পরিবেশে কাজ করা, বংশগত প্রবণতা, ঘনঘন সর্দিকাশি জাতীয় অসুস্থতায় আক্রান্ত হওয়া। অ্যাজমা, ক্রনিক ব্রংকাইটিস ও ইমফাইসেমা ফুসফুসের অসুস্থতা। এসব অসুস্থতা সব সময়ই দীর্ঘমেয়াদি অসুখ যা দিনে দিনে প্রকট হবে এটাই এসব রোগের ধারাবাহিকতা। যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের প্রদাহ, ফুসফুসের ইনফেকশন দেখা দেয় এবং কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে। সময়ের আবর্তে এ ধরনের অসুস্থতার কারণে হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট আরও বেশি বৃদ্ধি পায় এবং তা বেশ জটিল আকার ধারণ করে, রোগী সব সময় শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে, কাশির প্রকোপ ও তীব্রতা দুই-ই বৃদ্ধি পায়, রোগী কাজকর্ম সম্পাদনে অপারগ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় গতানুগতিক চিকিৎসা রোগীর উপসর্গ কমাতে ব্যর্থ হয়। হৃদরোগ শ্বাসকষ্টের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এসব অসুস্থতার কারণে ফুসফুসের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, ফুসফুসে রক্তপ্রবাহের স্থবিরতা দেখা দেয়া, ফুসফুসে অধিক রক্ত জমা হয়ে ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে রোগী তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট ও কাশিতে ভুগতে থাকে। মারাত্মক অবস্থায় রোগীর ফুসফুসে পানি জমা হতে থাকে, যার ফলে অবস্থা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। শ্বাসকষ্টের আরও একটি বড় কারণ হিসেবে হৃদরোগকে দায়ী করা হয়। উচ্চরক্তচাপজনিত হৃদরোগ, হৃৎপিন্ডের ভাল্বের সমস্যা, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ (হৃৎপিন্ডে রক্ত সরবরাহের স্বল্পতা) কার্ডিও-মাইয়োপ্যাথি, রক্তশূন্যতাজনিত হৃদরোগ এবং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হৃদরোগ হার্ট ফেইলুর ইত্যাদি। হৃদরোগজনিত শ্বাসকষ্টের সঙ্গে হৃদরোগের অন্যান্য লক্ষণসমূহ- যেমন- বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, শারীরিক যোগ্যতা কমে যাওয়া ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে। উপরোল্লিখিত দু-ধরনের (অ্যাজমা ও হৃদরোগ) কারণে শ্বাসকষ্টের মাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে যে, ফুসফুসের অসুস্থতার জন্য হৃৎপিন্ডের ডান অংশ আক্রান্ত হওয়ায় রোগীর শরীর হাত-পা-মুখ ফুলে যাওয়া খুব তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকে। হৃৎপিন্ডের অসুস্থতার জন্য সাধারণভাবে রোগীর হৃৎপিন্ডের বামপাশ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে সময়ের আবর্তে হৃৎপিন্ডের উভয়পাশ আক্রান্ত হয়ে যায়। দুই ধরনের অসুস্থতার পরিণতিতে হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয়ে একই ধরনের পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে থাকে, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হার্ট ফেইলুর বলা হয়। রোগীর রোগ বৃদ্ধি পেয়ে হার্ট ফেইলুর সৃষ্টি হলে রোগীর লক্ষণসমুহ- এমন আকার ধারণ করে যে, তখন দুই ধরনের অসুস্থতাকে আলাদা করা প্রায়ই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া চিকিৎসা অসম্ভব হতে পারে। দুই ধরনের শ্বাসকষ্টের শেষ পরিণতি হার্ট-ফেইলুর তাই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতে চিকিৎসা শ্রেয়।
হার্ট-ফেইলুরের লক্ষণসমূহ : শ্বাসকষ্ট হওয়া, প্রাথমিক অবস্থায় পরিশ্রমকালীন এবং পরবর্তীতে বিশ্রামকালীন পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। ঘনঘন কাশিতে আক্রান্ত হওয়া, পেটসহ সারা শরীর ফুলে যাওয়া এবং বদহজম দেখা দেওয়া, খাদ্যে অরুচি ও সব সময় পেট ভরাভরা ভাব থাকা। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা করা উচিত নয়।
-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।