বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো পরিকল্পনা কাজে আসবে না

মোসুমী ইসলাম, প্রেসিডেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুট উইমেন এন্টারপ্রেনার্স, বাংলাদেশ

আলী রিয়াজ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো পরিকল্পনা কাজে আসবে না

প্রস্তাবিত বাজেটে ছয়টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে অর্থমন্ত্রী বক্তৃতা করেছেন। এর প্রথমটি মূল্যস্ফীতির কথা বলেছেন। আগামীতে দেশের অর্থনীতি ধরে রাখতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বাজেট বাস্তবায়নের কোনো পরিকল্পনা কাজে আসবে না। করোনার প্রকোপ কমলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে মারাত্মক সংকটে ফেলেছে। বাংলাদেশকে অধিকাংশ খাদ্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। একজন সাধারণ মানুষও জানে মূল্যস্ফীতি তার ওপর কতখানি প্রভাব ফেলেছে। তাই আগামীর বিনিয়োগ, শিল্প খাত উন্নয়ন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করার সময় হয়েছে। দেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ তৃণমূল নারী শিল্প উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা প্রোমিক্সকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক মৌসুমী ইসলাম।

মৌসুমী ইসলাম একজন তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের মেডিকেল ইক্যুয়িপমেন্ট পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিষয়ে কাজ করেছেন। তার উদ্যোগে এই পণ্যগুলো শিল্পপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্বীকৃতির জন্য তাকে দৌড়াতে হয়েছে সরকারের একাধিক বিভাগে। তার এই শ্রমের কারণে দেশে এখন উৎপাদন এমনকি রপ্তানিও হচ্ছে মেডিকেল ইক্যুয়িপমেন্ট। আগামীতে দেশের অর্থনীতি কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে সেসব নিয়ে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানো, বিদেশি সহায়তা বাড়িয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথা সময়ে বাস্তবায়ন করা, মূল্য সংযোজন করের পরিমাণ ও ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল রাখা। তিনি বলেন, এসব সমস্যা চিহ্নিত করা শুধু কাজ নয়, আমাদের এখন বাস্তবায়ন করার সময়। পরিকল্পনা করার সময় নয়। দেশের অনেক পরিবার তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে এনেছে। যারা ব্যয় কমায়নি, মূল্যস্ফীতির কারণে তারাও আগের সেবা পাচ্ছে না। বাস্তবায়ন কীভাবে হবে? অর্থ আসবে কোথা থেকে? সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরেছে। সরকার টাকার উৎস হিসেবে ব্যাংক ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা বেশি। ঘাটতি যদি ব্যাংক ঋণ থেকে নেওয়া হয় আমরা বিনিয়োগ করব কীভাবে? ব্যবসায়ীরা যদি বিনিয়োগ করতে না পারেন প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে। তাই সরকারের উচিত ঘাটতির অর্থ সংগ্রহের বিকল্প ভাবা। তার পদ্ধতিও আছে। দেশে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা কত কেউ জানে না। যারা লাইসেন্স নেয় তাদের যদি ডাটাবেজ থাকে, প্রতিবছর ফি নেয় ঘাটতি অনেক পূরণ হয়ে যাবে। আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে ব্যয় হবে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৯০ শতাংশ। কৃষকদের উৎসাহিত করতে কৃষিতে এবার রেকর্ড ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মৌসুমী ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ টাকার পরিমাণ যা বেড়েছে, তার বেশির ভাগ অংশই খরচ হয়ে যাবে বেতন-ভাতা বাবদ। বড় অংশ চলে যাবে সেখানে। নতুন কিছু করার সুযোগ হবে না এই বাজেট থেকে। ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার হওয়া টাকা বৈধ করার সুযোগ দিলেও খুব বেশি অর্থ দেশে আসার সম্ভাবনা কম। ১৭টি দেশ সাম্প্রতিক সময়ে একই চেষ্টা করেছে, কোনো দেশই খুব ভালোভাবে সফল হয়নি। দেশে এখন ৭৫ লাখ টিআইএনধারী আছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ২৫ লাখের মতো রিটার্ন জমা দেন। মানে হলো, আয় থাকলে কর দেন। বাকিরা টিআইএন নিয়ে মূলত বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন। ৩৮ ধরনের সেবার জন্য রিটার্ন দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে ওইসব সেবাদাতার ব্যবসা কমতে পারে।

সর্বশেষ খবর