মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের নানা কারণে অবজ্ঞা করত। যোদ্ধা হিসেবে বাঙালিদের সক্ষমতা নেই বলেই ভাবতে এবং বলতে পছন্দ করত তারা, তবে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষে যুদ্ধ করা সৈন্যদের নিয়ে ইস্ট বেঙ্গলের গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি খেতাব পায় ইস্ট বেঙ্গলের ১নং রেজিমেন্ট বা ইউনিট ‘ফার্স্ট বেঙ্গল’। অন্যান্য ইউনিটও যুদ্ধ বা শান্তিকালে পাকিস্তানি ইউনিটের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ইস্ট বেঙ্গলকে হারাতে জোট বাঁধত বাদ বাকি পাকিস্তানি ইউনিট। সুতরাং ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে চিন্তিত থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পূর্ণাঙ্গ এবং যুদ্ধ করার মতো ইউনিট ছিল আটটি, যা ১ থেকে ৮ নম্বর ব্যাটালিয়ন নামে চিহ্নিত হতো। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গতা পায় ৯, ১০ এবং ১১ নম্বর ইউনিট। প্রথম ৮টি পূর্ণাঙ্গ ইউনিটের মধ্যে ৫, ৬ এবং ৭ নম্বর ইউনিট ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। ফলে ইউনিট হিসেবে ইস্ট বেঙ্গলের এই তিনটি ব্যাটালিয়ন মুক্তিযুদ্ধ করতে পারেনি। অবশিষ্ট ১ থেকে ৪ এবং ৮ নম্বর ব্যাটালিয়ন বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে। অসংখ্য শহীদ ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ইস্ট বেঙ্গলের কপালে এঁকে দিয়েছে গৌরবের তিলক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৫টি ইউনিট এবং ‘টাইগার্স ডেন’ নামে খ্যাত ইস্ট বেঙ্গলের নতুন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার’ একাত্তরের মার্চে প্রত্যক্ষ করেছে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। নিষ্ঠুরতা ও ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে ৩১ মার্চের মধ্যে পাঁচটি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে এবং ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। পিছিয়ে ছিল না ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারও। মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার বিভিন্ন দলিলের ভিত্তিতে তাদের কথা লেখা হলো।

প্রশিক্ষণরত নবীন বাঙালি সেনাদের রক্তে রঞ্জিত ইবিআরসি : ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন জাতিসত্তা নিয়ে পৃথক সেনা দল বা রেজিমেন্ট গড়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের বেলুচ কিংবা পাঞ্জাব রেজিমেন্ট আর ভারতের রাজপুত্র কিংবা শিখ রেজিমেন্টের নাম আমাদের অনেকেরই জানা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা মাছ খাওয়া বা মেছো বাঙালিদের ভীতু বলে অবজ্ঞা করত। দৈহিকভাবে তাদের চেয়ে কিছুটা খর্বাকৃতির বাঙালিদের নিয়ে পৃথক সেনা রেজিমেন্ট গড়ার বিষয়টি তাই পশ্চিমাদের চোখে ছিল এক হাস্যকর প্রস্তাব। কিন্তু মেজর গনি, জেনারেল ওসমানীসহ বেশ কিছু সেনা অফিসার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাঙালিদের নিয়ে পৃথক সেনা দল বা রেজিমেন্ট গড়ার উদ্যোগ নেন। ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয় বাঙালিদের নিজস্ব রেজিমেন্ট যার নাম দেওয়া হয় ‘দ্য ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’। এই রেজিমেন্টের অধীনে ১ থেকে ৮ পর্যন্ত মোট ৮টি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট বা ব্যাটালিয়ন গড়ে ওঠে ১৯৭১-এর মার্চ অবধি। সবকটি ইউনিটে সৈন্য ভর্তি ও নতুন সৈন্যদের প্রশিক্ষণের জন্য চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছিল দ্য ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার : সংক্ষেপে ইবিআরসি নামে যা ব্যাপক পরিচিত।

মার্চ এলেই ইবিআরসির অজানা শহীদ সমাধি নামের গণকবরের পাশে দাঁড়িয়ে আজও স্বজনদের স্মরণ করে একাত্তরের মার্চে এখানে শাহাদতবরণকারী সেনা পরিবারের বাকি সদস্যরা। ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের ঢেউ সারা দেশের মতো চট্টগ্রামকেও আন্দোলিত করেছিল। সমুদ্রবন্দর, দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার, বিমানবন্দর, রেডিও স্টেশন আর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে রণকৌশলগত দিক বিবেচনায় চট্টগ্রামের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। তাই চট্টগ্রামকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে রংপুর থেকে ট্যাংক আর কুমিল্লা থেকে অতিরিক্ত সৈন্য আনার পরিকল্পনা করে পাকিস্তানি বাহিনী।

