বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বড় হচ্ছে দেশের সিরামিক শিল্প

আসছে হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বড় হচ্ছে দেশের সিরামিক শিল্প

আবাসন শিল্পের প্রসারের ওপর নির্ভর করে দেশের সিরামিক শিল্প এখন উদ্যোক্তাদের কাছে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ খাত হয়ে উঠেছে। নতুন নতুন বিনিয়োগ আসছে এই খাতে। তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সিরামিক পণ্যের বিপুল চাহিদার ওপর নজর রাখছে। স্থানীয়ভাবে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা।

এরই মধ্যে দেশের সিরামিক শিল্পে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরব আমিরাতভিত্তিক সিরামিক ব্র্যান্ড কোম্পানি আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড। নতুন কারখানাটি স্থাপন হলে প্রায় দেড় হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। পরবর্তী ১০ বছরে কারখানাটির গ্রস মুনাফা দাঁড়াবে বার্ষিক প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

কোম্পানিটির চিফ অপারেটিং অফিসার সাধন কুমার দে বলেন, দেশের নির্মাণশিল্পের প্রসারের ফলে সিরামিক শিল্পের চাহিদা বাড়ছে। তাই রাজধানীর অদূরে গাজীপুরে স্থানীয়ভাবে দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য তারা উন্নত প্রযুক্তির আন্তর্জাতিকমানের সিরামিক কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এর ফলে কোম্পানিটির বর্তমান বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৩ লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট থেকে ১৫ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৫ লাখ কোটি বর্গফুটে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের নির্মাণশিল্প সিরামিক খাতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে গাজীপুরে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে একটি বৃহৎ সিরামিক কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে আরএকে সিরামিকস-এর বোর্ড সভায়। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত কারখানাটির উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের যেসব পণ্যের চাহিদা বিশ্ববাজারে গত দুই দশকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে সিরামিক পণ্য তার অন্যতম। বিশ্ববাজারে রপ্তানি পণ্যে শীর্ষ তালিকায় এখন দেশে উৎপাদিত সিরামিক পণ্য। দেশীয় বাজারের চাহিদাও বেড়েছে গত দুই দশকে কয়েক গুণ। বিশেষ করে সারা দেশে আবাসন খাতের উন্নয়নে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সিরামিক পণ্যের চাহিদা। এতে দেশের শিল্প খাতে কর্মসংস্থানেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। শুধু সিরামিক খাতে এখন ৫ লাখের বেশি লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। 

দেশের সিরামিকস শিল্প নিয়ে একটি গবেষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডি। সংস্থাটির তথ্য মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে উদীয়মান খাত সিরামিকস।

টানা পাঁচ বছরে ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তথ্য দিয়ে সংস্থাটি বলছে, ২০১৮ সালের শেষে বাংলাদেশে সিরামিক শিল্পের বাজার আকৃতি ছিল ৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে টাইলসের বাজার।

সিরামিক শিল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন নগর সম্প্রসারণ হচ্ছে, তেমনি গ্রামগঞ্জেও পাকাবাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। জমির স্বল্পতায় এখন শহরের মতো গ্রামেও অল্প জায়গায় পরিকল্পিত বাসস্থান নির্মাণ হচ্ছে। ফলে ওইসব পাকাবাড়িতে টাইলসের ব্যবহার বেড়েছে। আর স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হওয়া এই বর্ধিত চাহিদা মেটাতেই দেশের সিরামিক শিল্পে নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এসব কারণে ২০ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দেশের সিরামিক বাজার ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশিতে উন্নীত হয়েছে।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সূত্রগুলো জানায়, দ্রুত নগরায়ণ বৈচিত্র্যময় আবাসন এবং জনগণের আয় বাড়ার কারণে আবাসনের সৌন্দর্য ও কারুকার্যের ওপর ঝোঁক বাড়ছে দেশের মানুষের। এসব কারণে দেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এই শিল্পে ঝুঁকছে। আকিজ গ্রুপ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের মতো ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ শিল্পে বিনিয়োগে আসছে। এ ছাড়া শেলটেক, ডিবিএল, গ্রেটওয়াল এবং আরএকে সিরামিকস-এর মতো আন্তর্জাতিক

  কোম্পানিগুলো এ শিল্পে নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানায় আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লি.।

কোম্পানিটির সচিব মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় কোম্পানিটির যে সিরামিক পণ্য তারা বাজারজাত করেন, বাংলাদেশেও সেই একই পণ্য তারা বাজারজাত করছেন। অঞ্চলভিত্তিক তাদের পণ্যের কোনো ভিন্নতা নাই। তারা সারা বিশ্বে একই মানের পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। তবে অঞ্চল ও সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে তাদের প্রস্তুতকৃত সিরামিকের ডিজাইন ও আকারে ভিন্নতা আসে। বাংলাদেশে তাদের নির্মিত সিরামিকগুলোতে অ্যান্টি স্কেডিং (পিছলে না যায়), অ্যান্টি ব্যাকটোরিয়াম (বাথরুমের জন্য) ইত্যাদি প্রযুক্তি যুক্ত করছেন বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর