করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিলেটের ব্যবসায়ীরা। গেল ঈদুল ফিতরের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকের আগমনও ঘটে। কিন্তু ঈদের ছুটির মধ্যেই সিলেটের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা এক পর্যটক পরিবারের সঙ্গে টোল আদায়ে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যদের ঘটে যায় অনাকাংখিত ঘটনা। পর্যটক পরিবারকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে অনেক পর্যটক সিলেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এর কিছুদিন পর থেকে সিলেটে টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ে। করোনার কারণে গেল দুই বছরের ক্ষতি সামাল দেওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা জাফলংয়ের অনাকাংখিত ঘটনা আর বন্যায় সেটা ভেস্তে যায়। ফলে চলতি মৌসুমে সিলেটের পর্যটন খাতে কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় গেল ঈদুল ফিতরে সিলেটে পর্যটকদের ঢল নামে। লাখো পর্যটক আসেন সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর আশপাশের স্থানীয় ব্যবসায়ও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরই মধ্যে গত ৫ মে জাফলংয়ে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা এক পর্যটক পরিবারের সঙ্গে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে টোল আদায়ে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের। টোল আদায় নিয়ে বাগ্বিতন্ডার একপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকরা ওই পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। এই ঘটনায় অনেক পর্যটক তাদের ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে সিলেট ত্যাগ করেন। এরপরে যারা সিলেট বেড়াতে আসতে চেয়েছিলেন তারা হোটেল বুকিং বাতিল করে দেন। পর্যটন ব্যবসায় পড়া এই বিরূপ প্রভাব কাটতে না কাটতেই সিলেটজুড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। ২০০৪ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা দেখেননি সিলেটের মানুষ। বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। রাস্তাঘাটও তলিয়ে যায় পানিতে। ফলে পর্যটনকেন্দ্রগুলো অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এতে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে সিলেট। ফলে সিলেটে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট খাত যেমন- হোটেল, রেন্ট এ কার, রেস্টুরেন্ট, হস্ত ও কুটিরশিল্প এসব ব্যবসায় চরম মন্দাভাব দেখা দেয়। করোনাকালীন অনেক মালিককে হোটেল চালু রাখতে গিয়ে ব্যাংক ঋণের আশ্রয় নিতে হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ব্যবসায় ধস নামায় তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। এ প্রসঙ্গে সিলেট হোটেল মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এ টি এম শোয়েব বলেন, ‘করোনার পর বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের পর পর্যটন ব্যবসা অনেক চাঙা হয়েছিল। ব্যবসায়ীরাও আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু জাফলংয়ের অনাকাংখিত ঘটনা এবং টানা বর্ষণ ও বন্যায় সেই আশায় গুড়েবালি পড়েছে। গেল কয়েক মাসে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কয়েক শ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী ঈদুল আজহার পর হয়তো এই খাতে আবারও প্রাণ ফিরতে পারে।’