বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশের ৯০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে বগুড়ার ফাউন্ড্রিশিল্প

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

দেশের ৯০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে বগুড়ার ফাউন্ড্রিশিল্প

বগুড়ায় বিসিক শিল্পনগরীতে জায়গা সংকটের মধ্যেও ভালো মানের কারখানা উৎপাদনমুখী হয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতির লড়াইয়ে নেমেছে। সহস্র শ্রমিকের মেধা আর শ্রমে ফেলনা লোহা থেকে আবারও তৈরি হচ্ছে কৃষি যন্ত্রাংশ। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিস্কুট, প্লাস্টিক, কীটনাশক, টিউবওয়েল, ওষুধ তৈরির কারখানা। বগুড়ার ফাউন্ড্রিতে উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রাংশ দেশের ৯০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে বগুড়ার ফাউন্ড্রিশিল্প কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে দেবে।

জানা যায়, শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় পঞ্চাশের দশকে প্রতিষ্ঠিত সব ভারী শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সত্তরের দশকে জেলায় মাঝারি ও ক্ষুদ্রশিল্প স্থাপনে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এ কারণে ১৯৬৪ সালে শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় সাড়ে ১৪ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় বিসিক শিল্পনগরী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেষ হয়ে যায় প্লটগুলো। উদ্যোক্তাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ১৯৮০ সালে আরও ১৮ দশমিক ৬৭ একর জায়গা সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু সেটির বরাদ্দও ১৯৯০ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এভাবে দুই দফায় নির্মিত মোট ২৩৩টি প্লটে ৮৫টি শিল্প ইউনিট গড়ে ওঠে। বগুড়ার বিসিকে তৈরি কৃষি যন্ত্রাংশের সারা দেশেই চাহিদা রয়েছে। বগুড়ায় ফাউন্ড্রিশিল্পে উৎপাদিত এই কৃষি যন্ত্রাংশ বিক্রি হয়ে থাকে ময়মনসিংহ, সিলেট, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায়।

বগুড়ার বিসিক শিল্পনগরীর মালিক ও কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরনো লোহা গলিয়ে বগুড়ায় ফাউন্ড্রিশিল্পের মাধ্যমে কৃষি কাজে ব্যবহার করার মতো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। জাহাজভাঙা লোহা, বাসাবাড়ি ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কারখানার লোহা, পুরাতন মোটর পার্টস গলিয়ে কৃষি, বাসাবাড়ি, বাস-মিনিবাস, ছোট বড় ইন্ডাস্ট্রি ও বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কলকারখানায় ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশও তৈরি হচ্ছে। কারখানায় তৈরি হচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনের সেচ পাম্প, লায়নার, পিস্টন, হস্তচালিত টিউবওয়েল, পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, লেদ মেশিন, গাড়ির ব্রেক ড্রাম, করাতকল, ফ্লাওয়ার মিল, টেক্সটাইল মিল এবং অয়েল মিল এমনকি ধানকাটা মেশিনসহ অন্যান্য মেশিনের যন্ত্রাংশ। বগুড়া বিসিকের জায়গা সংকট রয়েছে। এই সংকট দূর করা জরুরি। নয়তো বগুড়ার বিসিক শিল্পনগরী সংকটে পড়বে।

বিসিক কর্মকর্তারা জানান, আশির দশকে বগুড়ায় ধোলাইখাল মডেলে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের পাশাপাশি ফাউন্ড্রি এবং মেটাল শিল্পের ব্যাপক বিকাশ হলেও বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট না থাকায় উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়েই এসব শিল্পের অনেক ইউনিট আবাসিক এলাকায় স্থাপন করতে শুরু করেন। কোথাও কোথাও আবার চাষাবাদের জমিতে কলকারখানা স্থাপন করা হয়েছে। বিসিক শিল্প মালিকরা বলছেন, বগুড়া বিসিকে এখন পর্যন্ত আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই।

বর্জ্য ফেলার কোনো সুব্যবস্থা নেই। পানি নিষ্কাশন সহজে হয় না। বিসিকের মধ্যে বড় যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। করলেও মাল লোড আনলোডে পড়ে ঝামেলা পোহাতে হয়। বিদ্যুৎ সমস্যা রয়েছে। জায়গা সংকটের কারণেই বগুড়া বিসিক এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত বলে দাবি করেন মালিক পক্ষ।

বগুড়া বিসিকের ডিজিএমের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢালাই, ওষুধ, প্লাস্টিক, ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট, অ্যালুমিনিয়াম, কীটনাশকসহ এতে কারখানা রয়েছে ৯৩টি। জায়গা সংকটের কারণে নতুন করে কোনো কারখানা বাড়ানো যাচ্ছে না।

বগুড়া বিসিকে অবস্থিত শিল্প মালিক আজিজুর রহমান মিল্টন জানান, আশির দশকে ব্যক্তি উদ্যোগে বগুড়াতেই প্রথম ফাউন্ড্রি শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। বগুড়ায় ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬২টি। এর সঙ্গে আরও কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর ফাউন্ড্রিশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ওয়ার্কশপ রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১ হাজারটির মতো। বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ছোট-বড় কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।

ফাউন্ড্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আবদুল মালেক আকন্দ জানান, গার্মেন্টের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে এই ফাউন্ড্রিশিল্প। একই সঙ্গে      এই শিল্প দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

সর্বশেষ খবর