বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সিরামিক শিল্পে ১৩ হাজার কোটি টাকার বাজার

শাহেদ আলী ইরশাদ

সিরামিক শিল্পে ১৩ হাজার কোটি টাকার বাজার

বাংলাদেশের সিরামিক খাত একটি বৃহৎ শিল্পে রূপ নিয়েছে। দেশে গড়ে উঠেছে ৭০টিরও বেশি ব্র্যান্ড। প্রতি বছর ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। রপ্তানিও হচ্ছে বছরে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পণ্য।

গত ১০ বছরে দেশে সিরামিক পণ্যের বাজারে অনেক পরিবর্তন এসেছে। শৌখিনতার জন্য সিরামিকস পণ্যের ব্যবহার দেশের উচ্চবিত্তের খাবার টেবিলে টেবিল ওয়্যার হিসেবে শুরু হলেও এখন অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারেও সিরামিক পণ্য ব্যবহার হচ্ছে।

দিন দিন সিরামিকস জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে এখন তিন ধরনের সিরামিক পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। টেবিলওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার ও টাইলস। সিরামিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার (বেসিন, কমোড), ফুলের টব, মটকা, কিচেনওয়্যার, টেবিলওয়্যার, ডিনার সেট, টি সেট, কফি মগ, বাটি থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিসপত্র। বাংলাদেশে সিরামিকস পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বলছে, ১৯৬০ -এর দশকে পোর্সেলিন আর সিরামিকের বাসনপত্র উৎপাদনকারী তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে এ দেশে ব্যবসা শুরু হয়। আর এখন বৃহৎ শিল্পগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে সিরামিক খাত। সংগঠনটির তথ্য মতে, বর্তমানে ৭০টি ব্র্যান্ড ছাড়াও ছোট-মাঝারি শতাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সিরামিকস খাতে। সরাসরি ৬০ হাজারের বেশি কর্মীর পাশাপাশি সহযোগী শিল্প মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে সিরামিকস শিল্পে। বছরে ৩০ কোটি ৮ লাখ পিস টেবিলওয়্যার, ২১ কোটি স্কয়ার ফিট টাইলস এবং ১ কোটি ৯০ লাখ পিস স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন করছে স্থানীয় কোম্পানিগুলো।

স্থানীয় বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে টাইলস পণ্য। বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার টাইলস পণ্যের চাহিদা রয়েছে। স্যানিটারিওয়্যার পণ্যের চাহিদা রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার। টেবিলওয়্যার পণ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার। সিরামিকস খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই বিনিয়োগের ৬২ শতাংশ টাইলস পণ্য উৎপাদনে, ২৩ শতাংশ টেবিলওয়্যার পণ্য ও ১৫ শতাংশ স্যানিটারিওয়্যার পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ করা হয়েছে। টেবিলওয়্যার পণ্যের ৯৮ শতাংশই রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। স্যানিটারিওয়্যার ও টাইলস পণ্য রপ্তানি হয় ১ শতাংশ হারে। বাজারে দেশি টাইলস পণ্যের দখলে রয়েছে ৭৭ শতাংশ, স্যানিয়ারিওয়্যার পণ্যের ১৩ শতাংশ ও টেবিলওয়্যারের দলে রয়েছে ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) বলছে, গত ১০ বছরে উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে ২০০ ভাগ। রপ্তানি হচ্ছে ৫০টির বেশি দেশে। জিডিপিতে সিরামিক খাতের অবদান শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ। আশির দশকে ৯০ শতাংশ সিরামিক পণ্যই আমদানি করা হতো। এখন চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশেরই জোগান দিচ্ছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও আসছে এ খাত থেকে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৫০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও টেবিলওয়্যারই এখন পর্যন্ত মূল রপ্তানিকৃত সিরামিকস পণ্য।

 

সর্বশেষ খবর