৭ মার্চ ১৯৭১-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স মাঠে স্বাধীনতা সংগ্রামের যে দিকনির্দেশনা দেন, তা দ্রুতই পৌঁছে যায় চট্টগ্রাম সেনানিবাসের বাঙালি সৈন্য ও অফিসারদের কাছে। তৎকালীন মেজর জিয়া (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি)সহ বেশ কজন বাঙালি অফিসার গোপনে পরিস্থিতি আলোচনা করেন এবং প্রয়োজনে বিদ্রোহ বা অভ্যুত্থানের কথা ভাবতে থাকেন। বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রামের তৎকালীন জ্যেষ্ঠতম বাঙালি সেনা অফিসার ও চট্টগ্রাম গ্যারিসনের স্টেশন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার এম আর মজুমদারকে বাদ দিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারের প্রধান প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম আর চৌধুরীর নেতৃত্বে বিদ্রোহের জন্য মনস্থির করেন অন্য বাঙালি অফিসাররা। ২৫ মার্চের আগেই পশ্চিমা বিহারি সম্প্রদায় ও তাদের বাড়িতে গোপনে আশ্রয় নেওয়া পাকিস্তানি সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে চলমান আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে বাঙালিদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২১ মার্চ ইবিআরসিতে কর্মরত বাঙালি অফিসারদের নিয়োগ করা হয় চট্টগ্রাম শহরের সেনানিবাসের উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। এভাবে দ্রুতই গড়াতে থাকে সময়। ২৪ মার্চ ব্রিগেডিয়ার এম আর মজুমদার এবং ক্যাপ্টেন আমিন আহাম্মেদ চৌধুরীকে (পরবর্তীতে জেনারেল) হেলিকপ্টারযোগে হঠাৎ করেই ঢাকায় নেওয়া হয়। একই দিন প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হন লে. কর্নেল এম আর চৌধুরী।

২৫ মার্চ ১৯৭১ সাল, সব সেনানিবাসের মতো চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং বাঙালিদের প্রাণকেন্দ্র ইবিআরসিতে বিরাজ করছিল এক অস্থির পরিবেশ। সাধারণভাবে নিজেদের সুরক্ষার জন্য সেনানিবাসের প্রতিটি স্থাপনা বা ইউনিটের চতুর্দিকে নিজস্ব সৈন্যদের প্রহরায় নিয়োজিত করা হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে সৈন্যসংখ্যা বাড়িয়ে তৈরি করা হয় পেরিমিটার গার্ড বা কর্ডন। ২৫ মার্চ তাই করা হলো ইবিআরসিতে। এ দিন সকালেই আসন্ন বিপদ আঁচ করতে পারেন ইবিআরসির প্রধান প্রশিক্ষক লে. কর্নেল এম আর চৌধুরী। তিনি দ্রুতই ডেকে পাঠান আরেক বাঙালি অফিসার তৎকালীন ক্যাপ্টেন এনামুল হক চৌধুরীকে। নির্দেশ দিলেন বাঙালি সৈন্যদের মধ্যে অস্ত্রশস্ত্র বিতরণ করে দিতে। তারই নির্দেশে সৈন্যদের বিভিন্নভাগে বণ্টন করা হয় এবং পরিস্থিতি ও করণীয় বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে বেলা ১১টায় ইবিআরসির একদল বাঙালি সেনা নিয়োজিত করা হয় সেনানিবাসের বাইরে আন্দোলনরত অন্য বাঙালিদের দেওয়া রাস্তার ব্যারিকেড সারানোর জন্য। সন্ধ্যায় আরেক দল বাঙালি সৈন্য নিয়ে পাঞ্জাবি অফিসার মেজর কামালের নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন আজিজ চট্টগ্রাম বন্দর রওনা হন।

২৫ মার্চ রাতে ইবিআরসিতে কর্তব্যরত ছিলেন তৎকালীন ক্যাপ্টেন এনামুল হক চৌধুরী। ঢাকায় তখন কুখ্যাত অপারেশন সার্চলাইট শুরু হয়ে যায়। দ্রুতই টেলিফোনে ক্যাপ্টেন এনাম পিলখানা, রাজারবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের আঘাত হানার খবর পান। খবর পান লে. কর্নেল এম আর চৌধুরীও। মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেন অস্ত্রাগারের সব অস্ত্র বাঙালি সৈন্যদের মাঝে বিতরণ করার। তিনি অসুস্থতাকে উপেক্ষা করে দ্রুতই ইবিআরসিতে তার অফিসে আসছেন বলে জানান ক্যাপ্টেন এনামকে। এদিকে ক্যাপ্টেন এনাম তার অধীনস্থদের ডেকে অস্ত্রাগার থেকে সব অস্ত্র বের করার আদেশ দেন। কিন্তু অধীনস্থরা অস্ত্রাগারে পৌঁছার আগেই অস্ত্রাগার রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাঙালি সৈনিকদের ওপর গুলি চালায় চট্টগ্রাম সেনানিবাসেরই আরেক ইউনিট ২০ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা। যার নেতৃত্ব দেন রেজিমেন্টের স্বয়ং অধিনায়ক বেলুচ অফিসার লে. কর্নেল ফাতমী। চারদিক থেকে তখন কেবল রাইফেল আর লাইট মেশিনগানের গুলি ছুটছিল। ঘুমন্ত বাঙালি সৈন্যদের সবাই তখন হতভম্ব। এদের মধ্যে দুটি কোম্পানিতে নতুন সৈন্য ছিল ছয় শতাধিক। তখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজযোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্দেশে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হতো বিভিন্ন কোর ও রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের। তাদের জড়ো কারা হতো ইবিআরসির একটি কোম্পানিতে। যা হোল্ডিং কোম্পানি নামে পরিচিত ছিল। এই হোল্ডিং কোম্পানিতে সে রাতে পাঁচ শতাধিক সৈন্য ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণে প্রধান ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত ছিল শতাধিক বাঙালি অফিসার, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার, সাধারণ সৈনিক বেসামরিক কর্মচারী।

তাদের অনেকেই সপরিবারে বাস করতেন ইবিআরসির আশপাশের বাসস্থানে। বাঙালি হওয়ার অপরাধে তাদের সবার ওপর একসঙ্গে আক্রমণ চালায় ২০ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা। সাধারণ অস্ত্রের পাশাপাশি নিরীহ ও ঘুমন্ত সৈন্যদের ওপর নিক্ষেপ করা হয় মর্টার শেল বা বোমা। রংপুর থেকে আনা ট্যাংকও ব্যবহার করা হয় সৈন্যদের ওপর। ট্যাংকের গোলা ও মর্টার বোমের তীব্র শব্দে, চাপা পড়ে বাঙালি সৈন্যদের মৃত্যু যন্ত্রণার করুণ আর্তনাদ। তারপরও যখন কোনো আহত বা অর্ধমৃত সৈন্যের শব্দ পাওয়া যেত, বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হতো তাদের। কিছু সৈন্য জীবন রক্ষার চেষ্টায় পাশের পাহাড় ও জঙ্গলে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে নিষ্ঠুর বেলুচরা সেখানেও ছুটে যায় এবং জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এদিকে ইবিআরসি অফিসার্স মেস থেকে ধরে আনা হয় প্রধান প্রশিক্ষক লে. কর্নেল এম আর চৌধুরীকে। মেসসংলগ্ন টেনিস গ্রাউন্ডে তাকেও হত্যা করা হয়। পরদিন ইবিআরসি এবং এর আশপাশের এলাকা তল্লাশি করে অসংখ্য মৃতদেহ স্তূপ করা হয় ইবিআরসি সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ইবিআরসির কয়েকজন বাঙালি সেনাদের দিয়ে এসব মৃতদেহ একটি গণকবরে সমাহিত করা হয়, যা বর্তমানে ‘অজানা শহীদ সমাধি’ নামে পরিচিত। সেই রাতে এবং তারও পরে ইবিআরসির সব নথিপত্র পুড়ে ফেলে পাকিস্তানি সৈন্যরা। তাই এই শহীদের সঠিক পরিচয় কিংবা প্রকৃত সংখ্যা আজও অজানা। পরবর্তীতে শরীয়তপুর নিবাসী তৎকালীন নায়েক (করপোরাল) আ. রশীদের বর্ণনায় জানা যায়, চট্টগ্রামে পোর্ট ডিউটির নাম করে ইবিআরসি যে সেনা সদস্যদের চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়, তাদের ব্রাশফায়ারে মেরে ফেলা হয়। ইন্টারোগেশনের নামে চট্টগ্রাম জেলেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ইবিআরসির আরও অনেক সদস্যকে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার (নায়েক আ. রশীদ) ধারণা মার্চেই ইবিআরসি এবং তার আশপাশে সহস্রাধিক বাঙালি সৈন্য হত্যা করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া এবং পরে লাশ সৎকারে বাধ্য হওয়া ইবিআরসির তৎকালীন সুবেদার (করণিক)-আব্দুস শুকুর ২৬ মার্চ দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত একাই ৩১টি লাশ কবরস্থ করেন বলে সাক্ষ্য দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) আমিন আহাম্মেদ চৌধুরী বীরবিক্রমের বর্ণনা মতে, ২৫ মার্চ রাতে ইবিআরসিতে প্রাণ হারানো শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৩৫ জন। ইবিআরসিতে ২৫ মার্চ রাতে ডিউটিতে থাকা ক্যাপ্টেন এনামুল হক চৌধুরীকে বেঁধে রেখেছিল বেলুচ সৈন্যরা। একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার বর্ণনায় জানা যায়, শতাধিক মৃতদেহ তার সামনে দিয়ে শিয়াল কুকুরের মতো টেনে-হিঁচড়ে গণকবরের দিকে নেওয়া হয়। অর্ধমৃত ও আহতদের গলায় বুট দিয়ে পাড়া দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পাঁচ শতাধিক বাঙালি সৈন্যকে ইবিআরসির স্কুলে বেঁধে রাখা হয়। কয়েকজন সামরিক ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে ইবিআরসিতে প্রাণ হারানো শহীদের সংখ্যা সহস্রাধিক বলে উল্লেখ করেন প্রত্যক্ষদর্শী ক্যাপ্টেন এনাম। গর্বের বিষয়, মৃত্যুর এই উপত্যকা থেকে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সেনারা পরে আবারও জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাদেরই একজন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি আবদুল হামিদ।

লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

 

 

সর্বশেষ খবর