শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পায়রা বন্দরের গতি বহুগুণ বেগবান হবে

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, (ট্যাজ) এনইউপি, পিপিএম, পিএসসি, বিএন

পায়রা বন্দরের গতি বহুগুণ বেগবান হবে

চেয়ারম্যান, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন হবে। পদ্মা সেতু আর পায়রা তৃতীয় সমুদ্রবন্দর দেশের বৃহত্তম দুটি প্রকল্প। এ প্রকল্প দুটি ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা ব্যবসা-বাণিজ্যে যোগ হবে নতুন দিগন্ত। সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার সেতুবন্ধন তৈরি হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দর এই দুটি ‘প’ দিয়েই কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্তব্য করেছেন পায়রা বন্দর চেয়ারম্যান।  পদ্মা সেতু চালুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের সামগ্রিক ক্ষেত্রে কী কী সুফল বয়ে আনবে এ নিয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন  পটুয়াখালী প্রতিনিধি সঞ্জয় কুমার দাস লিটু

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রমে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে আপনি মনে করেন?

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল :  স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর ফলে পায়রা বন্দরের গতি বহুগুণ বেগবান হবে। বিশেষ করে পায়রা বন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থার সর্বোচ্চ সুযোগ আসবে। পায়রা বন্দর এবং পদ্মা সেতু এই দুটি প্রকল্প খুব অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দুটি প্রকল্পই শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে ভীষণভাবে গুরুত্ব বহন করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে আমি মনে করি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে পায়রা বন্দর। বন্দরে মালামাল এলে বন্দর থেকে দেশ ও বহিঃবিশ্বে যায়, সে ক্ষেত্রে কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়। এ ক্ষেত্রে কিন্তু সড়ক যোগাযোগটা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতু হওয়া মানেই পায়রা বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগটা স্থাপিত হলো। সারা দেশের যোগাযোগই শুধু বলব না, পায়রা সেতু ও পদ্মা সেতুর ফলে বহিঃবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্ব বহন করবে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সংযুক্ত হবে। এই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমেই পায়রা সেতুর সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগটা স্থাপিত হতে যাচ্ছে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে বন্দর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কী ধরনের সুবিধা পাবে?

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল : যারা আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত তারা যখন সড়ক যোগাযোগটা পাবে তারা কিন্তু আগ্রহী হয়ে উঠবে পায়রা বন্দরকে ব্যবহার করার জন্য। এখন তাদের মালামাল ঢাকা থেকে আরম্ভ করে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে পাঠাতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  পায়রা বন্দর কী ধরনের বন্দর এবং এটার সুফল কেমন?

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল :  পায়রা বন্দর কিন্তু একটি আধুনিক বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বন্দরটি আধুনিক এবং পরিকল্পিত। ডেভেলপমেন্ট অনেকগুণ বেগবান হবে এই পদ্মা সেতুর কারণে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এখানে বেড়ে যাবে। বন্দর  হয়, সেটাকে কেন্দ্র করে আশপাশে গোটা শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে।

পদ্মা সেতু হওয়ায় পটুয়াখালী এবং বরিশাল বিভাগে মনে হয়, আমার ধারণা শিল্পায়ন থেকে আরম্ভ করে  দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিনিয়োগ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। সেখানে যেটি হবে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, মানুষের ভাগ্যের একটা বিরাট পরিবর্তন হবে। সুতরাং পায়রা বন্দর এবং পুরো পটুয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি মনে করি এই পদ্মা সেতু ভীষণ অবদান রাখবে, ব্যাপক অবদান রাখবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে পায়রা বন্দরের পক্ষ থেকে কী কী প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন?

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল : পায়রা বন্দরের সব সদস্য অত্যন্ত আনন্দিত। আমরাও আমাদের বন্দরের কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার জন্য এই সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের বন্দরের বিভিন্ন ফ্যাসিলিটি ডেভেলপ করছি। ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করছি। ইনশা আল্লাহ একই তালে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  পায়রা বন্দরকে ঘিরে ইপিজেডসহ দক্ষিণাঞ্চলে আর কী কী প্রকল্প হচ্ছে?

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল : শুধু ইপিজেড হচ্ছে, তা আমি বলব না। পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ হয়েছে এবং হচ্ছে। পায়রা বন্দরকে ঘিরে ১৯টি কম্পানেন্ট হবে। ইপিজেড হবে, এলাকায় এয়ারপোর্ট হবে, এলইডি টার্মিনাল হবে, রিফাইনারি হবে, পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে বন্দর সহায়ক শিল্প গড়ে উঠবে। এগুলো শিল্প বন্দরের ভিতরে, বন্দরের বাইরে এবং ইপিজেডে গড়ে উঠবে। বহু শিল্প গড়ে উঠবে বলে আমার আশা।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : পায়রা বন্দর স্থাপনের কারণে কী কী পরিবর্তন আসছে?

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল : পায়রা বন্দরের জন্যই পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। কারণ যেহেতু কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তাই পায়রা বন্দরের মাধ্যমেই কিন্তু বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি হচ্ছে। একটা জাতির উন্নতির পেছনে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বন্দরের প্রথম আধুনিক টার্মিনাল ও মাল্টিপারপাস টার্মিনালের সর্বশেষ কী অবস্থা?

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল : আমাদের প্রথম টার্মিনালের কাজ কিন্তু দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের মার্চে আমরা এটি উদ্বোধন করার চিন্তা করছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ ড্রেজিং কার্যক্রম ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প আমরা আগামী আগস্ট মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু করব। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। ড্রেজিং আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আমি আশা করছি। আর ড্রেজিং কার্যক্রম শেষ হলে বাংলাদেশের তিনটি বন্দরের মধ্যে পায়রা বন্দর হবে সবচেয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর। তখন পায়রা বন্দরে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ মালামাল নিয়ে সরাসরি জেটিতে চলে আসবে, যেটি আর কোনো বন্দরে সম্ভব নয়। ভারত, নেপাল ও ভুটানের থেকে সবচেয়ে কাছের বন্দর হলো পায়রা বন্দর। সুতরাং এই বন্দরের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যাবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এ পর্যন্ত কতগুলো জাহাজ এসেছে এবং রাজস্ব আয় কত হয়েছে।

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল : বন্দরের কিন্তু পুরোপুরি সুযোগ-সুবিধা ডেভেলপ হয়নি। তারপরও কিন্তু আমরা এ পর্যন্ত ২০৩টি বিদেশি জাহাজ একদম সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে হ্যান্ডেল করেছি এবং প্রতি সপ্তাহে আমরা দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদভাবে নতুন নতুন জাহাজ আমরা হ্যান্ডেল করছি। পাশাপাশি আমাদের বন্দরের মাধ্যমে সবমিলিয়ে ৪০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আসছে। এখনো কিন্তু চালু হয়নি, যখন পুরোপুরি চালু হবে তখন বছরে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে আমি আশা করি। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে পুরো দেশ উন্নত হবে। মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নিয়ে আমাদের একাধিক মিটিং হয়েছে।  করছি এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় আমরা পরিকল্পনা করছি।  ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট নিয়ে আমরা কাজ করছি।

সর্বশেষ খবর