বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রতিযোগিতা স্বাস্থ্যকর হলে আরও উন্নত হবে ব্যাংকিং খাত

মো. আহসান-উজ-জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড

প্রতিযোগিতা স্বাস্থ্যকর হলে আরও উন্নত হবে ব্যাংকিং খাত
বেসরকারি খাতে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড। গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ এই ব্যাংক। আমাদের দেশে ব্যাংকিং সেবায় ইতোমধ্যে নয় বছর পার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ আর ডিজিটাল সেবা দিয়ে সারা দেশে সুনাম কুড়িয়েছে। ব্যাংকিং খাতের নানা দিক নিয়ে মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান-উজ-জামান কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ ইমন ও ছবি তুলেছেন জয়ীতা রায়। 

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি কেমন?

আহসান-উজ-জামান : সার্বিকভাবে বর্তমানে স্থিতিশীল এবং শক্ত অবস্থানেই রয়েছে। হয়তো কিছু কিছু ব্যাংকের আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে একটু তারল্যের চাপ রয়েছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রেও একটু চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক অত্যন্ত সজাগ আছে। তারা নিয়মিত নজর রাখছেন। আশা করছি, সার্বিক পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল এবং স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আর দেশে ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকে। এই প্রতিযোগিতা স্বাস্থ্যকর হলে আরও বেশি উন্নতি আমরা দেখতে পারব। আর গ্রাহক পর্যায়ে যখন কেউ ঋণ নেয় তখন খেয়াল রাখতে হবে যে, যে খাতে ঋণ দেওয়া হয় সেই খাতেই যেন ঋণটা ব্যয় হয়। আমি আশাবাদী দেশের ব্যাংকিং খাতের উন্নতি বাড়ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাদের অগ্রাধিকার খাত কী কী?

আহসান-উজ-জামান : আমাদের অগ্রাধিকার খাত হলো ব্যক্তি ও ক্ষুদ্রঋণ। এ ছাড়া অগ্রাধিকার খাতের মধ্যে রয়েছে কৃষিখাত, নারীর ক্ষমতায়ন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ তৃতীয় লিঙ্গকে সহায়তা। আমরা বড় ঋণেও ফোকাস করি, অবকাঠামোর দিকেও নজর দেই। আমরা দীর্ঘমেয়াদি ১০ বছর পর্যন্ত সময়ের জন্য ঋণ দেই। বিশ্বব্যাংকের একটা ঋণ কর্মসূচি আছে, সেটার আওতায় আমরা অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কম খরচে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাদের ইসলামী ব্যাংকিং জনপ্রিয় কেন?

আহসান-উজ-জামান : আমি মনে করি যেভাবে আমরা ইসলামী ব্যাংকের উইন্ডো সাজিয়েছি, এই ক্ষেত্রে যেসব পণ্য প্রয়োজন যেমন গ্রাহক পর্যায়ে কিংবা বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রেসহ সব ক্ষেত্রে আমরা সহায়তা দিতে সক্ষম। আমাদের দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে উৎসাহ আছে। আমরা ধর্মপরায়ণ মানুষ। আমরা কিন্তু প্রবৃদ্ধির দিক থেকে যথেষ্ট গতিশীল। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং এপ্লিকেশন আছে যার নাম মিডল্যান্ড অনলাইন। এখানেও আপনি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং করতে পারবেন। যেভাবে আপনি আপনার নিজের জীবন পরিচালনা করতে চান কনভেশনাল অথবা শরিয়াহভিত্তিক আপনি পারবেন।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে আপনাদের কার্যক্রম কী?

আহসান-উজ-জামান : এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নীতিমালা যখন প্রণয়ন হয় তখন থেকেই আমরা এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ২০১৫-১৬ থেকেই আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করি। আমাদের শাখা যতগুলো আছে এর থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে উন্নতি হচ্ছে এবং আরও উন্নতির সুয়োগ রয়েছে। আর আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ে বিশ্বাস করি। এখানে তাকালে লক্ষ্য করবেন আমাদের দেশে অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে চলছি। তবে গ্রামগঞ্জে আপনি দেখবেন ব্যাংকের অভাব রয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে আমরা সেই জায়গায় কাজ করে আসছি যেখানে স্বল্পতা এবং অভাব আছে। এটা যথেষ্ট গতিশীল এবং যথেষ্ট নজর আমরা রাখছি। গ্রাহকরাও আমাদের গ্রহণ করেছেন। জেনে খুশি হবেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক ইকেওয়াইসি প্রবর্তন করেছে। যার মাধ্যমে আপনার যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে তাহলে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। বছর দুই আগে এটা শুরুর সময়েই এজেন্ট ব্যাংকিং আমরা চালু করেছি। যার ফলে এটার যথেষ্ট প্রসার ঘটছে। সীমিত আকারে ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে সুফল পাচ্ছেন। আগে এই সুযোগটাই ছিল না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সহায়তায় আপনারা কী উদ্যোগ নিয়েছেন?

