বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

‘অর্থনীতির এত চ্যালেঞ্জ কখনো ছিল না’

সৈয়দ নুরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, ওয়েল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী

‘অর্থনীতির এত চ্যালেঞ্জ কখনো ছিল না’

সৈয়দ নুরুল ইসলাম গত তিন দশকে শূন্য হাতেই যাত্রা শুরু করে এখন ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও ২২ হাজার লোকবলের শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই ব্যবসায়িক পরিবারটি রপ্তানি নীতিমালা, তৈরি পোশাক খাত ও টেক্সটাইল খাতে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছে। সৈয়দ নুরুল ইসলাম ‘মালয়েশিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক, সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য, বাটেক্সপোর চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। শিল্প ব্যবসার অঙ্গনে শুরু থেকেই কঠিন সংগ্রামে এগিয়ে চলা সৈয়দ নুরুল ইসলাম কুরিয়ার সার্ভিসে সেলাই-সুতো, ডেলিভারি, রিসিভ করা, চালান লেখা থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব ধরনের কাজই করে এসেছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও বিশ্ব ব্যবসায়িক লেনদেন ও পরিধি নিয়েও তাঁর সম্যক জ্ঞান আছে। করোনা ও পরবর্তী বৈশ্বিক যুদ্ধ দামামায় সংগত কারণেই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা তীক্ষ্ম। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি তুলে ধরেন বাণিজ্যের বৈশ্বিক সংকট ও বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত, ব্যবসায়ী ‘থার্ড জেনারেশন’ ভাবনাসহ নানা তথ্যচিত্র।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কীভাবে যাত্রা শুরু ওয়েল গ্রুপের?

সৈয়দ নুরুল ইসলাম : শূন্য হাতেই শুরু করেছিলাম যাত্রাটি। ১৯৮৬ সালে ইন্ডেন্টিং দিয়েই শুরু আমার। ’৯৬ সালে এসে আমার বড় ভাইয়ের নেতৃত্বে (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-চউকের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম) আমরা লিমিটেড কোম্পানি করি। এতে আমরা সব ভাই-ই সমান অংশীজন। এরও আগের যাত্রাটির কথা বলতে গেলে, ১৯৭৩ এ ক্ষুদ্র পরিসরে সেলাই-সুতোর ব্যবসা শুরু করেছিলেন আমাদের বড় ভাই।

ওয়েল গ্রুপের আজকের অবস্থানের পেছনে আছে জেম থ্রেড লিমিটেড, ওয়েল থ্রেডের দীর্ঘ যাত্রার ইতিহাস। ৮৬ সালে সিটি কলেজের প্রফেসর নুরুল কবীর সাহেবের সঙ্গে বড় ভাই আবদুচ ছালামের অংশীদারি ব্যবসা শুরু হয়েছিল। সেই অংশীদারি ব্যবসায় দীর্ঘ ধারাবাহিকতা না থাকলেও পরবর্তীতে আমরা এগিয়ে যাই।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্তমানে ওয়েল গ্রুপের পরিধি কেমন?

সৈয়দ নুরুল ইসলাম : ওয়েল গ্রুপ এখন প্রায় ২২ হাজার কর্মী সহযোদ্ধার শ্রম ও মেধার প্রতিষ্ঠান। আমাদের ২২টি ইউনিট আছে। টেক্সটাইল, প্রিন্টিং, রেডিমেড গার্মেন্ট, গার্মেন্ট এক্সেসরিজ, স্পিনিং, ওইপিং ডায়িং ফিনিশিং, হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি। ‘ওয়েল ফুড’ ব্র্যান্ড হলেও এটি আমাদের সবচেয়ে ছোট ইউনিট। মোট টার্ন ওভারের ১০ শতাংশও নেই এতে। টেক্সটাইল খাতে চট্টগ্রামের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এখন আমাদের।

 

৫০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করে নিজেদের এক টাকাও আয় হয়নি বলে জানালেন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবার ‘ওয়েল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল ইসলাম সিআইপি।  তিনি বলেছেন, করোনার দুর্যোগ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা হলেও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যেন সব শেষ করে দিয়েছে।  ইউরোপ-আমেরিকার বাজার অস্থির

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : করোনা পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রভাব কতটুকু পড়েছে ব্যবসায়? এখন কী অবস্থা?

সৈয়দ নুরুল ইসলাম : করোনার কারণে আমাদের ২২ ইউনিটের প্রত্যেকটিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতি হয়ে ওঠে ভয়াবহ নাজুক। এমন পরিস্থিতি প্রায় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বিশ্ব। ২০২০-২১ সালে এই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় ভালো ব্যবসার আশা করেছিলাম। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ সব শেষ করে দিয়েছে। বাজার পরিস্থিতি অস্থির। ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা পণ্যের অর্ডার দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন। শিপমেন্ট হচ্ছে না। গেল অক্টোবর মাস ও চলতি নভেম্বরে শিপমেন্টের জন্য দেওয়া অর্ডার শিপমেন্ট হচ্ছে না। সময় পিছিয়ে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছর কিংবা এর পরে পরিস্থিতি কী হচ্ছে, আমরা টিকে থাকতে পারছি কি না, তা এখনই বলা মুশকিল। পরিস্থিতি ভয়াবহ নাজুক হয়ে উঠছে। নতুন নতুন দুর্ভাবনার জন্ম হচ্ছে।

বাংলাদেশে আমরা অনেকটা ভালোই ছিলাম। ২০১৯-২০ সালে ৫০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করেছে ওয়েল গ্রুপ। ২০১৭-১৮ এ গ্যাস সংযোগের সম্ভাবনার ইঙ্গিত পেতেই অনেক ব্যবসায়ী গ্রুপ নতুন নতুন বিনিয়োগ করেছেন। আমরা আমাদের নতুন বিনিয়োগকৃত মূলধন থেকে এক টাকাও এখনো পাইনি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশীয় শিল্পে গ্যাস সংযোগ সংকট কাটাতে এলএনজিনির্ভর সম্ভাবনার কারণে বিকশিত অন্য শিল্প গ্রুপগুলোর অবস্থা কেমন?

সৈয়দ নুরুল ইসলাম : আগেই বলেছি, গ্যাস সংযোগের সুযোগে আমরা খুব আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট বিষয়টি জাতীয় ইস্যু হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যের নার্ভখ্যাত বন্দরকেন্দ্রিক চট্টগ্রামের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও বিপুল সম্ভাবনার মধ্য থেকেও ১৫-২০ বছর ধরে গ্যাস সংকটের কারণে হতাশ হয়ে পড়েছিল। এলএনজি কানেক্টিভিটির কারণে আশাবাদী অন্য শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে ক্লিপটন, কেডিএস, জিপিএইচ, বিএসআরএমসহ অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন স্বপ্নে বুক বেঁধেছিল। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সেই এলএনজিরও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক কিউবিক মিটার যেখানে ১২ থেকে ১৩ ডলার ছিল, সেখানে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ ডলার পর্যন্ত! এর প্রভাব এসে পড়েছে সামগ্রিক ব্যবসায়।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জটা তাহলে এখন কী রকম?

সৈয়দ নুরুল ইসলাম : বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ভালোর দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোচ্চ সুষম ব্যবহার করা এখন প্রয়োজন।  আমাদের অর্থনীতি এত চ্যালেঞ্জে কখনো ছিল না। ১০-১৫ বছর আগে অর্থনীতির আকার ছোট ছিল। তাই ঝুঁকি ছিল অনেক কম। এখন আকার অনেক বড়। ঝুঁকিও অনেক বেশি। পরিস্থিতি উত্তরণে সবারই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যবসায় ক্রম উদীয়মানথার্ড জেনারেশন সম্পর্কে আপনার অভিমত কেমন?

সৈয়দ নুরুল ইসলাম : ‘থার্ড জেনারেশন’ অনেক বেশি বুদ্ধি দীপ্ত। যদিও পূর্বসূরিদের সঙ্গে ‘জেনারেশন গ্যাপ’ আছে, তবুও তাদের ভাবনা-চিন্তাকে স্বাগত জানাতেই হয়।

সর্বশেষ খবর