বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

৭৮৬ কোটি থেকে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা

তাজউদ্দীন আহমদ থেকে আ হ ম মুস্তফা কামাল

মানিক মুনতাসির

৭৮৬ কোটি থেকে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা

১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরই যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং ভঙ্গুর দেশ পুনর্গঠনে নেমে পড়েন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বৈদেশিক সাহায্যের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানদের কাছে ছুটে যান। এ সময় দারিদ্র্যতায় ছেয়ে থাকা দেশকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। স্বাধীনতার পরবর্তী ৩০ দেশের জন্য (১৯৭২-৭৩) অর্থবছরের প্রথম বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। যা ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। এর প্রায় ৫২ বছর পর আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্বাধীনতার পর প্রথম তিন বছর পেরিয়েছে দেশের বাজেট হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে। অবশ্য ২০১০ সালের পর প্রেক্ষাপট বদলে গেছে অনেকটা অবিশ্বাস্যভাবে। যেখানে দেশটির জন্মের পর বাজেটের বৃদ্ধির হার ছিল শত কোটি টাকা সেখানে ২০১০ সালের পর বাজেটের আকার বেড়েছে প্রতিবছর ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এমনকি চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বাড়ছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার। এর আগে ১৯৭২ সাল থেকে বাজেট ১ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হতে সময় লাগে ৩৭ বছর। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থউপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। এর পর পাঁচ বছর সময়ে ২ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয় দেশের বাজেট। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাজেট দাঁড়ায় ২ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকায়। অবশ্য ৩ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হতে এরপর মাত্র দুই বছর সময় নেয় সরকার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা (২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা) এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় বাজেট দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায়। পরের বছরই তা ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় এবং ব্যাপক হারে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ায় জিডিপি উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের দেশের তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশ। এতে ৫ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। সবশেষ আসছে বছরে প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এখন পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের ১৪ জন অর্থমন্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইফুর রহমান। দুজনই ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিতই টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেছেন আওয়ামী লীগের হয়ে। তিনি প্রথম বাজেট দেন ১৯৮২-৮৩ সালে, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে। সেটার আকার ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাঁর বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অসুস্থতার কারণে পুরো বাজেট সংসদে উপস্থাপন করতে না পারায় উত্থাপন করেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেট বক্তৃতার প্রধান শিরোনাম- কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন : এতে আটটি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। যা মূলত বর্তমান প্রক্ষাপটে দেশের জন্যই চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া বাজেট বক্তৃতায় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আটটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। অবশ্য সরকারি হিসাবে এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি এর হার আরও বেশি।

১ জুলাই থেকে ৩০ জুনকে অর্থবছর ধরে প্রতিবছর একটি করে বাজেট ঘোষণা করা হয়। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের বাজেটের একটি ব্যতিক্রমী ইতিহাসও রয়েছে। তা হলো এক অর্থবছরে দুবার বাজেট উপস্থাপনের উদাহরণও আছে। যেটি হয়েছিল ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ১৯৯৬-৯৭  অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এর পরে নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়ে মূল আর্থিক কাঠামো ঠিক রেখে নতুন করে বাজেট উপস্থাপন করেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। বর্তমানে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে দেশ। ফলফলারি, সবজি, মাছ, মাংস, দুধ ও ধান উৎপাদনেও বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিদেশেও কাজ করছেন। বলা যায়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে ১ কোটিরও বেশি বাঙালি। তারা প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যার ফলে বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যদিও আমাদের রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেশি। বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকায়।

সর্বশেষ খবর