শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা আমাদের হোমল্যান্ড

আমিনুর রশিদ, চেয়ারম্যান, এডিসন গ্রুপ

আলী রিয়াজ ও সাইফ ইমন

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা আমাদের হোমল্যান্ড

ছবি : রোহেত রাজীব

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এডিসন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ। তিনি ইলেকট্রনিকস ব্যবসা থেকে শুরু করে এখন বিনিয়োগ করছেন আবাসন খাতে। বরাবরের মতো সফল তিনি এখানেও। আবাসন খাতে নিজের প্রতিষ্ঠানকে  অল্প সময়েই জনপ্রিয় করে তুলেছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি-

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনারা অনেক রকম ব্যবসা করছেন। হঠাৎ এ আবাসন খাতের ব্যবসায় কেন আসা?

আমিনুর রশিদ : আবাসন খাতে আমরা এসেছি ২০১৫ সালে। ফোকাস দিয়েছি ২০২১ সালের প্রথম দিক থেকে। সবাই চায় ব্যবসার প্রসার ঘটাতে। এই ভাবনা থেকেই আমরা এ ব্যবসায় এসেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ১০/১২টা সেক্টরে কাজ করেছি। এর আগে সিমেন্সে কাজ করতাম। জার্মান প্রতিষ্ঠান। আমি ছয়/সাতটা বিজনেস দেখতাম তাদের। পরবর্তীতে আমাদের ব্যবসা শুরু করার পর দেখলাম আবাসন খাতে কাজ করার অনেক জায়গা আছে। সব ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে ভোক্তাদের অগ্রাধিকার। প্রোডাক্ট কোয়ালিটি থেকে সময়মতো সেবা প্রদান সবকিছুতেই আমাদের ভোক্তাদের সন্তুষ্ট করাই শুধু নয়, আমরা চাই ভোক্তাদের বাড়তি কিছু দিতে। আমার খুবই অর্গানাইজড কোম্পানি। আবাসন খাতে কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি নেই বাংলাদেশে। আবার দেশেরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের ওপর ভোক্তারা সন্তুষ্ট নয়। আমরা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি। অল্প সময়ে আমরা মার্কেটে ভালো রেপুটেশন অর্জন করেছি। মাত্র এক-দেড় বছরেই আমরা প্রথম সারিতে চলে এসেছি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এত অল্প সময়ে কোনো প্রতিষ্ঠান এ রকম ভালো করেনি। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

আমিনুর রশিদ : ঠিক তাই। আমরা খুব অল্প সময়ে মানুষের মনে প্রবেশ করতে পেরেছি। এ আবাসন খাতে ভোক্তাদের অনেক রকম অভিযোগ আছে যে, তারা ঠিকমতো প্রোডাক্ট বুঝে পাচ্ছে না। এগুলো খুব বেসিক জিনিস। আমরা এ সমস্যা নিয়ে তো বটেই বরং আরও উচ্চ পর্যায়ে কাজ করছি। বেসিক চাহিদা পূরণের পরও আমরা কাজ করছি কীভাবে ভোক্তাকে খুশি করা যায় তা নিয়ে। যেমন ধরেন ডিজাইন ভালো করা থেকে শুরু করে অনেকে আছেন হয়তো এই দামে এ মেটারিয়াল এক্সপেক্ট করেনি; কিন্তু আমরা ঠিকই সরবরাহ করে যাচ্ছি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ভোক্তাদের কোন বিষয়গুলোকে আপনারা গুরুত্ব দেন?

আমিনুর রশিদ : আমাদের কাজ নিয়ে ভোক্তারা অনেক খুশি। কারণ অনেক সময় দেখা যায় জমির মালিক যিনি, তিনি বাড়ির অনেকটা অংশ নিজেই মালিক থাকেন, ফলে অন্যান্য ফ্ল্যাট মালিকরা হয়তো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না অনেক সময়। এখানে আমাদের কোনো জমির মালিক নেই। কারণ আমাদের বিজনেস মডেলটা অন্যদের থেকে আলাদা। ভোক্তারা সবাই অ্যাপার্টমেন্টের মালিক। আমরা এখানে নিজেরাই জমি কিনে ভোক্তাদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছি। অনেকেই এখন আমাদের প্রশংসা করছে যে এই অল্প সময়ে এত ভালো করতে পারছি। আমরা কিন্তু মূল্যও অনেক কমিয়েছি। ভালো মান যেমন নিশ্চিত করছি তেমনি মূল্যও কমিয়েছি। আবাসন খাতে নতুন হওয়ায় নিজেদের সুনাম বৃদ্ধি এবং ভোক্তাদের সন্তুষ্টির দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। অনেকে বলেন, সঠিক সময়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়েছি। সঠিক সময়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভোক্তারা যা কখনো আশা করেনি সেটা যখন পাবে তখন তারা বেশি খুশি হবে। আর আমরা এ জায়গাটিতেই বেশি কাজ করছি। আমি এক ডেভেলপারের বাসায় থাকি, কিছু দরকার হলে ফোন করলে বলা হয় সার্ভিস নেই আমাদের। এখনই আমাদের একটা দক্ষ সার্ভিস টিম হচ্ছে যারা যে কোনো সমস্যায় সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আবাসন খাতে ভোক্তাদের সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন করেছেন?

আমিনুর রশিদ : ঠিক তাই। অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও ভালো করছে এ বিষয়ে। তবে বেশি নেই। আবাসন খাতে অর্গানাইজড কোম্পানি খুব কম। এখানে কাজ করতে এসে দেখেছি যে অনেক রকম ঘাটতি আছে এ খাতে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাদের প্রকল্পগুলো ঢাকার কোন কোন এলাকায়?

আমিনুর রশিদ : আমাদের সব প্রকল্প বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। এ এলাকাটা আমরা বেছে নিয়েছি। কারণ ভোক্তাদের যে চাহিদা সেটা এখানে সবকিছু পূরণ করা সম্ভব। এ ছাড়া পাশেই রয়েছে ৩০০ ফুট সড়ক। ভবিষ্যতে আমাদের প্রকল্প বাড়াতে হলে পাশাপাশি অনেক সুযোগ রয়েছে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আবাসন ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বসুন্ধরাই কেন?

আমিনুর রশিদ : খুব সুন্দর প্রশ্ন। আমি আগেই বলেছি, বসুন্ধরা আমাদের হোমল্যান্ড। এখানে প্রচুর জমি রয়েছে কাজ করার জন্য। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ভালো। অন্যান্য জায়গা থেকে এখানে জমির দামও কম। আমাদের জন্যই এখানে সার্ভিস দিতে খুব ভালো হয়। কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে গেলে ক্লোজ সুপারভিশন লাগে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেকেই বসুন্ধরায় থাকেন। ফলে তারা সকালে অথবা বিকালে একবার ঘুরে এলেই ২০টি প্রজেক্ট দেখে আসতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে বসুন্ধরাই আমাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান। আমি যখন আফটার সেল সার্ভিস দেব তখন কিন্তু একটি টিম সেখানে রাখলেই হবে। বসুন্ধরার মতো এত বেশি জমি অন্য কোথাও নেই। এখানে ব্যবসা বৃদ্ধি করার অনেক সুযোগ রয়েছে। ভালো কোয়ালিটি প্রোডাক্ট রিজেনেবল প্রাইজের মধ্যে দিতে গেলে এটা শুধু বসুন্ধরাতেই সম্ভব।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বসুন্ধরায় আপনাদের কয়টি প্রজেক্ট চলছে?

আমিনুর রশিদ : বর্তমানে এখানে আমাদের ২০টি প্রজেক্টের কাজ চলছে। যার বেশির ভাগই অনেক বড় বড় প্রজেক্ট। বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ আমাদের খুব সহযোগিতা করছে। ওনারাও নিশ্চয়ই চান ভালো ডেভেলপাররা আসুক। তাহলে ভালো ভালো কাজ হবে। জীবনমান উন্নত থেকে উন্নততর হবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বসুন্ধরায় ভোক্তাদের রেসপন্স কেমন পাচ্ছেন?

আমিনুর রশিদ : খুবই ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। পাইলিং করার আগেই ৮০% বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বসুন্ধরায় জাপান রোডের পেছনে দুটি বড় প্রজেক্ট হচ্ছে আমাদের, যেখানে পাইলিং শেষ হয়নি কিন্তু ৮০% বিক্রি হয়ে গেছে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : করোনাকালের চ্যালেঞ্জটা আপনারা কীভাবে মোকাবিলা করলেন?

আমিনুর রশিদ : ২০২১ সালে করোনা যখন একটু কমে আসছিল আমরা তখন শুরু করি। করোনাকালে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। সেসময় আমরা যখন ভালো সার্ভিস দিচ্ছিলাম তখন অনেকেই আমাদের ওপর আস্থা রেখে আমাদের কাছে চলে আসে। হয়তো করোনাকালে ৩০% মার্কেট ডাউন হয়েছিল কিন্তু বাকি যে ৭০% সেখানে আমাদের শেয়ারটা খুব ভালো ছিল। আর গ্রুপ হিসেবে আমাদের তো অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। আমাদের ব্র্যান্ড সিম্ফোনি সবাই চেনে এক নামে। যেহেতু আমাদের অন্য ব্যবসায়িক ক্ষেত্রগুলো সুনাম কুড়িয়েছে দেশের মানুষের তাই এ আবাসন খাতেও মানুষের আস্থা অর্জন করতে আগের সুনাম কাজে লেগেছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি আমাদের সুনাম যেন অক্ষুণœ থাকে। আমাদের ফোকাসটা দীর্ঘমেয়াদি। আমরা যে কালচারটা তৈরি করছি সেটা চাইলেও যে কেউ হুট করে করতে পারবে না। পজিটিভ সার্কেলের স্পিডটা এখনই আমরা ক্রিয়েট করতে চাচ্ছি। আমাদের মার্কেটিং ভালো হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আবাসন খাতের যে সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত হয় সেখানে ফোকাস দিয়ে আপনারা কাজ করে যাচ্ছেন?

আমিনুর রশিদ : অবশ্যই তাই। পাশাপাশি আমি বলতে চাচ্ছি আপনি যে সমস্যার কথা বললেন সেটা বেসিক সমস্যা, সেগুলো তো অবশ্যই এর বাইরেও আমরা ভোক্তাদের আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য দিচ্ছি। এটাকে মার্কেটিংয়ের ভাষায় বলে ডিলাইটমেন্ট। বেসিক সমস্যাগুলো হওয়ার কথা নয়। সময় মতো ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে না পারা বা নিম্নমানের জিনিস ব্যবহার করা, এমন তো আসলে হওয়ার কথা নয়। আমরা এসব সমস্যা উতরে আরও বেশি ভোক্তাদের খুশি করতে চাচ্ছি। যেমন আমি আগেই পেয়ে গেলাম ডেলিভারি কিংবা মেটেরিয়ালস আরও ভালো দিচ্ছে এমন। একটি বিল্ডিং হওয়ার পরে নানারকম সমস্যা কিন্তু হতেই পারে। তাই আফটার সেলস সার্ভিসটা (বিক্রয় পরবর্তী সেবা) কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমরা নিশ্চিত করছি। আমাদের ভোক্তারা অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি বাড়ি বানানোর কার্যক্রম মনিটরিং করতে পারছে।

সর্বশেষ খবর