আপনি কি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন অথবা আপনার বংশে কি কেউ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত আছেন বা ছিলেন? মানে আপনার রক্তের সম্পর্কের কেউ যেমন ভাইবোন, মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি অথবা মামা-চাচা বা ফুফু, খালা তারা কেউ কি আক্রান্ত হয়েছেন? আপনার কি ডায়াবেটিস বা রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল বিদ্যমান আছে বা বংশে কারও ছিল বা আছে? আপনার বয়স কি চল্লিশ অতিক্রম করেছে? আপনার কি মেদভুঁড়ি আছে? আপনার কী কায়িকশ্রম করার সুযোগ খুবই কম? এসব উল্লিখিত যে কোনো একটি কারণ আপনার মধ্যে বিদ্যমান থাকলে আপনার হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে বুঝতে হবে এবং একাধিক কারণ বিদ্যমান থাকলে, বিদ্যমান কারণের সংখ্যা যত বেশি আপনার হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে ততবেশি বৃদ্ধি পাবে।
হার্টের অসুস্থতা/হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে হৃদরোগের অনেক লক্ষণ পরিস্ফুটিত হয়ে থাকে, তবে এখানে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণসমূহ উল্লেখ করা হলো, যেমন সুস্থ মানুষ তার দেহে হৃদরোগ বাসা বেঁধেছে কিনা তা বুঝতে পেরে প্রাথমিক অবস্থা থেকে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে হৃদরোগমুক্ত সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। কারণ আমরা প্রায় সবাই জানি, বর্তমান সময়ে মানুষের মৃত্যুর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো হৃদরোগ।
হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ : তাড়াহুড়া করে হাঁটতে গেলে অথবা একটু বেশি সময় ধরে হাঁটাহাঁটি করলে অথবা টেনশন নিয়ে হাঁটতে গেলে বুকে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে এবং কিছু সময় থামলে বা হাঁটার গতি কমিয়ে দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বুকের ব্যথা দূরীভূত হয়ে যায়। এসব অবস্থায় কারও কারও বুকে ব্যথা অনুভূত না হয়ে বুকে হালকা চাপ অনুভূত হতে পারে এবং একটু থামলে বা গতি কমিয়ে দিলে অল্পক্ষণের মধ্যে চাপ চলে যায় এবং ব্যক্তি স্বাভাবিক হয়ে যায়। পাহাড় বা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গেলে বুকে চাপ অথবা ব্যথা অনুভূত হতে পারে, এক্ষেত্রেও থেমে গেলে বা বিশ্রাম নিলে খুব দ্রুত আরোগ্য লাভ করে থাকেন। অত্যাধিক গরমে, অত্যাধিক ঠান্ডায় বা বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ায় বা কনকনে বাতাসে হাঁটতে গেলে বুক ব্যথা বা বুকের চাপ অনুভূত হতে পারে। ভরা পেটে হাঁটতে গেলে বা অন্য কোনো কাজ করতে থাকলে বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে কিন্তু খালি পেটে তা ঘটে না। সর্দি-কাশি, জ্বর অথবা বাতব্যথা আক্রান্তকালে হাঁটতে গেলে বা অন্যকোনো কর্ম-সম্পাদন করার সময় বুকের চাপ অথবা ব্যথা অনুভূত হতে পারে কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক সময়ে এ ধরনের কোনো উপসর্গ অনুভূত নাও হতে পারে। কারও কারও (Pulse) নাড়ির গতি অত্যধিক বৃদ্ধি পায় এবং ব্যক্তি বুক ধড়ফড় বা প্যালপিটিশন অনুভব করে থাকেন, যা আগে হতো না। সামান্য টেনশন করলে বা কোনো দুঃসংবাদ শুনলে বুক ধড়ফড় শুরু হয়ে যেতে পারে। তবে এ ধরনের বুক ধড়ফড় প্রাথমিক অবস্থায় অল্প সময়ের মধ্যে নিরাময় হয়ে যায়। পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা হৃদরোগের একটি অন্যতম লক্ষণ, যদি কেউ কম পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠেন তবে বুঝতে হবে এটা হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। হাঁটতে গেলে, সিঁড়ি বা পাহাড় বেয়ে ওপরে ওঠতে গেলে কেউ হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। তবে বিরূপ আবহাওয়ায় মানসিক টেনশন, ভরাপেটে অথবা ছোটখাটো অন্য অসুস্থতার এবং ইতিপূর্বে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তি খুব সহজেই বা অল্প সময়ের মধ্যে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। কারও কারও হাঁপিয়ে ওঠার সময় মুখ-মাথা বা শরীর অতিরিক্ত ঘেমে যেতে পারে।
-ডা. এম শমশের আলী, পরিচালক ও চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।