বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সম্ভাবনা অনেক, উদ্যোগ কম

মাসুদুর রহমান রিংকু, সভাপতি, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ

সম্ভাবনা অনেক, উদ্যোগ কম

রাজশাহীতে ভোগান্তি আর জ্বালানি সংকটে ব্যক্তিমালিকানায় শিল্প গড়ে উঠছে না। যারা আগ্রহ নিয়ে আসছেন তারা হতাশ হচ্ছেন ব্যাংকে গিয়ে। এখানে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা। কিন্তু জ্বালানি, যোগাযোগব্যবস্থা আর ব্যাংকের অসহযোগিতায় উদ্যোগ কম। শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে রাজশাহী  চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকুর সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছেন কাজী শাহেদ

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজশাহীতে এতদিনেও বড় শিল্প কারখানা গড়ে না ওঠার কারণ কী?

মাসুদুর রহমান রিংকু : ব্যক্তিমালিকানায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগ্রহ থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে না সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা। আপনি একটা কারখানা করবেন, এর অনুমতি পেতে যে পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয় তাতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কষ্ট করে অনুমতি পাওয়া গেল কিন্তু জ্বালানি সংকট। গ্যাস সংযোগ শুরু করা হয়েছিল। যখন ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হলেন তখন সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে দিল। তাহলে শিল্প গড়ে ওঠবে কীভাবে? আবার রাজনৈতিক নেতাদেরও এ নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখি না। অন্য বিভাগের এমপি- মন্ত্রীরা যেভাবে সংসদে শিল্পের কথা, বিনিয়োগের কথা বলেন, আমাদের এমপি- মন্ত্রীদের সেটা বলতে দেখি না।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজশাহীতে শিল্পায়নের সম্ভাবনা কতটা দেখেন?

মাসুদুর রহমান রিংকু : রাজশাহী অঞ্চলে শিল্পায়নের অফুরন্ত সম্ভাবনা আছে। ঐতিহ্যগতভাবে এ এলাকাটি আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। আম প্রক্রিয়াজাত করণের শিল্প গড়ে ওঠলে আয় বাড়ানো সম্ভব। ঠিক তেমনিভাবে শিম, বরবটি, আলু, টমেটো, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ অসংখ্য কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্প গড়ে তোলার সম্ভাবনা এখানে আছে। দেশের ডিমের একটা বড় জোগান রাজশাহী থেকে যায়। কৃষিভিত্তিক যে কোনো শিল্প গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে রাজশাহীতে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজশাহীতে শিল্প গড়তে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?

মাসুদুর রহমান রিংকু : রাজশাহী অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার ঘাটতি আছে। নৌপরিবহন ব্যবস্থা একেবারেই অনুপস্থিত। ১৯৭২ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী রাজশাহী থেকে ভারতের ধুলিয়ান হয়ে মায়া পর্যন্ত যে নৌপথটি চালু ছিল সেটি আবার চালু করা গেলে শিল্পের যেসব কাঁচামাল ভারত থেকে আমদানি করা হয় সেগুলো সহজ হবে। ঢাকা-রাজশাহীর দূরত্ব মাত্র ২৫০ কিলোমিটার, যা পাড়ি দিতে বর্তমানে ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ইউরোপ না হোক অন্তত পাশের দেশ ভারতের মানে উন্নীত করতে হবে রেলকে। রাজশাহী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। যাতে এখানকার শিল্প কারখানায় উৎপাদিত পণ্য সহজেই গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কোন ধরনের শিল্পে বিনিয়োগ করলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন?

মাসুদুর রহমান রিংকু : রাজশাহী কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। এখানে শিল্প গড়তে হলে কৃষিকে মাথায় রেখে করতে হবে। পাট শিল্প গড়ে তোলা এখানে অনেকটা সহজ। পাটের জোগান ভালো আছে। আম ও টমেটোকেন্দ্রিক শিল্প গড়ে তুলেছে কয়েকটি শিল্প গ্রুপ। ডেইরি ও পোল্ট্রিকে ঘিরে ব্যবসার ভালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যাংক ঋণের সুবিধা কতটা পায় ব্যবসায়ীরা?

মাসুদুর রহমান রিংকু : ধরা যাক টোটাল বিনিয়োগ ১০০ টাকা। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের জন্য ৭০ টাকা, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ টাকা। আর সারা দেশের জন্য ১০ টাকা। এ ১০ টাকার বিনিয়োগের সামান্য অংশ পেতেও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন। নতুন কোনো উদ্যোক্তা ব্যাংকে গেলে তার কাছ থেকে যে পরিমাণ কাগজপত্র চাওয়া হয়, তার আর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার আগ্রহ থাকে না। প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক মালিকদের অবহেলিত অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের পরামর্শ দিলেও তা হচ্ছে না। ফলে রাজশাহীতে শিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকলেও শিল্প গড়ে ওঠছে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর