সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল বিষয় হলো সুশিক্ষার জন্য পাঠদান

অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : উপাচার্য, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল বিষয় হলো সুশিক্ষার জন্য পাঠদান

বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখছেন...

 

দেশে এখন শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর জনবল ও গবেষণা খাতে ব্যয় অপর্যাপ্ত। যেখানে জাতীয় পর্যায়ের মান ধরে রাখাই কঠিন, সেখানে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া সুদূরপরাহত। অধিকাংশই দুর্বল অবকাঠামোর ওপর চলছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান। আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারণে, শিক্ষার মানোন্নয়নে ও আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি উদাসীনতা লক্ষণীয়। গত দুই দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এতে শিক্ষা খাতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অন্য অনেক খাতের মতোই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সৌন্দর্য, চাকচিক্য ও জৌলুস চোখে পড়ার মতো। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে রয়েছে নানা আকর্ষণীয় অফার। একটি পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠার মতো সবই আছে আপাতদৃষ্টিতে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য শুধু শিক্ষাদান নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সুশিক্ষা দেওয়া।

আমি মনে করি, একটি বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা তখনই রাখবে, যখন সেটি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক খ্যাতি বৃদ্ধির জন্য গবেষণা খাতে ব্যয়, পিএইচডিধারী শিক্ষকের সংখ্যা, গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা, প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বা ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনকারীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল বিষয় হলো সুশিক্ষার জন্য পাঠদান। শুধু গাদা গাদা গ্র্যাজুয়েট তৈরি নয়, তাদের প্রকৃত মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আর এটাই হবে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ‘আউটপুট’। এমন আউটপুট পেতে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার মান বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণাকর্ম প্রকাশ করতে হবে। এসবের মাধ্যমে গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়- উভয়েরই ব্র্যান্ডিং হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের একটি গবেষণাকর্ম একই সঙ্গে অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গবেষণার পথ খুলে দেয়। অনুপ্রেরণাও দেয় বটে। কাজেই গবেষকের পরিচিতি ও দৃশ্যমানতা বাড়াতে এবং অন্যদের অনুপ্রেরণা দিতে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের বিকল্প খুব কমই আছে।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আন্তর্জাতিক’ হয়ে ওঠা জরুরি। ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটির মধ্যেই আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার তাগিদ লুকিয়ে আছে। শুধু সেই তাগিদটুকু উপলব্ধি করার ব্যাপার। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখছেন। হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি এখনো অনেক বেশি থাকলেও বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তা মধ্যবিত্তের নাগালেই আছে। অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান অল্প খরচে নিজের পছন্দের সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের মেধা ও মনন বিকাশের সুযোগও পাচ্ছে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে যোগ্য নাগরিক হয়ে উঠছেন তারা।

সর্বশেষ খবর