আহসান-উজ-জামান : সরকারের যে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ রয়েছে এটা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়ী সবার ক্ষেত্রে আমরা চুক্তিবদ্ধ। যথাসাধ্য সহায়তা আমরা করে যাচ্ছি। যেখানে যার যত ক্ষতি হয়েছে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে আমি মনে করি, সম্পূর্ণ ক্ষতি কি পূরণ করা সম্ভবত যায় না। আমার এই বিষয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা করে যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব চেষ্টা করি। প্রণোদনা প্যাকেজে স্বল্প সুদে পুনঃঅর্থায়ন দেওয়া যাচ্ছে। আমাদের গ্রাহকদের সহায়তা আমরা দিয়ে যাচ্ছি প্রতি ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দীর্ঘ ৪০ বছর ব্যাংকিং খাতে কাজ করে যাচ্ছেন। এই খাতে পরিবর্তন কেমন হয়েছে?

আহসান-উজ-জামান : আমার মনে হয় ব্যাংকিং খাতের উত্থান ঘটেছে। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এখন তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে অনেক। গ্রাহক পর্যায়ে সুযোগ অনেক বেড়ে  গেছে। আমাদের দেশের কথা যদি চিন্তা করি, গ্রাহকদের হাতে ব্যাংক বেছে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেখানে সেবা ভালো পাচ্ছেন সেখানেই আপনি ব্যাংকিং করতে পারছেন। এখানেও একটা দায়বদ্ধতা চলে আসে যে, আমি সেবাটা কত উন্নত পর্যায়ে দিতে পারছি। সবার হাতেই এখন স্মার্ট ফোন রয়েছে। শাখায় আসার সময় না হলেও আপনি তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাংকিংটা ঘরে বসেই করতে পারছেন। এখানে অনেকগুলো ব্যাংক অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আমাদের দেশে বেসরকারি খাতে ব্যাংকিং অনেক দূর এগিয়ে এসেছে। আমাদের দেশের জিডিপির গ্রোথ, শিল্পায়নের বিপ্লব ঘটেছে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকিং খাতের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। আগে সরকারি বৃহৎ ব্যাংকগুলোর কাছে বেশি ব্যবসা থাকত। সেখানেও যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। তবে কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনা রয়েছে সেটা বেসরকারি খাতেও যে ঘটছে না নয়। তবে সংখ্যা অনুযায়ী তা কমই। এভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশে যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া হচ্ছে, এটাও বেসরকারি খাত থেকেই হচ্ছে। এটা হওয়া যে উচিত তা নয়, তবে হচ্ছে। তাই আমি মনে করি, ব্যাংকিং খাতে আমাদের অগ্রগতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ক্যাশলেস সোসাইটি সম্পর্কে বলবেন?

আহসান-উজ-জামান :  এটা সব ক্ষেত্রেই কাজ করবে তা নয়। গ্রামগঞ্জে ব্যাংকিং সুবিধা এখনো পৌঁছায়নি। ক্যাশলেসের প্রসঙ্গে আপনি কিন্তু তাদের বাদ দিতে পারবেন না। তবে উদ্দেশ্যটা হচ্ছে মাটির নিচে, বালিশের তলে এ রকম নানা জায়গায় যেন টাকা না থাকে তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি আমাদের লেনদেনের যেন একটা অ্যাকাউন্টিবিলিটি থাকে, তা নিশ্চিত করা। এটা ক্যাশলেসেই বেশি হয়। আগে আপনি কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করছেন এখন আপনি মোবাইল সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারছেন। আপনি দেখবেন এটা পুরোপুরিভাবে ইন্টার অপারেবল হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর