বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

যেভাবে তৈরি হয় জাতীয় বাজেট

সাইফ ইমন

যেভাবে তৈরি হয় জাতীয় বাজেট

প্রথমে অর্থনীতির ভাষায় বলা যায়, বাজেট হচ্ছে যে কোনো সরকারের সারা বছরের আয় ও খরচের হিসাব। এটি একটি রাজনৈতিক দলিলও। অর্থাৎ একটি দেশের সারা বছরের আয়-ব্যয়ের যে খতিয়ান সেটাকেই মূলত বাজেট বলা হয়। আর বাজেট তৈরি হয় একেক দেশে একেক নিয়মে। যেসব দেশের সম্পদ অনেক বেশি অর্থাৎ উন্নত বা কল্যাণকামী রাষ্ট্র সেসব দেশের বাজেট তৈরিতে সরকারকে তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না। কারণ তাদের সম্পদের কোনো অভাব থাকে না। জনগণের চাহিদার তুলনায় সম্পদের পরিমাণও থাকে প্রতুল। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল কিংবা দরিদ্র দেশের সম্পদের তুলনায় জনগণের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। সীমাহীন চাহিদার বিপরীতে সীমিত সম্পদ নিয়েই বাজেট তৈরি করতে হয়। এজন্য সরকারকে বাজেট তৈরির সময় আগের অর্থবছরের পূর্বাভাস দেখে পরের অর্থবছরে নির্ধারণ করা হয় সরকারের আয় ও খরচ। মূলত অর্থনৈতিক এ হিসাবের ওপর ভর করে এগিয়ে চলে কোনো একটি দেশের অর্থনীতি। বাজেটের প্রধান দুটি অংশ আয় ও ব্যয়। রাজস্ব আয়ের অংশটি নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে কোন কোন খাতে কর বা ভ্যাট বসবে কিংবা কোন খাতটি কর অব্যাহতি পাবে তা নির্ধারণ করে এনবিআর। অন্যদিকে বাজেটের খরচের খাতগুলো নির্ধারণ করে সরাসরি অর্থ মন্ত্রণালয় আর বাজেট তৈরির অন্যতম প্রধান সহযোগী আরেকটি সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে কোনো একটি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পরিকল্পনা করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এর বাইরেও প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের আলাদা চাহিদা ও বাজেট তৈরি করে। পরবর্তীতে ওই প্রস্তাবগুলো তারা অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। একইভাবে প্রতিটি ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানই তাদের রাজস্ব-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা এনবিআরের কাছে জমা দেয়। নতুন বছরের বাজেট তৈরি করতে প্রতি বছরের আগস্টে ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক শুরু হয়। বাজেটে কিছুটা সংশোধন আসে ডিসেম্বরে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকেই নতুন বাজেট প্রণয়ণের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শুরু হয়। এপ্রিলে হয় সম্পদ কমিটির বৈঠক। আর বাজেট প্রণয়নের দুই মাস আগে থেকেই চলে প্রাক বাজেট আলোচনা। এতে সামনের এক বছরের সম্ভাব্য ব্যয়গুলো একত্রিত করা হয়। সেগুলোর মোট হিসাবের ওপর অনুমান করে সম্ভাব্য মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এরপর খোঁজা হয় আয়ের পথ বা উৎস। আয়ের সম্ভাব্য উৎসগুলোকে তালিকা করে সেখানে কোন উৎস থেকে কী পরিমাণ আয় হতে পারে তার একটি ফিরিস্তি তৈরি করা হয়। সেটাকেই সম্ভাব্য আয়ের খাত হিসেবে ধরা হয়। এখানে বলে রাখা ভালো, ব্যক্তি বাজেট বা জাতীয় বাজেটের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো- ব্যক্তিগত বাজেট তৈরি করা হয় আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যয় ঠিক করার মাধ্যমে। আর জাতীয় বাজেটের ক্ষেত্রে এটা ঠিক উল্টো। ব্যয়ের তালিকা আগে করা হয় এবং সে অনুপাতে পরে আয়ের উৎস ও সম্ভাব্য আয় ঠিক করা হয়। বাংলাদেশের অর্থবছর ধরা হয় ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন। এটা অবশ্য বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

সর্বশেষ খবর