শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

হাটহাজারীর লাল মরিচ দেশে-বিদেশে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

হাটহাজারীর লাল মরিচ দেশে-বিদেশে

হাটহাজারীর শুকনো লাল মরিচ। মরিচের রং আকর্ষণীয় লালচে। হলুদাভ সবুজ। হালকা মিষ্টি ও পুষ্ট দানাবিশিষ্ট। কাঁচা অবস্থায় মরিচের দৈর্ঘ্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ ইঞ্চি। ওপরের অংশের ব্যাস এক থেকে দেড় ইঞ্চি। এর সিংহভাগ চাষ হয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর অববাহিকায়। তাই এ লাল মরিচকে ‘হালদা মরিচ’ও বলা হয়। এ  মরিচ হাটহাজারী থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশ জয় করেছে। এখন বিশ্বের নানা দেশেও এটির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশে।  অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। স্বাদে-মানে জয় করেছে বিশ্ব। হাটহাজারী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় লাল মরিচ চাষ হয় এমন আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ২১২ হেক্টর। প্রতি বছর এসব এলাকায় লাল মরিচ উৎপাদন হয় প্রায় ৩১২ দশমিক ৮ মেট্রিক টন। বছরে এই মরিচ বিক্রি করে কৃষক আয় করেন ৬ কোটি টাকা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুন সিকদার বলেন, আবহাওয়া ইতিবাচক থাকলে প্রতি বছরই আবাদি জমিগুলোতে লাল মরিচের ফলন ভালো হয়। লাল মরিচ ফলনে কৃষকরাও অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৫ হাজার কৃষক প্রতি বছর ৩১২ দশমিক ৮ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন করেন। এ মরিচ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা, দেশের জেলা এবং বিদেশেও যায়। জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চাষ হয় সুস্বাদু এ মরিচের। বিশেষ করে হালদা নদীর চরের আশপাশের জমিতে। শুষ্ক মৌসুমে (অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাস) প্রাকৃতিক পরিবেশ ইতিবাচক থাকলে প্রতিজন চাষি ৭০ হাজার থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করেন। হেক্টরপ্রতি ফলন হয় প্রায় দেড় টন। এক ফসলি মরিচ চাষে ব্যয় হয় প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। মরিচ বিক্রি করা যায় দ্বিগুণ মূল্যে। হাটহাজারীর লাল মরিচের ঐতিহ্য সুদীর্ঘকালের। গোটা চট্টগ্রামের মানুষ এই মরিচ কিনতে শীত মৌসুমের অপেক্ষায় থাকেন। প্রতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার চাষি প্রায় ২১২ হেক্টর জমিতে মিষ্টি মরিচের চাষ করেন। প্রতি টন মরিচ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিবছর প্রায় ৬ কোটি টাকার মিষ্টি মরিচ উৎপাদিত হয়। হাটহাজারীর বেলে দোআঁশ মাটিতে এ মরিচের ফলন বেশ ভালো হয়। ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে এ মরিচের ফলন পাওয়া যায়। সাধারণত গোড়া পচন রোগ না হলে এর ভালো ফলন হয়ে থাকে। হাটহাজারীর লাল মরিচ প্রতি কেজি খুচরায় বিক্রি হয় ২৩০ থেকে ২৭০ টাকা এবং পাইকারি বিক্রি করা হয় ১৯০ থেকে ২১০ টাকায় (মৌসুমভেদে দাম কম-বেশিও হয়)। ভারত বা কুমিল্লার মরিচ ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও হাটহাজারীর মরিচ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ২৩০ টাকা থেকে ২৭০ টাকায়। এই লাল মরিচের গুঁড়ো উন্নতমানের প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এ মরিচ এখন যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে। সুনাম অর্জন করেছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সাউদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে।

সর্বশেষ খবর