বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

উন্নত গ্রাহকসেবা ডিপিডিসির মূল উদ্দেশ্য

প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি

সাইফ ইমন

উন্নত গ্রাহকসেবা ডিপিডিসির মূল উদ্দেশ্য

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন সম্পর্কে বলুন।

বিকাশ দেওয়ান : নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে; যা চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর দেশের প্রথম পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালে শুরু হয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সিলেটে প্রথম সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) কর্তৃক সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯৬ সালে এসএইচএস চালু হওয়ার পর থেকে এটি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্মসূচি। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইডকল-এর মাধ্যমে সরকার কর্তৃক গৃহীত সমন্বিত কর্মসূচির কারণে এর সংখ্যা বাড়ছে। সোলার হোম সিস্টেমের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে সরকারি কয়েকটি কর্মসূচি যেমন- সৌর সেচ, সৌর মিনি/মাইক্রো গ্রিড, সোলার পার্ক, সোলার রুফটপ, সোলার বোটিং ইত্যাদি শুরু করেছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  গ্রাহকগণের সন্তুষ্টি অর্জন ও দেশের সেরা বিদ্যুৎ সংস্থা হওয়ায় আপনার ভূমিকা প্রশংসনীয়- এ সম্পর্কে জানতে চাই।

বিকাশ দেওয়ান : ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত বাল্ক রেটে বিপিডিবি হতে বিদ্যুৎ ক্রয় করে এবং একইভাবে বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত রেটে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। কাজেই মুনাফা নয়, উন্নত গ্রাহকসেবা প্রদান করে গ্রাহকগণের সন্তুষ্টি অর্জনই ডিপিডিসির মূল উদ্দেশ্য। আধুনিক বিতরণ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ একটি আধুনিক স্ক্যাডা (সুপারভাইজারি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডাটা অ্যাকুইজিশন) সিস্টেম গড়ে তোলার কাজ চলছে ডিপিডিসিতে। ভবিষ্যৎ ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্ক থাকবে ভূগর্ভে। ডিপিডিসির তত্ত্বাবধানে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ১ হাজার ২৮৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুতের তার মাটির নিচে পাঠাতে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এ-সংক্রান্ত দুটি প্রকল্প চলমান। স্থাপন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক আরএমইউ, লো-টেনশন ডিস্ট্রিবিউশন বক্স এবং কিয়স্ক ট্রান্সফরমার। পাশাপাশি চলছে স্মার্ট গ্রিড বাস্তবায়নের কাজ। ঢাকা শহর হয়ে উঠবে বৈদ্যুতিক খুঁটি, পুরনো ট্রান্সফরমার ও ঝুলন্ত তার থেকে মুক্ত। আমরা চাই ডিপিডিসি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আরও এগিয়ে যাক। দেশে-বিদেশে বিদ্যুৎ বিতরণ খাতের একটি উদাহরণ সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক ডিপিডিসি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : জিটুজি প্রকল্প সম্পর্কে বলুন।

বিকাশ দেওয়ান : প্রকল্পটির মাঠপর্যায়ের কাজ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হলেও কভিড-১৯ এর প্রভাবে শুরুর দিকে বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়, তবে এখন সব বাধা অতিক্রম করে পুরোদমে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলমান আছে। প্রকল্পের সার্বিক আর্থিক অগ্রগতি ২৫.৩৪% এবং সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৩২%। প্রকল্পের অধীনে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ বিভাগ মিলিয়ে ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় সর্বমোট ৫২টি নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ ও পুরাতন উপকেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধির সংস্থান রয়েছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের অধীনে টঙ্গী এলাকায় একটি অত্যাধুনিক ওয়্যারহাউস, ৪টি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ এবং ধানমন্ডি এলাকার বিদ্যমান বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে ভূগর্ভস্থ বিতরণ ব্যবস্থায় রূপান্তরের সংস্থান রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনার প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন সম্পর্কে জানতে চাই।

বিকাশ দেওয়ান : ডিপিডিসি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে ডিজিটাল ডিপিডিসিতে রূপান্তরে কাজ করছে। ডিপিডিসি কর্তৃক গৃহীত ডিজিটাল কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে কল সেন্টারভিত্তিক গ্রাহকসেবা, অনলাইন বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কিংবা ভিসা/মাস্টার/নেক্সাস কার্ড ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, মোবাইল অপারেটর এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চঙঝ-বেজড প্রি-পেইড মিটার অনলাইনে ভেন্ডিং ব্যবস্থাপনা, এসএমএস এবং ইমেইলের মাধ্যমে বিল এবং বিল পরিশোধের তথ্য প্রদান, জিপিএস বেজড মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক গ্রাহক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, ওয়েব বেজড স্টোর ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম, এইচআরএম, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ই-অকশন, ই-রিক্রুটমেন্ট, ইআরপি বাস্তবায়ন, ১১ কেভি ফিডার অটোমেশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সর্বোপরি ডিপিডিসি ধীরে ধীরে একটি পেপারলেস সংস্থায় পরিণত হবে।

সর্বশেষ খবর