বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
টানা ১৪ বার বাজেট

আওয়ামী লীগ সরকারের রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতা লাভের পর নতুন মানচিত্রে নতুন দেশের প্রথম বাজেট তৈরির দায়িত্ব পড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের তখনকার অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের হাতে। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। এরপর পেরিয়ে গেছে ৫০ বছর। ৫১তম বছরে এসে সেই আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৪তম বাজেট এবং ক্ষমতাসীন দল হিসেবে ২৪তম বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি রাজনৈতিক দলের সরকারের পক্ষ থেকে এত বেশি বাজেট দেওয়ার ইতিহাস আর নেই। এটি একটি রেকর্ড।  

১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে গণপরিষদে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যে বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন তার আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। আগামী ৯ জুন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, জানা গেছে তার আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আকারের দিক থেকে এটিও একটি রেকর্ড।   

মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মহাজোট সরকারের প্রথম যে বাজেটটি ঘোষণা করেন তার আকার ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশে সেই প্রথম বাজেটের আকার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাজেটটি ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। শেখ হাসিনার মহাজোট সরকারের ঘোষিত প্রথম বাজেটটিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অভিহিত করেছিলেন দিন বদলের বাজেট হিসেবে। যদিও অর্থনীতিবিদদের অনেকে সেই সময় এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলে অভিহিত করেছিলেন। অর্থমন্ত্রী মুহিত নিজেও বলেছিলেন, তিনি এই উচ্চাভিলাষ নিয়েই অর্থনীতির আকার বাড়িয়ে যাবেন। শেষ পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় বাজেট অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের তৃতীয় বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটটি ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকার। নবম জাতীয় সংসদের শেষ বাজেট ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। অর্থমন্ত্রী মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন সেই বছর। ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য আড়াই লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট প্রস্তাব করা হয়।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ায় ছিটমহলবাসীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্লোগানে ৩ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক ছুঁয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটি গত মেয়াদের শেষ অর্থবছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে যাকে বলা হয় সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেওয়া বাজেট ছাড়িয়ে যায় ৫ লাখ কোটি টাকার গন্ডি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো বাজেট উত্থাপন করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরই মধ্যে সারা বিশ্বে করোনা মহামারির সংক্রমণ বাড়তে থাকে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার (কভিড-১৯) দ্বিতীয় ও তৃতীয় আঘাতের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করে উন্নয়ন বজায় ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করা হয়। করোনা মহামারি স্তিমিত হওয়ার পর আরেক বৈশ্বিক সংকটের মুখে বিশ্ব। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে দরিদ্রশ্রেণির মানুষ। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজের চতুর্থ ও দলের টানা চতুর্দশতম বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন যার আকার দাঁড়াচ্ছে প্রায় পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর