শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ডলার সংকটে অচল জাহাজভাঙা শিল্প

ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছেন না ইয়ার্ড মালিকরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্থানীয় বাজার খারাপ হওয়ার কারণে বেশির ভাগ ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ডলার সংকটে অচল জাহাজভাঙা শিল্প

ভালো নেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উপকূলে গড়ে ওঠা দেশের একমাত্র জাহাজভাঙা শিল্প। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, নতুন করে করারোপে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে এ শিল্পে। ফলে উপকূলে গড়ে ওঠা ইয়ার্ডগুলোতে জাহাজ ভাঙার সংখ্যা কমে হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন ওই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক মানুষ।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘বর্র্তমানে জাহাজভাঙা শিল্পের অবস্থা খুবই খারাপ। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছেন না ইয়ার্ড মালিকরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্থানীয় বাজার খারাপ হওয়ার কারণে সিংহভাগ ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে দেউলিয়া হওয়ার পথে। ইয়ার্ড বন্ধ হওয়ার কারণে শ্রমিকসহ এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।’

সীতাকুণ্ডের লালবাগ শিপ ব্রেকার্স লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আবু হাসেম আবদুল্লাহ বলেন, ‘এক সময় আমরা নিয়মিত ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টনের স্ক্যাপ জাহাজ ভাঙার জন্য আমদানি করতাম। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ধাক্কা খেলে তা সামলে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকে আরও বড় ধরনের ধাক্কা লাগে এ শিল্পে। এখন দুই থেকে ৩ হাজার টনের জাহাজ আমদানিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। গত তিন মাস ধরে ২ হাজার টনের একটি স্ক্যাপ জাহাজ আমদানির চেষ্টা করছি। ৮ থেকে ১০ ব্যাংকে গেলেও কেউ এলসি খুলতে রাজি হননি। সবাই বলছেন, ‘ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা সম্ভব নয়। স্ক্যাপ জাহাজ না থাকার কারণে ইয়ার্ড বন্ধ রয়েছে এক প্রকার।’

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) দেওয়া তথ্য মতে, এক সময় সীতাকুণ্ডের দেড় শতাধিক ইয়ার্ড চালু ছিল। এ ইয়ার্ডগুলোতে গড়ে প্রতি বছর ৩০০ জাহাজ ভাঙা হতো। কিন্তু নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে বর্তমানে ইয়ার্ড চালু রয়েছে অর্ধেকের চেয়ে কম। ভাঙার জন্য জাহাজ আমদানির সংখ্যা কমে হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ। চলতি বছরের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত স্ক্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে মাত্র ১০৩টি। অথচ ২০২১ সালে যা ছিল ২৮০টি। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে মাঝে জাহাজ আমদানি অনেকাংশ কমে এলেও ২০১৯ সালে তা ছিল ২২৯টি। ২০১৮ সালে সীতাকুণ্ডের ইয়ার্ডগুলোতে ভাঙা হয় ২১৫টি জাহাজ। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ২১৪টি। ২০১৬ সালে ২৫০টি এবং ২০১৫ সালে ২১২টি জাহাজ ভাঙা হয় ইয়ার্ডগুলোতে।

জানা যায়, এক সময় জৌলুসপূর্ণ ছিল সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকা। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট, নিত্যনতুন করারোপের কারণে উল্টো পথে হাঁটছে এ শিল্প। এক সময় দেড় শতাধিক ইয়ার্ডে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মরত থাকলেও এখন সেই ইয়ার্ডগুলোতে চলছে সুনসান নীরবতা। ইয়ার্ডগুলোতে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ কমে হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ। জাহাজ ভাঙার সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়ায় এতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে পুরনো জাহাজের ফার্নিচার, ইলেকট্রিক সামগ্রী, স্ক্যাপ লোহা বেচাকেনার দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং ইয়ার্ডের শ্রমিক, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বেকারের সংখ্যা লক্ষাধিক- এমন দাবি সংশ্লিষ্টদের।

সর্বশেষ খবর