বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

মোবাইল লেনদেনে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে

আলী রিয়াজ ও সাইফ ইমন

মোবাইল লেনদেনে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে

রেজাউল হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী, ইউসিবি ফিনটেক কোম্পানি লিমিটেড (উপায়)

 

রেজাউল হোসেন, ইউসিবি ফিনটেক কোম্পানি লিমিটেড (উপায়)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বাংলাদেশে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসার সূচনা ও উন্নয়নের অন্যতম কারিগর। বাংলাদেশের টেলিকম, ফিনটেক এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) সেক্টরকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। কাজ করেছেন গ্রামীণফোন, সিটিসেল,  এয়ারটেল ও বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে। তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এমএফএস খাত ১১ বছর অতিক্রম করেছে। এই খাত নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

রেজাউল হোসেন : মূলধারার ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনের আলোকে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু হয়। শুরুতে ২৭টি ব্যাংক এমএফএস সেবার অনুমতি পেলেও বর্তমানে ব্যাংক এবং ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি মিলে ১৩টি প্রতিষ্ঠান এই সেবাটি দিচ্ছে। অর্থ আদান-প্রদানে এক দশক আগে যে নবযুগের সূচনা হয়েছিল বর্তমানে তা কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের চাহিদা মেটাচ্ছে। এমএফএস ব্যবহার করে এখন প্রায় সব ধরনের আর্থিক লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। তবে আমি মনে করি এই অর্জনের পেছনে অনেক বড় অবদান হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঠিক সময়ে সঠিক রেগুলেশন ও দিকনির্দেশনা প্রদান এই খাতকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। একটা উদাহরণ দিয়ে যদি বলি- ২০২০ সালে সারা দেশ যখন কভিড-১৯ আঘাতে জর্জরিত, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন সীমা বাড়িয়ে দেয়। এতে এমএফএস-এর ব্যবহার বেড়ে যায় এবং মানুষের মাঝে এমএফএস অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতাও বেড়ে যায়; যা এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই ইতিবাচক। এমএফএস সেবা প্রদানকারীদের একটি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হওয়া জরুরি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশ কি ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে যাচ্ছে?

রেজাউল হোসেন : ক্যাশলেস সোসাইটি একটি অ্যাসপিরেশনাল টার্ম। মানুষ যত বেশি বেশি ডিজিটাল পেমেন্ট করবে তত দ্রুত দেশ ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে যাবে। তবে এখানেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি একটা ফ্যাক্টর। এমএফএস খাতের ব্যবসা অন্য চারটি খাতের ওপর নির্ভরশীল। এই চারটি খাত হলো- ব্যাংক, টেলিকম নেটওয়ার্ক, মোবাইল হ্যান্ডসেট এবং ইন্টারনেট। হ্যান্ডসেটের বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখনো দেশের মাত্র ২৫ শতাংশ গ্রাহক স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। এই জায়গাটায় আমাদের কাজ করতে হবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : উপায় নিয়ে পরিকল্পনা কী?

রেজাউল হোসেন : উপায় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক উপায়কে অনুমোদন প্রদান করে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস পরিচালনায়। উপায় ২০২১ সালের মার্চ মাসে যাত্রা শুরু করে। গ্রাহকরা অ্যাপ এবং ইউএসএসডি ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারছেন। আমাদের ব্যবসায়িক লক্ষ্য দেশে একটি ডিজিটাল পেমেন্ট ইকো-সিস্টেম তৈরির সহযোগী হওয়া। আমাদের প্রতিযোগীরা ১১ বছর আগে থেকে এই মার্কেটে আছে। তারা অনেক ম্যাচিউরড এই মার্কেটে। আমরা অন্য প্রতিযোগীদের পাশে নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করতে চাই। নিত্য নতুন উদ্ভাবনী সেবার মাধ্যমে বাজারে উল্লেখযোগ্য অংশীদারিত্ব অর্জন করতে চাই। গ্রাহকের লেনদেনের ধরন ও চাহিদা বিশ্লেষণ করে আমরা নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে চাই। এ জন্য আমরা কমার্শিয়াল, টেকনোলজিসহ সব ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করেছি। বর্তমানে উপায়-এর মাধ্যমে মোবাইলে টাকা লেনদেন, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, কেনাকাটার মূল্য পরিশোধ, রেমিট্যান্স গ্রহণ, বেতন প্রদান, এয়ারটাইম ক্রয় করা যাবে। সরকারের বিভিন্ন ভাতা বিতরণও উপায়ের মাধ্যমে যাচ্ছে। এ ছাড়াও গ্রাহকরা বেশ কিছু এক্সক্লুসিভ সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। যেমন- ইন্ডিয়ান ভিসা ফি, ট্রাফিক ফাইন এবং তিতাস গ্যাসের (প্রি-পেইড) বিল পেমেন্ট।  আমাদের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। আমাদের দেশজুড়ে প্রায় ১ লাখের বেশি এজেন্ট রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর