বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজন বৃহৎ পরিসরে স্থায়ী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন

সুব্রত রঞ্জন দাস, নির্বাহী পরিচালক, এসিআই মোটরস লিমিটেড

সাইফ ইমন

কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজন বৃহৎ পরিসরে স্থায়ী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন

এসিআই মোটরস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেছেন, ‘কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজন বৃহৎ পরিসরে স্থায়ী পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন। তাহলে কৃষিতে যে ঘাটতি রয়েছে তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’ দেশব্যাপী কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সার্ভে করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে সার্ভে করে এবং আশপাশের দেশের কৃষিচর্চা অনুধাবন করে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত করে প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের দেশে কৃষিপণ্য সিজনাল। এখানে গ্রিনহাউস ফার্মিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষিতে উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে। আমাদেরও প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও বেশি অভ্যস্ত হতে হবে। সরকারও এই ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিচ্ছে। ট্রান্সপ্লান্টার ও হারভেস্টারসহ অন্যান্য কৃষিনির্ভর যন্ত্র এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ব্যবহার হচ্ছে। কৃষিনির্ভর যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে মান এবং বিক্রয়-পরবর্তী সেবা এবং ক্ষেত্রবিশেষে আমরা বাকিতে পণ্য বিক্রয় করি। আপনাকে অবশ্যই মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেন কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। এসিআই মোটরস মানের ক্ষেত্রে কখনো আপোস করে না। আমাদের একটা ট্রাক্টর দিয়ে যে কাজ করা যায় তার চেয়ে ১০/১৫ গুণ বেশি সময় লাগত ম্যানুয়ালি কাজটা করতে। এক একর জমি চাষ করতে ট্রাক্টরে লাগে এক ঘণ্টা। লাঙল দিয়ে করলে লাগবে দুই দিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রিনহাউস বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন এনেছে। আমরা প্রায় ৮০ হাজার টন টমেটো আমদানি করি। যা আমরা গ্রিনহাউস ব্যবহারের মাধ্যমে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পারি। অন্যদিকে আদা, রসুন, পিঁয়াজ ইত্যাদি পণ্যের ক্ষেত্রেও সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৃহৎ পরিসরে পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। উৎপাদন বিবেচনায় দেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। যদি কেউ সঠিকভাবে গ্রিনহাউস প্রস্তুত করতে এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন, তবে খুব কম জায়গায় অনেক বেশি পরিমাণে সবজি ও অন্যান্য কৃষিজ ফসল উৎপাদন করতে পারেন।’ কৃষক লাভবান হলে সবাই লাভবান হবেন বলে মনে করেন এসিআই মোটরস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে কয়েক হাজার উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছি সারা দেশে। আমরা ২০ হাজারের ওপরে ট্রাক্টর পৌঁছে দিয়েছি কৃষকদের ঘরে। এই ২০ হাজার ট্রাক্টরে ১৭ থেকে ১৮ হাজার মানুষের জীবনের চাকা ঘুরে গেছে।’ এসিআই মোটরস ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে সব সময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে বিশ্ববিখ্যাত ইয়ানমার রাইস ট্রান্সপ্লান্টার চালু করার পর আরেকটি ল্যান্ডমার্কে পৌঁছেছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার এমন একটি প্রযুক্তি যা ধান রোপণের খরচ ৫০% পর্যন্ত কমায় এবং ফলন ১০% বৃদ্ধি করে এবং ৮০% শ্রম বাঁচায়। সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ‘আমাদের উন্নতমানের পণ্য, বিক্রয়-পরবর্তী সেবা ও সিআরএম (কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট) মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে আমরা প্রতিটি পণ্যে ভালো করছি। আমাদের সোনালিকা, ফোটন, ওয়াটার পাম্প, কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্ট এবং ইয়ামাহার উল্লেখযোগ্য বাজার রয়েছে। বর্তমানে ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড। এ খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি চলতি বছর ৭০ শতাংশের বেশি।’

২০০৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে এসিআই মোটরস। এগ্রিকালচার সেক্টরে বাংলাদেশে যতগুলো প্রোডাক্ট রয়েছে তার ৫০% মার্কেট শেয়ার এই প্রতিষ্ঠানটির। বাংলাদেশের তিন ভাগের এক ভাগ জমি এসিআই মোটরসের ট্রাক্টর দিয়ে চাষ হয়। এ ছাড়াও নতুন ধরনের মেশিনারিজও বাংলাদেশে চালু করে এসিআই মোটরস। কৃষিনির্ভর দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল শিল্পের বিকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে এই শিল্পে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এসিআই মোটরস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস। তিনি বলেন, ‘সরকার মোটরসাইকেল শিল্পকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগী। ২০১৮ সালে মোটরসাইকেল শিল্প নীতিমালা করা হয়। সেখানে ২০২১ সাল নাগাদ বছরে ৫ লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল, যা এ খাত অর্জন করেছে। ২০৩০ সাল নাগাদ মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ১০ লাখ। সেটাও অর্জিত হবে বলে বিশ্বাস করি।’

সর্বশেষ খবর