বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

লাইসেন্সে হয়রান ব্যবসায়ীরা

নবায়ন মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর করার প্রস্তাব

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

লাইসেন্সে হয়রান ব্যবসায়ীরা

লাইসেন্স জটিলতায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। নানা সংস্থার নানা লাইসেন্সে হয়রান উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা। কখনো যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর থেকে নিবন্ধন নাও তো কখনো সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করো। এখানেই থেমে নেই। শিল্পকারখানা স্থাপনে রয়েছে আরও নানা রকম ঝামেলা। স্থাপত্য অধিদফতর  থেকে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে পরিবেশ অধিদফতর- এ রকম নানা প্রতিষ্ঠানে দৌড়াতে হয় লাইসেন্স ও ছাড়পত্রের জন্য।

শুধু কি তাই, এর বাইরেও রয়েছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, শ্রম অধিদফতর, প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের কার্যালয়, প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়সহ নানা প্রতিষ্ঠানের নানা রকম লাইসেন্স। অভিযোগ রয়েছে, এসব লাইসেন্স নিতে গিয়ে ঘাটে ঘাটে টাকা গুনতে হয় ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের। উপরন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে বছর বছর আবার এসব লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। জটিলতা থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে তিন থেকে পাঁচ বছর করার প্রস্তাব দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।

এমসিসিআই-এর চিঠিতে বলা হয়েছে, লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ এক বছরের পরিবর্তে তিন থেকে পাঁচ বছর করা হলে সেটি ব্যবসাবান্ধব হবে। মেয়াদ বাড়ানোর কারণে যাতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি না হয়, সেজন্য মেয়াদের গুণিতক হারে নবায়ন ফি বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছে ঢাকার শিল্পোদ্যোক্তাদের এই সংগঠনটি।

এমসিসিআই সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম ওই চিঠিতে বলেন, দেশে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনেক লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করতে হয়। এর মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স, আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদফতরের লাইসেন্সসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধরনের ভিত্তিতে আরও অনেক রকম লাইসেন্স রয়েছে। সব ক্ষেত্রে এই লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ থাকে এক বছর। এসব লাইসেন্স প্রতি বছর নবায়ন করা খুবই ঝামেলাপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। অনেক সময় দেখা যায়, একবার নবায়ন প্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই আবারও নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্ধারিত সময় চলে আসে। এতে করে অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা-বাণিজ্য বাদ দিয়ে এসব লাইসেন্স নবায়নের পেছনে ছুটতে হয়।

এমসিসিআই-এর প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি বছর নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দফতরকে বলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য দফতরগুলোও যাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে সে লক্ষ্যে আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য যাতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউপির মতো স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার বিড়ম্বনা আর না পোহাতে হয়, সে ধরনের একটি প্রস্তাবও দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর দেওয়া এই প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর ইমপ্লিমেন্টেশন অব ডুয়িং বিজনেস রিফর্মস কমিটি’র সভায় উপস্থাপন করা হয়। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ এখনো এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি।

সর্বশেষ খবর